লাইফ বোট থেকে মাছ ধরার বোট

সীতাকুণ্ডে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড ঘিরে জমজমাট বাজার একেকটির দাম ২-৬০ হাজার টাকা

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৪ জুলাই, ২০২৩ at ৯:১৭ পূর্বাহ্ণ

সীতাকুণ্ডের ‘বোট বাজার’ এর বোট দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের চাহিদা মেটাচ্ছে। ভাঙা বা কাটার জন্য আনা জাহাজ থেকে সংগৃহীত এই বোট নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বাজার। দেশের ২০টি উপকূলীয় জেলার জেলেরা এসব বোট কিনে তাতে ইঞ্জিন লাগিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করছে। কাঠ ও লোহার নৌকার তুলনায় খরচ কম এবং নিরাপদ হওয়ায় এই বোটের ব্যবহার বাড়ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় যোগান পর্যাপ্ত থাকায় দামও কম। তবে এ বোটের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে মূল্য বাড়বেও বলে ব্যবসায়ীদের আশা।

দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প থেকে বেরিয়ে আসা লাইফ বোট নিয়ে গড়ে উঠেছে এক বিশাল বোট বাজার। সীতাকুণ্ড উপজেলার মাদাম বিবিরহাট, মদনহাট ও ভাটিয়ারী স্টেশন সংলগ্ন খালে ও ঢাকাচট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে গড়ে উঠেছে এই বোট তৈরির কারখানা।

জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের ফৌজদারহাট থেকে ছোট কুমিরা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শতাধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড। এই শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডকে কেন্দ্র করে এখানে গড়ে উঠেছে ২০টিরও অধিক ছোটবড় শিল্প কারখানা। যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ভাঙার বা কাটার জন্য বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসা এসব জাহাজে থাকে প্রকারভেদে ইঞ্জিন চালিত বা ইঞ্জিনবিহীন ৪১০টি বোট। এসব বোট নিয়ে ব্যবসা সাজিয়েছেন কিছু ব্যবসায়ী। যা পুরাতন জাহাজের মালিকের কাছ থেকে কিনে নিয়ে এক স্থানে জড়ো করে খুচরা বা পাইকারি দরে বিক্রি করে চলেছেন। ৮০ ভাগ ফাইবার ও অন্যান্য উপাদানে তৈরিকৃত এসব ছোট, বড় ও মধ্যম সাইজের বোট ২৫৬০ হাজার টাকায় কিনতে পাওয়া যায় যা গত দুই বছর আগে দাম ছিল দ্বিগুণ।

বোট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানের ক্রেতা সাধারণের প্রয়োজন অনুযায়ী মাছ ধরার কাজে হাওর, নদী, সাগর, বড়দীঘি এবং বিনোদনে লেক বা কৃত্রিম লেকে ব্যবহার হয়ে থাকে। চট্টগ্রাম জেলার উপকূলীয় এলাকা ছাড়াও প্রধানত নোয়াখালী, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, খুলনা অঞ্চলের জেলে এবং দেশের ২০টি উপকূলীয় জেলার জেলেরা এই বোটগুলো কিনে থাকে। পরে তাতে মান অনুযায়ী ইঞ্জিন বসিয়ে দূর সাগর কিংবা নদীতে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার হয়। মাছ ধরার কাজ ছাড়াও নদী পার হতে কিংবা বিভিন্ন লেকে পর্যটকদের বিনোদনে এই বোট ব্যবহার করা হয়।

সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন থেকে বোট কিনতে আসা স্বপন জলদাশ জানান, গত পাঁচ বছর আগে মাঝারি সাইজের একটি বোট ৯০ হাজার টাকা দিয়ে নিয়ে ৪০ হাজার টাকার ইঞ্জিন লাগিয়ে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করে লাভবান হয়েছি। বর্তমানে এর দাম অনেক কমে এসেছে, কাঠের নৌকার তুলনায় এর মান ও গুণ অনেক ভালো। খরচও হাতের নাগালে। সামনের ইলিশের ভরা মৌসুমে একটা কেনার জন্য এসেছি।

বোট বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান ভাটিয়ারী মাদামবিবির হাটের এল ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধিকারী মো. লিটন জানান, চাহিদার তুলনায় যোগান প্রচুর হওয়ার কারণে বোটের বাজার মূল্য অনেক কম। যোগান কম থাকতে আমরা লাভবান হয়েছিলাম। দাম কম হওয়ার কারণে এখন ক্রেতারা লাভবান হচ্ছেন। এসব জিনিস ধরে রাখাও যায় না ব্যাংক ঋণ করে ব্যবসা চালাচ্ছি বলে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধফটিকছড়িতে ক্লিনিকসহ চার চিকিৎসাকেন্দ্র সিলগালা
পরবর্তী নিবন্ধরাঙামাটির চার উপজেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ