এবারের বিশ্বকাপে একেবারে অপ্রতিরোধ্য একটি দল ভারত। কোন দলই তাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান যেখানে পারেনি সেখানে শ্রীলংকা পারবে তেমনটি আশা করাটাইতো ভুল। আর সে ভুলটাতে একেবারে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দিল ভারত। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম থেকে ছক্কা মারলে তা মনে হয় আরব সাগরে গিয়ে পড়বে। তবে ভারতের কোন ব্যাটার ছক্কা মেরে বল আরব সাগরে ফেলতে না পারলেও শ্রীলংকাকে যেন আরব সাগরে ফেলে দিয়েছে। শ্রীলংকাকে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে টানা সপ্তম জয় তুলে নিয়ে সবার আগে সেমিফাইনালে উঠে গেল রোহিত শর্মার দল।
যা এবারের বিশ্বকাপে সবচাইতে বড় জয়। আর শ্রীলংকা করেছে মাত্র ৫৫ রান। যা এবারের বিশ্বকাপে সর্বনিন্ম দলীয় স্কোর। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে ৫০ রানে অল আউট হওয়া শ্রীলংকা যেন খানিকটা উন্নতি করেছে। এবার অল আউট হয়েছে ৫৫ রানে। শুভমান গিল, বিরাট কোহলি আর শ্রেয়াস আইয়ারের ব্যাটে যে রানের পাহাড় গড়েছিল ভারত সে পাহাড়কে আরো কঠিন করে তুলেছিল মোহাম্মদ সামি, মোহাম্মদ সিরাজ এবং জা্সপ্রিত বুমরাহ। সিরাজ এবং সামি মিলে নিয়েছেন ৮ উইকেট। আর তাতেই শেষ শ্রীলংকা। এবারের বিশ্বকাপে চলছে ব্যাটারদের রাজ। কিন্তু শ্রীলংকার গতকালের ব্যাটিং যেন প্রস্তর যুগের ক্রিকেটকেই মনে করিয়ে দিল।
ব্যাটিংটা যেন লঙ্কানদের জন্য দুনিয়ার সবচাইতে বড় কঠিন এক কাজে পরিণত হয়েছিল। বোলাররা অকাতরে রান দেওয়ার পর ব্যাটাররা রানের পেছনে ছুটতেই পারেনি। বলা যায় ব্যাটিংটা যেন তারা ভুলেই গিয়েছিল। আর তেমন যদি হয় একটি দলের ব্যাটিং আর বোলিং এর অবস্থা তখন সে দলের পরিণতিও হয় তেমনই। যেখানে পরাজয়টা ৩০২ রানের।
টসে জিতে কোন যুক্তিতে ভারতকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন শ্রীলংকার অধিনায়ক সেটা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। যদিও তার সিদ্ধান্ত শুরুতে সঠিক মনে হচ্ছিল। কারণ দলের খাতায় ৪ রান যোগ হতেই রোহিত শর্মাকে বোল্ড করে লঙ্কান শিবিরকে উচ্ছ্বাসে ভাসিয়েছিলে দিলশান মাদুশঙ্কা। কিন্তু সেই উচ্ছ্বাস মিলিয়ে গেছে এরপর। শুভমান গিল আর বিরাট কোহলি দ্বিতীয় উইকেটে ১৭৯ বলে গড়েন ১৮৯ রানের বড় জুটি। যে জুটিতে ভর করেই বড় সংগ্রহ গড়েছে ভারত। যেভাবে খেলছিলেন দুজন সেঞ্চুরিটা প্রাপ্যই ছিল। কিন্তু মাত্র ৮ রানের জন্য গিল পারলেন না সেঞ্চুরিটা তুলে নিতে। আর কোহলিও হাঁটলেন সেই পথেই। পরপর দুই ওভারেই গিল এবং কোহলি দুজনকেই ফেরালেন মাদুশঙ্কা। ৯২ বলে ১১ চার আর ২ ছক্কায় ৯২ রান করে মাদুশঙ্কার কাটারে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন গিল। নিজের পরের ওভারে এসে মাদুশঙ্কা তুলে নেন সেঞ্চুরির দোরগোড়ায় থাকা আরেক বিরাট কোহলিকেও। কোহলি ক্যাচ তুলে দিলেন শর্ট কভারে। ৯৪ বলে ১১ বাউন্ডারিতে ৮৮ রানেই থামে কোহলির ইনিংস।
এরপর লোকেশ রাহুল আর সূরিয়া কুমার যাদব মিলে ৬০ রান যো্গ করেন। ১৯ বলে ২১ রান করা রাহুলকে ফিরিয়ে এজুটি ভাঙ্গেন সামিরা। এরপর বলতে গেলে লংকান বোলারদের উপর তাণ্ডব চালান শ্রেয়াস আইয়ার। যদিও তাকেও ফিরতে হয়েছে সেঞ্চুরির করতে না পারার আক্ষেপ নিয়ে। ৫৬ বলে ৩টি চার আর ৬টি ছক্কায় ৮২ রানের মারকুটে ইনিংস খেলে সেই মাদুশঙ্কার শিকার হন শ্রেয়াস। শেষদিকে রবীন্দ্র জাদেজা ২৩ বলে করেন হার না মানা ৩৪ রান। আর তাতেই ভারতের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৩৫৭ রানে। শ্রীলঙ্কার পক্ষে পেসার দিলশান মাদুশঙ্কা নিয়েছেন ৫ উইকেট। তবে সে জন্য তাকে খরচ করতে হয়েছে ৮০ রান। ৩৫৮ রানের পাহাড়সম টার্গেট। আর সে টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই ছন্নছাড়া শ্রীলংকা। ভারতের তিন পেসার জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সামি আর মোহাম্মদ সিরাজের আগুনের গোলার মুখে পড়ে যেন পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছিল। ইনিংসের প্রথম বলেই নিশাংকাকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান বুমরাহ।
পরের ওভারের প্রথম বলে করুনারত্নেকে এলবিডব্লিউ করে ফেরান সিরাজ। দু’জনেই রানের খাতা খুলতে পারেনি। একই ওভারে সাদিরা সামারাবিক্রমাকেও ফেরান সিরাজ। এই পেসারের তিন নাম্বার শিকার হয়ে কুমল মেন্ডিস যখন ফিরেন তখন ভারতের সংগ্রহ ৩ রানে ৪ উইকেট। এরপর শুরু মোহাম্মদ সামির তাণ্ডব। এই পেসার একে একে তুলে নিলেন আশালাংকা, ম্যাথিউস, দুশান হেমান্ত এবং দুশামান্ত সামিরাকে। আর তাতে ক্রিকেট ইতিহাসে সবচাইতে বড় লজ্জার সামনে পড়েছিল লংকানরা। ২৯ রানে ৮ উইকেট হারানোর পর বিশ্বকাপে সর্বনিন্ম দলীয় স্কোর কানাডার করা ৩৬ রান টপকাতে পারবে কিনা সে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত সে লজ্জা এড়াতে পেরেছে লংকানরা। তবে বেশি দূর যেতে পারেনি।
দিলশান মাদুশংকাকে আউট করে যখন শ্রীলংকার ইনিংস শেষ করে দেন রবীন্দ্র জাদেজা তখন লংকানদের খাতায় যোগ হয়েছে মাত্র ৫৫ রান। আর তাতেই এবারের বিশ্বকাপে সবচাইতে বড় পরাজয়, সবচাইতে কম রানে অল আউটসহ অনেক লজ্জায় ডুবল শ্রীলংকা। ভারতের পক্ষে মোহাম্মদ সামি নিয়েছেন ১৮ রানে ৫ উইকেট। ৩টি উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজ।