রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পথ খোঁজার প্রতিশ্রুতি ১১ পশ্চিমা দেশের

| মঙ্গলবার , ২৬ আগস্ট, ২০২৫ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে থাকা রোহিঙ্গারা যে নিজেদের মাতৃভূমি মিয়ানমারের রাখাইনে ফিরতে চায়, সে কথা তুলে ধরে তাদের প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করার অঙ্গীকার জানিয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের ১১ দেশ। রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর পূর্তিতে গতকাল সোমবার ঢাকায় দেশগুলোর মিশন এক যৌথ বিবৃতিতে এ সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। খবর বিডিনিউজের।

ফ্রান্স দূতাবাস তাদের এক্স হ্যান্ডেল ও ফেইসবুক পেইজে ওই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। ফ্রান্স ছাড়াও বিবৃতিদাতা দেশগুলোর মধ্যে আছে অস্ট্রেলিয়া, ইতালি, যুক্তরাজ্য, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, ডেনমার্ক, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও ফিনল্যান্ড।

দেশগুলো বলছে, মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে চলমান মানবিক সংকটের সমাধানে আগামী মাসে নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করবে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আট বছর পূর্তিতে (রোহিঙ্গা সংকটের) আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সেই কর্মকাণ্ডকে স্মরণ করি, যার ফলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ব্যাপকভাবে বাস্তুচ্যুত হতে হয়েছিল। এখন পর্যন্ত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন, এবং বাংলাদেশের আশ্রয় শিবিরে নতুন নতুন আগমন অব্যাহত রয়েছে। রোহিঙ্গারা তাদের চলমান দুঃখকষ্ট ও বাস্তুচ্যুতির মধ্যেও যে দৃঢ়তা ও সহনশীলতা দেখিয়েছে, আমরা তা স্বীকার করি, বিশেষ করে যখন রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা ও মানবিক পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে।’

দেশগুলো বলছে, ‘আমরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও জনগণের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই, যারা রোহিঙ্গাদের নতুন যারা আসছে তাদেরসহ আশ্রয় ও নিরাপত্তা দিচ্ছে এবং জীবন রক্ষায় মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।’

বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা নিজেদের মাতৃভূমিতে ফিরতে চায়, সে কথা তুলে ধরে এগারো দেশ বলছে, ‘আন্তর্জাতিক সমপ্রদায় তাদের প্রত্যাবাসনের পথ খুঁজে বের করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে সীমান্ত পেরিয়ে বাস্তুচ্যুতি এখনও অব্যাহত রয়েছে।’

৮ বছরে রোহিঙ্গাদের অবস্থা আরও শোচনীয় : ভিটেছাড়া হওয়ার আট বছরে রোহিঙ্গাদের মানবেতর জীবনযাপনের আরও অবনতি ঘটেছে বলে মনে করেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিভেন ডুজারিক। বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাদের অনিশ্চিত যাত্রার আট বছর পূর্তি উপলক্ষে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন তিনি। বিবৃতিতে ডুচারিক বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য বেসামরিক লোকজন মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ও আরাকান আর্মির ‘ক্রসফায়ারে’ আটকা পড়েছেন। এর ফল হিসেবে জোরপূর্বক ভিটেছাড়া হওয়াসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা। অব্যাহত সহিংসতার কারণে বাধ্য হয়ে আরও অনেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন, যেখানে আগে থেকেই প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছেন। খবর বিডিনিউজের।

মুখপাত্র ডুজারিক বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনসহ সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সব বেসামরিক মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন। ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল শুরু হয়। বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দেওয়ার পর থেকে কঙবাজার ও উখিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে বাঁশ আর প্লাস্টিকের খুপড়ি ঘরে বসবাস শুরু করে রোহিঙ্গারা। উখিয়ার কুতুপালং পরিণত হয় বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবিরে।

জাতিসংঘ সে সময় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর এই হত্যা ও নির্যাতনকে চিহ্নিত করেছিল ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদী উদাহরণ’ হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকারও রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ হিসেবে বর্ণনা করে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাতারবাড়ি বন্দর ও বে টার্মিনালের ট্যারিফ কাঠামো তৈরির উদ্যোগ
পরবর্তী নিবন্ধসিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ মন্ত্রণালয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক