লকডাউনে আয়ের সহজ পথ হিসেবে অনেকে বেছে নিয়েছে জুয়া খেলাকে। তাতে উল্টো সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসছে তারা। অন্যদিকে ফুলে ফেঁপে উঠছে সিন্ডিকেটবদ্ধ জুয়াড়িদের পকেট। নগর জুড়ে এখন জুয়া খেলার রমরমা বাণিজ্য চলছে। পুলিশ এক স্থানে হানা দিলে একদিন বন্ধ থাকার পর জুয়াড়িরা অন্য স্থানে গিয়ে নতুন আসর খুলে বসছে। নগরীতে জুয়ার আসরগুলো উচ্ছেদে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের স্পষ্ট নির্দেশ থাকলেও অভিযোগ রয়েছে অনেক স্থানে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে দায় সারছে পুলিশ। এছাড়া অনেক স্থানে অভিযানের কথা আগেই জানিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারপরও নগরজুড়ে চলমান অভিযান কিছুটা স্বস্তির খবর দিচ্ছে।
গত ১০ মে কোতোয়ালী থানার ওসি নেজাম উদ্দিন নগরীর রেয়াজুদ্দিন বাজার এলাকার চৈতন্য গলি মুনিরিয়া টাওয়ারের ৪র্থ তলার ৪০৫নং কক্ষে অভিযান চালিয়ে ১৪ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করেন। তবে জুয়ার আসরের মূল হোতা নগরের শীর্ষ সন্ত্রাসী রবি ঠিকই পালিয়ে যায়। সেই আসরটি স্থান পরিবর্তন করে বর্তমানে বয়লার কলোনিতে চলছে। জুয়ার আসরে ১৪ জুয়াড়ির মধ্যে আবুল হোসেন নামে এক জুয়াড়ি গ্রেপ্তার হয়, যে রবির সহযোগী। নেজাম উদ্দিন বলেন, অভিযানের সময় দেখা যায়, ভবনের প্রবেশ মুখে, পেছনে, ছাদ ও বিভিন্ন অলিগলিতে লোক বসিয়ে পাহারা দেওয়া হচ্ছে। জুয়া খেলতে আসা লোকেরা দল বেঁধে ইয়াবাও সেবন করে।
গত ১১ মে নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানার ঢেবার পাড় ব্রিকফিল্ড রোডে ওসি প্রিটন সরকারের নেতৃত্বে একটি টিম অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম ও নগদ অর্থসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। ৯ মে পাহাড়তলী থানার মধ্যম সরাইপাড়ায় ওসি হাসান ইমামের নেতৃত্বে জুয়ার সরঞ্জাম ও নগদ অর্থসহ ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে একটি টিম।
গত ৭ মে চান্দগাঁও থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। চান্দগাঁওয়ের বসুন্ধরা ক্লাব এলাকায় নুরুর রিকশার গ্যারেজে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। তবে জুয়া খেলার সময় ৬ জুয়াড়ি পালিয়ে যায়। চান্দগাঁও থানার ওসি মুস্তাফিজুর রহমান এ অভিযান চালান।
৪ মে গভীর রাতে পাহাড়তলী থানার আব্দুপাড়া নূর আলি শাহ মাজার সংলগ্ন শফি কলোনি এলাকার একটি ভবনে জুয়ার আসরে হানা দেয় পুলিশ। নীচ তলার একটি কক্ষে তারা যখন জুয়ায় মত্ত তখন সেখানে হাজির হয় পাহাড়তলী থানা পুলিশ। শেষ পর্যন্ত আটক হয়ে তাদের ঠাঁই হয় হাজতে। ২ মে আকবর শাহ থানা এলাকার পাঞ্জাবি লেইন মুক্তকন্ঠ মাঠে বিভিন্ন অনৈতিক কাজের হোতা হাসান প্রকাশ সোর্স হাসানের জুয়া ও মাদক স্পটে অভিযান চালিয়ে ৭ জনকে আটক করে পুলিশ। তবে মূল হোতা সোর্স হাসান পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ২৯ এপ্রিল নগরীর চকবাজার থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি আসর থেকে আট জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলমগীর মাহমুদ আজাদীকে বলেন, একটি সংঘবদ্ধ চক্র বগার বিল, নিরাময় আবাসিকের পেছনে গোপনে জুয়ার আসর বসাত। অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে নগরীর বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জুয়ার বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, জুয়াড়িদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কিন্তু জামিনে তারা দ্রুত বের হয়ে নতুন কোন স্থানে আবারো জুয়ার আসর বসিয়ে তাদের আখের গুছিয়ে নিচ্ছে।