লক্ষ্য যখন পরিবেশবান্ধব সুন্দর নগরী গড়ে তোলা

| মঙ্গলবার , ১৩ ডিসেম্বর, ২০২২ at ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৫৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামসহ দেশের ১০টি কর্পোরেশনের জন্য বরাদ্দ আছে ৮২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। দৈনিক আজাদীতে গত ১২ ডিসেম্বর প্রকাশিত খবরে জানা যায়, করোনা মহামারিতে ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং আয়বর্ধক প্রকল্প বাস্তবায়নে ২৬৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পাচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ে ৮৮ প্রকল্পের প্রস্তাবনা তৈরি করেছে চসিক।

চসিকের প্রস্তাবনা অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ৩৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনঃসংস্কার করা হবে। এছাড়া ২২টি সড়কের ফুটপাতের উন্নয়ন, ১২টি কিচেন, টুলস ও ফিশ মার্কেট নির্মাণ করা হবে। একইসঙ্গে দুটি মার্কেটেরও সমপ্রসারণ করা হবে। প্রকল্পটির আওতায় বাটালি হিলে ওয়াচ টাওয়ার, সতীশ বাবু লেইন, সিডিএ লেইন, জেল রোড, সিনেমা প্যালেসের সামনে সৌন্দর্যবর্ধন করা হবে। এছাড়া কয়েকটি সড়কে ওয়াকওয়ে, বাইসাইকেল লেন, ডিজিটাল ইনকিউবেশন সেন্টার, কার পার্কিং ও সবুজ এরিয়া কিডস জোন তৈরি করা হবে।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী আজাদীকে বলেন, বরাদ্দ পেতে আমি নিজে যোগাযোগ করেছি। তিনি বলেন, টাকা পাওয়ার কিছু প্রক্রিয়া আছে। সেগুলো শেষ হলে বরাদ্দ পাব। বরাদ্দের টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হবে তা প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে একটি মিটিং করেছি। সেখান থেকেও কিছু প্রস্তাবনা আসবে। সেগুলো ফাইনাল করা হবে। প্রকল্পটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে একটি সুন্দর ও পরিবেশবান্ধব নগরী গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

সিটি কর্পোরেশনের কাজ কী। এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, সিটি কর্পোরেশন পরিচালিত হয় সিটি কর্পোরেশন ম্যানুয়েল দ্বারা। তাদের কাজ তিনটি। নালা নর্দমা সংস্কার, পরিচ্ছন্নতা, এবং শহর আলোকিত করা। আইন অনুযায়ী এই তিনটি সেবা নগরবাসীকে দিতে বাধ্য। যেমন বিদ্যুতের কথা বলা যায়। এটার দায়িত্ব বিদ্যুৎ বিভাগের। পানি সরবরাহের দায়িত্ব ওয়াসার। নগর পরিকল্পনা, নতুন ভবন বা স্থাপনার নকশা অনুমোদন-এসবের দায়িত্ব চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। টেলিফোন সেবার দায়িত্ব টিএন্ডটির। আরও বিভিন্ন সেবা দেয় আলাদা আলাদা প্রতিষ্ঠান। তাহলে সিটি কর্পোরেশনের যে কাজ, তা কি ঠিক মতো পালন করা হচ্ছে?

নগর উন্নয়নে সেবাসংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকা জরুরি-এ বিষয়ে অনেক দিন আলোচনা চলছে সুধীমহলে। এখানে নগরীর নানা উন্নয়ন কাজে সম্পৃক্ত রয়েছে সরকারের ডজনখানেক সেবা সংস্থা। অভিযোগ আছে, সেবা সংস্থাগুলো যে যার মত দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। তাদের মধ্যে কাজের কোনো সমন্বয় নেই। এই সমন্বয়হীনতার কারণে সামগ্রিক উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরবাসী। এতে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সময়ে অসময়ে বার বার সমন্বয়ের কথা ওঠে। নানা সভা-সমাবেশে সমন্বয় সভার নামে কথার ফুলঝুড়িও হয়। আবার সভা শেষে সকলেই ভুলে যান। হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সমন্বয় সভার সমস্ত পরিকল্পনা।

বিশেষজ্ঞরা চট্টগ্রামের উন্নয়নে বেশ কয়েকটি সমস্যা চিহ্নিত করেছেন অনেক আগে। সমস্যাগুলো হচ্ছে- মেয়রদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের টানাপোড়েন, সিদ্ধান্ত গ্রহণক্ষমতা ঢাকায় কেন্দ্রীকরণ, মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় বছর অবিশ্বাস্য রকমের কম অর্থ বরাদ্দ, নগরীর মাস্টারপ্ল্যানকে অবহেলা করে প্রায় সব প্রকল্প গ্রহণ, নগরীর গভর্ন্যান্স ও উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২৮টি সংস্থা ও এজেন্সির মধ্যে সমন্বয়ের সার্বক্ষণিক সংকট, ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানের নামে অপরিকল্পিত প্রকল্পে বিপুল অর্থ অপচয়, স্টর্ম-স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার অভাব, খাল-নালা দখল, কর্ণফুলী নদীদূষণ, যত্রতত্র অপরিকল্পিত ফ্লাইওভার ও ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, যত্রতত্র শপিং সেন্টার নির্মাণ, নগরীতে পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র ও খেলার মাঠের স্বল্পতা এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও সিডিএ’র পাল্টাপাল্টি কর্মকাণ্ড। বিশেষজ্ঞদের এসব মতামত সরকারকে বিবেচনায় আনতে হবে। সেবা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কতটুকু কাজ সেটা চিহ্নিত করেই সমন্বয় করতে হবে।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন প্রত্যাশা অনুযায়ী বরাদ্দ পায় না। অনেক দৌড়ঝাঁপ অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প থেকে ২৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। এই টাকার সুষ্ঠু সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজের উন্নয়ন হবে সেটা আমরা প্রত্যাশা করতে পারি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে