সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচে রেকর্ড রানের ব্যবধানে হেরেছিল আফগানিস্তান। সে হারের প্রতিশোধ নিতে যেন একটি সুযোগ খুঁজছিল আফগানরা। আর সে সুযোগটা দারুণভাবে কাজে লাগাল হাশমতউল্লাহ শহিদির দল। ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশকে ১৪২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে শুধু সিরিজই জিতে নেয়নি, টেস্টে বড় ব্যবধানে হারের প্রতিশোধও নিল। এটি আফগানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় পরাজয়।
প্রথম ম্যাচে আগে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থ হওয়া বাংলাদেশ গতকাল প্রথমে বল করতে নেমেও ব্যর্থ। দুই আফগান ওপেনারের তাণ্ডবে যেন বল ফেলার জায়গাটাও খুঁজে পাচ্ছিলেন না সাকিব, মোস্তাফিজ, এবাদতরা। বোলারদের চরম দুর্দশার দিনে রানের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। আর সে চাপ থেকে আর নিজেদের বের করে আনতে পারেনি টাইগাররা। বোলারদের ব্যর্থতার মিছিলে যোগ দিলেন ব্যাটাররাও। ম্যাচের আগেরদিন নতুন অধিনায়ক লিটন দাশ বলেছিলেন, তামিম না থাকলেও দলের প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। অধিনায়কের কথাই সত্যি হলো। দলের প্রক্রিয়া, মানসিকতা, পারফরম্যান্স কোনো কিছুতেই পরিবর্তন আসেনি। আগের ম্যাচে যা ছিল তাই। ফলটাও একই। সেই প্রত্যাশিত হার। ফলে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিতে নিল আফগানিস্তান। যা বাংলাদেশের মাটিতে তাদের প্রথম সিরিজ জয়।
টসে হেরে বাট করতে নামা আফগানিস্তানের দুই ওপেনার শুরু থেকেই চড়াও হয় বাংলাদেশ দলের বোলারদের উপর। ইব্রাহিম জাদরান এবং রহমানুল্লাহ গুরবাজকে যেন থামানোই যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের বোলাররা শত চেষ্টা করেও এই জুটি ভাঙতে পারছিলেন না। ২৫৬ রানে গিয়ে ভাঙল জুটি। সাকিব আল হাসানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন গুরবাজ। খেলেছেন ১৪৫ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। যা তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি। এই ইনিংসটি তার ক্যারিয়ারেরও সেরা। এর আগের সেরাটা ছিল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৭ রান। ১২৫ বলে ১৩টি চার এবং ৮টি ছক্কার সাহায্যে এই স্কোর গড়েন গুরবাজ। আর সে সাথে আফগানিস্তানের পক্ষে যেকোন উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ পার্টনারশিপের রেকর্ড গড়েন। আগের রেকর্ডটি ছিল দ্বিতীয় উইকেটে মোহাম্মদ শাহজাদ এবং করিম সাদিকের ২১৮ রান। যা ২০১০ সালে স্কটলান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন এ দুজন। গতকাল সেটাকে ২৫৬ তে নিয়ে গেলেন গুরবাজ এবং জাদরান।
২৫৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর অবশ্য বানের জলের মত উইকেট হারাতে থাকে আফগানিস্তান। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩৩১ রান করে আফগানিস্তান ৯ উইকেটে। দুই ওপেনার ছাড়া দুই অংকের ঘরে যেতে পেরেছেন কেবল দুজন। বাংলাদেশের পক্ষে মোস্তাফিজ, হাসান মাহমুদ, সাকিব আল হাসান এবং মেহেদী হাসান মিরাজ নিয়েছেন দুটি করে উইকেট।
৩৩২ রানের টার্গেটের পেছনে ছুটতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট। অধিনায়ক লিটন দাশ দায়িত্ব শেষ করলেন তিনটি চার মেরে। ফিরেন ১৫ বলে ১৩ রান করে। নাজমুল হোসেন শান্ত ৫ বলে ১ রান করে ফিরেন মুজিব উর রহমানের বলে। তামিমের জায়গায় সুযোগ পাওয়া নাঈম শেখ ফিরেছেন ফারুকীর দ্বিতীয় শিকার হয়ে। ৯ রান করতে ২১ বল খেলেন এই ওপেনার। ২৫ রানে তিন উইকেট হারানোর পর সাকিব এবং তাওহিদ হৃদয় মিলে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাদের প্রতিরোধ দীর্ঘ হতে দেননি রশিদ খান। প্রথম ম্যাচে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিয়ান হৃদয়কে বোল্ড করে ফেরান রশিদ খান। হৃদয় ফেরার পরের ওভারেই ফিরেন সাকিব। আর তাতেই বাংলাদেশের লজ্জার হার নিশ্চিত হয়ে যায়। প্রথম ম্যাচে ৪ রান করা আফিফ গতকাল রানের খাতা খুলতে পারেননি। ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ধুকতে থাকা বাংলাদেশকে লজ্জার হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেন মুশফিক এবং মিরাজ। ৭২ রানের জুটি গড়ে লজ্জার কিছুটা হলেও নিবারন করেছিলেন এ দুজন। কিন্তু আর এগুতে পারলেন না। ২৫ রান করা মিরাজকে ফিরিয়ে এ প্রতিরোধ ভাঙেন মুজিব উর রহমান। তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে লড়ে যাচ্ছিলেন মুশফিক। তুলে নেন নিজের ৪৫ তম হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু তিনি পারলেননা বেশিদুর এগুতে। দলকে ১৮৯ রানে পৌঁছে দিয়ে নবম উইকেট হিসেবে ফিরেন মুশফিক। ইনজুুরিতে থাকায় এবাদত হোসেন নামতে পারেনি মাঠে। ফলে বিশাল জয়ে সিরিজ জিতে নেয় আফগানরা। মুশফিক ফিরেন ৮৫ বলে ৬৯ রান করে। আফগানিস্তানের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন ফজল হক ফারুকি এবং মুজিব উর রহমান। ২টি উইকেট নিয়েছেন রশিদ খান।