লন্ডন গেলেন খালেদা জিয়া

বিদায় জানাতে সড়কে নেতাকর্মীর ঢল আজ সকালে লন্ডন পৌঁছাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি বিমানবন্দরে থাকবেন তারেক

| বুধবার , ৮ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৭:৪৮ পূর্বাহ্ণ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে নিয়ে ঢাকা ছেড়েছে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স। কাতারের দোহায় বিরতির পর স্থানীয় সময় আজ সকালে এটির লন্ডনে পৌঁছানোর সূচি রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় শাহজালাল বিমানবন্দরের ভিআইপি টারমাক থেকে উড়োজাহাজটি রানওয়ের দিকে এগোতে থাকে। এর কয়েক মিনিটের মধ্যে উড়াল দেয় এটি।

খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, ম্যাডামকে নিয়ে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স যাত্রা শুরু করেছে। আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে ম্যাডামের জন্য দোয়া চাই।

এর আগে রাত পৌনে ১১টার দিকে ৮ নম্বর গেট দিয়ে শাহজালাল বিমানবন্দরে প্রবেশ করে খালেদা জিয়ার গাড়ি। কিছু আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি ১১টা ১০ মিনিটে কাতারের আমিরের পাঠনো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে উঠেন। পথে পথে হাজারো নেতাকর্মীর বিদায়ী শুভেচ্ছার মধ্যে তার গাড়িবহর বিমানবন্দরের দিকে এগিয়ে যায়। গুলশানে তার বাসা ফিরোজা থেকে বিমানবন্দরের পথটুকু যেতে সময় লাগে প্রায় দেড় ঘণ্টা। খবর বিডিনিউজের।

রাত ৮টা ১৬ মিনিটে গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে রওনা হওয়ার পর গুলশান অ্যাভিনিউ, গুলশান, বনানী কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ, কাকলী দিয়ে বিমানবন্দর সড়কে উঠতেই পেরিয়ে যায় এক ঘণ্টার মতো। এসব সড়কে হাজার হাজার নেতাকর্মী তাকে শুভেচ্ছা জানাতে দুই পাশে জড়ো হন। সড়কজুড়ে যানজট তৈরি হওয়ায় তার গাড়িবহর চলে ধীর গতিতে। যে কারণে নির্ধারিত সময় রাত ১০টায় তার ফ্লাইট রওনা হতে পারেনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জেনে রাজকীয় বহরের এ বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলেন কাতারের আমির, যা সোমবার রাত সাড়ে ৭টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। দলের চেয়ারপারসনকে বিদায় জানাতে বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ছিলেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়ি ৮ নম্বর গেট দিয়ে সরাসরি ভিআইপি টারমাকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের সামনে পৌঁছে। সেখানে মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা অ্যাম্বুলেন্সের সামনে দাঁড়িয়ে দলীয় প্রধানকে বিদায় জানান।

আজ লন্ডন পৌঁছাবে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি : খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক জাহিদ হোসেন বলেন, ঢাকা থেকে প্রথমে দোহায় যাবে অ্যাম্বুলেন্সটি। সেখানে যাত্রাবিরতি শেষে লন্ডনের হিথ্রো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে তিনি বলেন, এ ক্লিনিকেই ম্যাডামকে ভর্তি করা হবে। হিথ্রো বিমানবন্দরে হাসপাতালের চিকিৎসকরাও উপস্থিত থাকবেন তাকে রিসিভ করতে।

বিমানবন্দরে থাকবেন তারেক রহমান : জাহিদ বলেন, সাত বছর পর মাকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে মূল টার্মিনালে তারেক রহমান সাহেব, তার সহধর্মিনী জোবাইদা রহমান, তার মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, লন্ডন বিএনপির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন থাকবেন। তারাই ম্যাডামকে বরণ করবেন। হিথ্রোর আনুষ্ঠানিকতা শেষে ম্যাডাম লন্ডন ক্লিনিকের উদ্দেশে রওনা হবেন। এ রকম সিডিউল আামার কাছে আছে।

সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৫ জুলাই বিএনপি চেয়ারপারসন লন্ডন গেলে তারেক রহমানের বাসায় ছিলেন। ৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তাঁর অসুস্থতা বাড়ে।

এমন পরিস্থিতিতে দল ও পরিবার এবং মেডিকেল বোর্ডের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে তার বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। কিন্তু সরকার তাতে সাড়া দেয়নি। উল্টো বিএনপি চেয়ারপারসনের রোগ ও চিকিৎসা নিয়ে সরকারের শীর্ষ পদ থেকে বিভিন্ন সময় নানা আপত্তিকর মন্তব্য করা হয়েছে। ফলে অসুস্থ নেত্রীর বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে টানা আন্দোলন করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।

বিদায় জানাতে সড়কে নেতাকর্মীদের ঢল, যানজট : চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিদায় জানাতে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় জড়ো হয়েছেন বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী। গতকাল সন্ধ্যার কিছু আগে থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস ও পিকআপসহ নানা যানবাহনের করে নেতাকর্মীরা বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে অবস্থান নেন। নেতাকর্মীদের ভিড়ে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে ব্যাপক যানজট লেগে যায়।

রাত সোয়া ৮টায় তার গাড়িবহর গুলশানের বাস ফিরোজা থেকে বিমানবন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে। যাত্রাপথে তাকে বিদায় জানাতেই মূলত সড়কের দুই পাশ ও বিমানবন্দরে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা ‘খালেদা জিয়া, জিয়া খালেদা’, ‘তারেক রহমান, রহমান তারেক’, ‘তারেক রহমান বীরের বেশে, আসবে ফিরে বাংলাদেশে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।

খালেদা জিয়ার আগমন ঘিরে বিমানবন্দর এলাকাজুড়ে সেনাবাহিনী, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন, আনসার, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সতর্ক উপস্থিতি দেখা গেছে। বিমানবন্দরের সবগুলো প্রবেশমুখে যাত্রী এবং তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের সুস্থতা কামনা করে তাকে একনজর দেখতে কুমিল্লা শহর থেকে এসেছেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রিয় নেত্রীকে কয়েক বছর ধরে দেখি না। আজ স্বচক্ষে দেখার জন্যই এখানে এলাম। আল্লাহর কাছে দোয়া করি, তিনি যেন পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে আসেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাচ্ছেন তার মেডিকেল বোর্ডের ছয় সদস্য হলেন অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, অধ্যাপক এফ এম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এছাড়া বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে যাবেন তার ছোট ছেলের স্ত্রী সৈয়দা শামিলা রহমান সিঁথি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তাকর্মচারী।

গতি নেই সড়কে : বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কে নেতাকর্মীদের এতটাই ভিড় ছিল যে, গাড়ি থেকে নেমে সবাইকে সরে যেতে অনুরোধ করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গুলশান থেকে বিমানবন্দরের প্রায় নয় কিলোমিটার পথের পুরোটাই গাড়ি চলেছে হাঁটা গতিতে। সঙ্গে সঙ্গে হেঁটে গেছেন অনেক নেতাকর্মী আর নিরাপত্তা সদস্যরা। যে কারণে দুই ঘণ্টায়ও নয় কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে পারেনি খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। দলের নেত্রীকে বিদায় জানাতে রাস্তার পাশে নেতাকর্মীদের অবস্থানের কারণে গতকাল বিকাল থেকেই বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল ব্যহত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধস্বজনের কাছে ফিরলেন ৯০ জেলে ও নাবিক
পরবর্তী নিবন্ধচকরিয়ায় কিশোরী ধর্ষণের ঘটনায় আটক ৭