লক্ষ্য ২ হাজার কোটি টাকার শুটকি উৎপাদন

টেকনাফ প্রতিনিধি | শনিবার , ২৪ ডিসেম্বর, ২০২২ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

টেকনাফ-কক্সবাজারের সাগর তীরে শুটকি পল্লীগুলোতে কর্মতৎপরতা বেড়েছে। শীত মৌসুমের শুরু থেকে উপকূলে চলছে শুটকি তৈরির ধুম। সাগর থেকে ট্রলারে আনা প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরিতে ব্যস্ত শ্রমিকরা। আর এ কাজে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজারো নারী-পুরুষের।
জেলার টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, নাজিরারটেক, মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, কুতুবদিয়াসহ জেলার বিভিন্ন শুটকি মহালে শীতের শুরুতে শুটকির উৎপাদন শুরু হয়েছে। উপকূলীয় বেড়িবাঁধের উপর বা সৈকতে বাঁশের মাচায় সূর্যের তাপে শুটকি করা হয়। মেকানিক্যাল ফিশ ড্রায়ার ও প্রচলিত দেশীয় পদ্ধতিতে শুকানো এই শুটকি মানসম্মত হওয়ায় চাহিদা রয়েছে ব্যাপক।

বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। আর মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানালেন, সরকারি সহযোগিতা না থাকার কারণে তারা বিদেশে পর্যাপ্ত শুটকি রফতানি করতে পারছেন না। যদি সহায়তা মেলে তাহলে বিদেশে শতভাগ মানসম্মত শুটকি আরও বেশি পরিমাণে রফতানি করা সম্ভব হবে। সেন্টমার্টিনের শুটকি ব্যবসায়ী নূর মোহাম্মদ জানান, গত বৃহস্পতিবার ৪০০ মণ নাইল্লা মাছ ধরা পড়ে তাদের জালে। এসব মাছ কাঁচা প্রতি মণ ৪ হাজার টাকায় বিক্রি না করে একদিনেই শুটকিয়ে ফেলা হয়। এখন এই নাইল্লা শুটকি মণপ্রতি ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। কাঁচা মাছের দাম কম হলেও শুটকি করে ভালো দাম পাওয়া যায়। ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস জানান, শীত ও পর্যটন মৌসুম শুরুর আগে থেকে শুটকি মহালে শুটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে বছরের অধিকাংশ সময় বিরূপ আবহাওয়া থাকায় ও করোনাকালীন উৎপাদন বন্ধ ছিলো। এখন আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে শুটকি উৎপাদন। এ বছরও রূপচাদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা, পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, নাইল্যা মাছসহ ২০-২৫ প্রজাতির মাছের শুটকি তৈরি হচ্ছে। বর্ষাকাল ছাড়া বছরের ৯ মাস এখানে শুটকি উৎপাদন চলে। তবে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলে উৎপাদনে একটু ভাটা পড়ে। দেশের সবচেয়ে বড় শুটকি মহাল কক্সবাজারের নাজিরারটেক। নাজিরারটেক শুটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ জানান, প্রায় ১০০ একর এলাকাজুড়ে গড়ে উঠা এ শুটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ৎ। এখানে ব্যবসায়ীও আছেন প্রায় দুই হাজার। এ কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ৫০ হাজার শ্রমিক। এ মহাল থেকে সবমিলে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুটকি উৎপাদন করা হয়। প্রতি মৌসুমে উৎপাদন হয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন শুটকি। যার বাজারমূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা।
জেলার ৬টি স্থান মিলে প্রতি মৌসুমে শুটকি উৎপাদন হয় আড়াই লাখ মেট্রিক টন যার বাজার মূল্য দেড় হাজার কোটি টাকা। জেলার শুটকি মহালগুলো থেকে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীরা নিয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রতিবছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হলেও শুটকি মহালে সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে। বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শুটকির উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
সমিতির নেতা মো. সোহেল বলেন, এ বছর আমরা আড়াই লাখ মেট্রিক টন শুটকি উৎপাদন করতে সক্ষম হবো। যার বাজার মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা।
এদিকে কোথাও কোথাও কীটনাশক ব্যবহারের কথা জানান টেকনাফ উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা শুটকি উৎপাদনে দিন দিন কমে আসছে। নিরাপদ শুটকি উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করতে কয়েকটি এনজিও সংস্থার সহযোগিতায় আমরা ইতোমধ্যে শুটকি ব্যবসায়ী এবং উৎপাদনকারীদের নিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভা করে তাদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করছি।
এছাড়া, অপরিকল্পিতভাবে শুটকি উৎপাদন করায় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। যারা এই উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত সেই শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে অনেকেই বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাজেকে জিপ-বাইক মুখোমুখি সংঘর্ষ পর্যটক নিহত
পরবর্তী নিবন্ধগাইনি ওয়ার্ড থেকে আরো এক দালাল আটক