রাঙ্গুনিয়ায় এবার বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন কৃষি কর্মকর্তারা। ভাল ফলনের পাশাপাশি বাজারেও ভাল দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন ও পৌরসভার চাষিরা বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ করেছেন। চলছে ধান মাড়াইয়ের শেষ মুহূর্তের কাজ। এবার মণ প্রতি ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকায় ধান বিক্রির তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার উপজেলায় ৫ হাজার ৯৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। অন্যদিকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ধান। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হয়েছে ৪১ হাজার ৩৮৫ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৫.৭৮ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ায় ৫৮৮০ হেক্টর জমিতে ৪৯ হাজার ৯৩১ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হয়। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কারিমা আক্তার বলেন, এবার আবাহাওয়া ছিল অনুকূলে, ফসলের খেতে রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ছিল। এছাড়া এবার ফসলের খেতে সময়মতো পানি ও সার দিতে পেরেছেন বলে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় বিল রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিল। প্রবাদ আছে, ‘গুমাই বিলে এক মৌসুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে সারা দেশের আড়াই দিনের খাদ্য চাহিদা মেটানো যায়।’ চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে রাঙ্গুনিয়ার নিশ্চিন্তাপুর পাহাড়ের পাদদেশে চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গুমাই বিলের অবস্থান। এই বিলে প্রতি বোরো মৌসুমে দেড় হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। এবছর প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
শুক্রবার সরেজমিনে এই বিলে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে। সড়কের পাশ ঘেঁষে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা। এসময় কথা হয় বেশ কয়েকজন কৃষকের সাথে। কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, চিকন ধান কেজি প্রতি ২৫/২৬ টাকা আর মোটা ধান ২২/২৩ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। সরকারি গুদামেও ২৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মোহাম্মদ মোকাররম বলেন, মাঠ থেকে ওঠানোর পর কাঁচা ধান এখন ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। শুকানোর পর মণপ্রতি ধানের দাম পড়তে পারে ১ হাজার ৩০০ টাকা পর্যন্ত। নূর উদ্দিন বলেন, আমাদের এখানে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। ফলন ভালোই হয়েছে। শুরুতে ধান ৯৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝে ৮৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। এখন ৭৮০ টাকা মণে কাঁচা ধান বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এ বছর ধানের দাম ভালো পাওয়া গেছে।
গুমাই বিলের অপর কৃষক নূর উদ্দিন জানান, ৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৪ হেক্টরে বোরো এবং ১ হেক্টরে বেগুনি রঙের ধান চাষ করেছি। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী হাইব্রিড বীজ রোপণ করে জমিতে সার দিয়েছি। এতে ফলন ভাল হয়েছে।
গুমাইবিলে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকার পাশাপাশি চাষিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে।