লবণ নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল মহাসড়ক, ঘটছে দুর্ঘটনা

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৩ মার্চ, ২০২১ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। ফলে বিপদজ্জনক এ মহাসড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। নিয়ম থাকলেও লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহার করা হচ্ছে না।
জানা যায়, এ মৌসুমে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, মহেশখালী, উখিয়া, কুতুবদিয়া, চকরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লবণ উৎপাদিত হয়। নৌপথ ও স্থলপথে এসব লবণ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রেরণ করা হয়। চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট ও পটিয়া ইন্দ্রপুল এলাকায় লবণ পরিশোধনাগার রয়েছে। এসব স্থান ছাড়াও ঢাকা, নোয়াখালী, ঝালকাঠি, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে লবণ পরিশোধনাগার রয়েছে। নৌপথে পরিবহণ খরচ বেশি হওয়ায় মূলত সড়কপথে ট্রাকে করেই এসবস্থানে লবণ পরিবহন করা হয়। নিয়মানুযায়ী লবণবাহী ট্রাকে জিইওট্যাক্স ব্যবহার না করায় পুরো রাস্তায় ঝরে ঝরে পানি পড়ে। এছাড়া মহাসড়ক হয়ে বিভিন্ন স্থানে পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি পড়ে। রাতে কুয়াশার স্পর্শে লবণ নিঃসৃত পানি ও কাঁচা মাটি রাস্তায় আঠালো আস্তরণ সৃষ্টি করে। ফলে চলমান গাড়ি ব্রেক কষলেই আঠালো আস্তরণের স্পর্শে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ঘটে দুর্ঘটনা। প্রতিদিন মহাসড়কের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে প্রাণহানি। আবার অনেকে আহত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করছে। গত আড়াই মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া সীমানায় ছোট-বড় প্রায় ৩০টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মৃত্যুবরণ করেছে ৩ জন। আহত হয়েছে অনেকে। এছাড়া ২০২০ সালে মহাসড়কের লোহাগাড়া সীমানায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৬ জন। তারমধ্যে ২২ মার্চ চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় যাত্রীবাহী পিকআপ ও লবণবাহী ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হয়েছে।
স্থানীয় জানে আলম জানান, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দিন দিন গাড়ি চলাচল বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু বড় হয়নি সড়ক। এদিকে গাড়ি চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা তো রয়েছে। কে কার আগে যাবে। ফলে পিচ্ছিল সড়কে ওভারটেক করতে গিয়ে দুই গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হচ্ছে। নতুবা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যাচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে চালকদের পাশাপাশি সড়কে যানবাহন চলাচলের উপযোগী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
মোটরসাইকেল আরোহী ফয়েজ আহমদ জানান, প্রতিদিন লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত মহাসড়ক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। আবার দিনে সূর্যের আলোতে পিচ্ছিল রাস্তা শুকিয়ে গেলেও অনেক জায়গায় গাছপালার কারণে আলো না পড়ায় পিচ্ছিলই থেকে যায়। তাই মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালানোর সময় সমান্য ব্রেক কষলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আবার অনেক সময় রাস্তা এতো পিচ্ছিল থাকে ব্রেক না কষলেও দুর্ঘটনা ঘটে।
আঠালো মহাসড়কে গাড়ি চালাতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে একাধিক চালক জানিয়েছেন। নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া শাখার আহ্বায়ক মোহাজিদ হোসাইন সাগর জানান, লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানি ও পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি রাস্তায় পড়ে একটি আস্তরণ সৃষ্টি হচ্ছে। ওই আস্তরণে কুয়াশার স্পর্শে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এদিকে, এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকবাহী গাড়ি কক্সবাজার যায়। আগে থেকে এই সড়ক সম্পর্কে চালকদের ধারণা না থাকায় প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটে। তাই লবণবাহী ট্রাক থেকে যাতে পানি নিঃসৃত না হয় ও পরিবহনের সময় কাঁচা মাটি রাস্তায় না পড়ে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ জরুরি। এছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত না হওয়া ও অসংখ্য বাঁকও সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবদুর রব জানান, লবণবাহী ট্রাকে উপরে-নিচে মোটা ত্রিপল ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যাতে লবণ নিঃসৃত পানি মহাসড়কে না পড়ে। কেউ নির্দেশ অমান্য করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তর জেলা যুবদলের ১১টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা
পরবর্তী নিবন্ধঅ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বন্ধ রাখার কোনো কারণ নেই : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা