লবণাক্ততায় উদ্বিগ্ন চট্টগ্রাম ওয়াসা

প্রতি লিটার পানিতে লবণের সহনীয় মাত্রা ২৫০ মিলিগ্রাম, বর্তমানে যা ২১শ মিলিগ্রাম

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ১৫ মার্চ, ২০২৫ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

হালদা ও কর্ণফুলী নদীর পানিতে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে লবণাক্ততার পরিমাণ। চট্টগ্রাম ওয়াসা মহানগরীর জন্য হালদা ও কর্ণফুলী থেকে তাদের ৪টি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতিদিন ৪৬ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। বর্তমানে হালদা ও কর্ণফুলীর পানিতে প্রতি লিটারে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম থেকে ২ হাজার ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত লবণাক্ততা দেখা যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা জানান, মানব শরীরের জন্য প্রতি লিটার পানিতে লবণাক্ততার সহনীয় মাত্রা হল ২৫০ মিলিগ্রাম। অথচ বতর্মানে জোয়ারের সময় কর্ণফুলী ও হালাদার প্রতি লিটার পানিতে রেকর্ড পরিমাণ ২১শ’ থেকে ২৩শ’ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া যাচ্ছে। যা মানব শরীরের সহনীয় পর্যায়ের চেয়ে সাড়ে ৮ গুণ বেশি। ওয়াসার তথ্য মতে, গতকাল চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রতি লিটার পানিতে ২ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বরের শেষ দিক থেকে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানিতে লবণের মাত্রা পরিলক্ষিত হয়। গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় ইউনিট বন্ধ করে রাখার ফলে কাপ্তাই লেক থেকে হালদায় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় জোয়ারের সময় কর্ণফুলীর লবণাক্ত পানি হালদায় প্রবেশের মাত্রা বেড়ে যায়। এখন মার্চ মাসে এসে লবণাক্ততা আরও অতিমাত্রায় পৌঁছেছে। এই কারণে জোয়ারের সময় ওয়াসার প্লান্টগুলো বন্ধ রাখতে হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিনের উৎপাদন কমেছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত হালদায় লবণাক্ততার পরিমাণ কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন ওয়াসার প্রকৌশলীরা।

সংকট মোকাবিলায় পানি সরবরাহ স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প সমাধানের বিষয়টি জোরালোভাবে বিবেচনা করছে ওয়াসা। তবে বৃষ্টিপাত না হলে বা কাপ্তাই হ্রদ থেকে মিঠা পানির প্রবাহ না বাড়লে সংকট আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন আজাদীকে বলেন, জোয়ারের সময় কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততা দেখা দিয়েছে। আজকে (গতকাল শুক্রবার) প্রতি লিটার পানিতে সর্বোচ্চ ২ হাজার ১০০ মিলিগ্রাম লবণ পাওয়া গেছে। জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে যায়। জোয়ারের সময় লবণাক্ততা বেড়ে গেলে ওই সময় আর পানি উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। যার কারণে উৎপাদন কমে গেছে। এদিকে রমজানে সবাইকে পানি দিতে হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি যে পরিমাণ পানি উৎপাদন হচ্ছে তা সবার মাঝে সরবরাহের জন্য। তারপরও কিছু কিছু এলাকায় পানির কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত হালদা এবং কর্ণফুলীতে লবণাক্ততা কমার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।

কাপ্তাই থেকে পানি প্রবাহ কমে গেছে : কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে চারটি বন্ধ রয়েছে। মাত্র একটি ইউনিট চালু রয়েছে। চারটি ইউনিট বন্ধ থাকায় কাপ্তাই লেক থেকে পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এর ফলে বঙ্গোপসাগর থেকে লবণাক্ত সমুদ্রের পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে ভেতরে ঢুকে হালদা নদীতে প্রবেশ করেছে।

এতে ওয়াসার সার্বিক পানি উৎপাদন সক্ষমতা কমে গেছে। মদুনাঘাট প্রকল্পে আগে দৈনিক ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হতো, এখন উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি লিটার।

রাঙ্গুনিয়াস্থ কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ১ ও ২ থেকে প্রতিদিন ২৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হলেও এখন লবণাক্ততা ও শেওলার কারণে উৎপাদন কমে গেছে। এখন এই দুটি প্রকল্প থেকে দৈনিক ২৫ কোটি লিটার উৎপাদন হচ্ছে। এদিকে মোহরা প্রকল্পে আগে দৈনিক ৯ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হলেও এখন লবণাক্ততার কারণে ৬ থেকে সাড়ে কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে।

জোয়ারের সময় লবণাক্ততার পরিমান আশংকাজনক ভাবে বেড়ে যাওয়ায় ওয়াসার চারটি প্রধান প্রকল্প মদুনাঘাট পানি সরবরাহ প্রকল্প, কর্ণফুলী পানি সরবরাহ প্রকল্প ১ ও ২ এবং মোহরা পানি সরবরাহ প্রকল্পে দৈনিক কয়েক ঘণ্টা পানি উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ কোটি লিটার পানি উৎপাদন কমেছে। ফলে নগরীর কাট্টলী ও পতেঙ্গাসহ বেশ কিছু এলাকার গ্রাহকরা পানির সংকটে পড়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বেচ্ছাসেবকে পাল্টাল পাঁচলাইশের দশ মোড়ের চিত্র
পরবর্তী নিবন্ধবাস কাউন্টারে ভিড়, রেল স্টেশন জনশূন্য