লকডাউন ও আরোপিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে

| সোমবার , ২৮ জুন, ২০২১ at ৭:০৪ পূর্বাহ্ণ

করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে আজ সোমবার থেকে সীমিত এবং বৃহস্পতিবার থেকে সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শনিবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অনলাইন সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। তথ্য অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় যে, সোমবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত সীমিত পরিসরে লকডাউন কার্যকর করবে সরকার। আর বৃহস্পতিবার থেকে ৭ দিনের জন্য পুরোপুরি লকডাউন থাকবে দেশ। এর আগে শুক্রবার বলা হয়েছিলো, করোনার সংক্রমণ রোধে সোমবার থেকে পরবর্তী ৭ দিন সারা দেশে কঠোর লকডাউন জারি থাকবে। এ সময় জরুরি কারণ ছাড়া কেউ বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন না। এ সময় সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী ছাড়া সব ধরনের গাড়ি চলাচলও বন্ধ থাকবে। শুধু অ্যাম্বুলেন্স ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে যানবাহন চলাচল করতে পারবে বলেও সরকারের ওই তথ্য বিবরণীতে বলা হয়।
দেশে করোনা ভাইসারের সংক্রমণের হার আবারও ঊর্ধ্বগতি। সেই সঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুসংখ্যাও। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ‘মহামারির দ্বিতীয় আঘাতটি এসেছে দৃশ্যত দ্বিগুণ তীব্রতা ও শক্তি নিয়ে। এর বিরুদ্ধে সবাইকে সম্মিলিতভাবে দাঁড়াতে হবে; প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্বশীল আচরণ এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর হারও বাড়ছে।’ হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে, আইসিইউ সেবার প্রয়োজন হচ্ছে এমন রোগীর সংখ্যাও ইতিমধ্যে অনেক বেড়েছে এবং আরও বাড়ছে। সুতরাং কোভিড চিকিৎসার ক্ষেত্রেও এখন বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে। বিশেষত অক্সিজেন প্রাপ্তির নিশ্চয়তা ও আইসিইউ সেবা ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে, যাতে কোভিড রোগীদের মৃত্যুর হার যথাসম্ভব কম রাখা যায়। বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি একটি বড় জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে সামনে চলে এসেছে, এটা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলার জন্য সবার সম্মিলিত প্রয়াস একান্ত জরুরি। এই মুহূর্তে সবচেয়ে জোর দিতে হবে টিকা প্রয়োগের বিষয়ে। বিশ্বে করোনা মোকাবিলায় এখন পর্যন্ত টিকা কর্মসূচিকেই সবচেয়ে কার্যকর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তাই দেশের অন্তত ৭০-৭৫ ভাগ নাগরিককে দ্রুত টিকার আওতায় আনতে হবে।
ভারতের সঙ্গে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতেই তুলনামূলকভাবে কোভিডের বিস্তারের মধ্যে করোনা ভাইরাস শনাক্তের হার ফের বাড়তে বাড়তে যে পর্যায়ে পৌঁছেছে, তাতে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অভিমত, আসলে আমাদের এখন সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন হচ্ছে সংক্রমণের হার কমিয়ে আনা। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। লকডাউন ও আরোপিত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন সর্বাত্মক ও বহুমুখী পদক্ষেপ। আর তা তখনই সম্ভব হবে, যখন সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা যাবে। আশা করি, এই অবস্থায় সরকার করোনাভাইরাস থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সম্ভব সব রকম পদক্ষেপ নেবে। ব্যক্তিপর্যায়ে এ সচেতনতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। একই সঙ্গে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে বলে বিশেষজ্ঞরা মত প্রকাশ করেন। সবার টিকা নিশ্চিতের ব্যাপারে সরকারকে আরও সক্রিয় হতে হবে। আশা করি, এই অবস্থায় সরকার করোনাভাইরাস থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সম্ভব সব রকম পদক্ষেপ নেবে।
এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশে একটানা ১৪ দিন ‘সম্পূর্ণ শাটডাউন’ ঘোষণার সুপারিশ করেছিলো কোভিড ১৯ সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটি। জরুরি সেবা ছাড়া যানবাহন, অফিস-আদালতসহ সবকিছু বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় তাদের সুপারিশে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার বেড়ে যাওয়ায় দেশব্যাপী প্রস্তাবিত ‘শাটডাউনের’ প্রয়োগ করা গেলে এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় এনে যথাসম্ভব সর্বোচ্চ সুফল পাওয়ার চেষ্টা করা হলে সুনিশ্চিতভাবে ভালো ফল আসতো বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, ‘সংক্রমণ কমানোর জন্য পরিস্থিতি বিবেচনা করে যেটা প্রয়োজন সেটাই করা হবে।’ সেই আলোকে বলা যায়, সরকার ওই সুপারিশ সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় নিতে পারে। মহামারি পরিস্থিতির ক্রমাবনতিতে জনমনে দিন দিন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। তার নিরসন হওয়া জরুরি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে