সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নিয়ে কয়েকদিন ধরে আবহাওয়াবিদরা যে সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন তাই যেন সত্যি হতে চলেছে। কারণ দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগর এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে গত রাতে দক্ষিণ–পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যা আরো ঘনীভূত পারে। পরে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে রূপ নিতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে। তখন এর নাম হবে ‘মোখা’।
আবহাওয়া অফিস জানায়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কঙবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে। এতে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সাথে তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়।
আবহাওয়া অফিস জানায়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিম্নচাপটি গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ–পশ্চিমে, কঙবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৪৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ দক্ষিণ–পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৫৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল। এটি আরো ঘনীভূত হয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তর উত্তর–পশ্চিম দিকে এবং পরবর্তীতে দিক পরিবর্তন করে ক্রমান্বয়ে উত্তর উত্তর–পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে পারে বলে জানায় আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭ মে রাতে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি ‘লঘুচাপ’ সৃষ্টি হয়েছে, যা ৮ মে রাতে সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়। সর্বশেষ গতকাল এটা নিম্নচাপে পরিণত হয়।
কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানান, আন্দামান ও নিকোবার দ্বীপের দক্ষিণ–পশ্চিম দিকে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপ রাত ৮টার দিকে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার থেকে ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে তাকে নিম্নচাপ নামকরণ করা হয়। এর পরের স্টেপ হলো গভীর নিম্নচাপ। বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৫২ কিলোমিটার থেকে ৬১ কিলোমিটারের মধ্যে থাকলে তাকে গভীর নিম্নচাপ নামকরণ করা হয়। এরপরের ধাপ হলো ঘূর্ণিঝড়। আগামীকাল দুপুরের (আজ) পূর্বেই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা সৃষ্টি হলে তা অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় হিসাবে ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে চট্টগ্রাম, কঙবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উপর দিয়ে স্থলভাগে আঘাত করার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, শুক্রবার এটি সর্বোচ্চ শক্তিতে থাকবে এবং আমেরিকান মডেল অনুযায়ী ১৩ মে দিন শেষে বা ১৪ মে ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার আঞ্চলিক পার্টনার অফিস ঘোষণা দিয়েছে, আজকের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় মোখা সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এটা প্রবল শক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উপকূলে আঘাতের সম্ভাবনা প্রবল।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আজ বুধবারের মধ্যে সৃষ্টি হতে পারে ঘূর্ণিঝড় মোখা। তা আগামী শুক্রবার দিক পরিবর্তন করতে পারে। তখন বাঁক নিয়ে উত্তর উত্তর–পূর্ব দিক বরাবর বাংলাদেশ উপকূলের দিকে এগোবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় শক্তি ধরে রাখার জন্য তিনটি প্রধান শর্ত প্রয়োজন, যার সবগুলোই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোখায় রয়েছে। যেমন সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ২৭ ডিগ্রির উপরে এবং সমুদ্রে সঞ্চিত শক্তি যথেষ্ট পরিমাণে আছে। তাই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি আকারে বড় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে যে কয়েকটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়েছে তার মধ্যে এবারের সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়টি সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার পানির মধ্যে। বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার যে মানচিত্র দেখা যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে, যত উত্তর দিকে ঘূর্ণিঝড়টি অগ্রসর হবে তত বেশি এটি উত্তপ্ত পানির সংস্পর্শে আসবে। বর্তমানে যে স্থানে এটি অবস্থান করছে সেখানকার পানির তাপমাত্রা এখন ৩১ থেকে ৩২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।