মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে ২০১৭ সালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদেরকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর সেনাবাহিনী তাদের গ্রাম ও মসজিদগুলো ধ্বংস করে সেইসব জমিতে নিরাপত্তা ফাঁড়ি স্থাপন করেছে।
জাতিসংঘ–সমর্থিত একটি তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য। গতকাল সোমবার প্রতিবেদনটি প্রকাশ পেয়েছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নাটকীয়ভাবে বেড়ে গিয়েছিল ২০১৭ সালের অগাস্টে। ওই সময় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী জঙ্গি হামলার জবাবে অভিযান শুরু করে। শতসহস্র রোহিঙ্গাকে তারা রাখাইন থেকে বের করে দিয়েছিল। মিয়ানমারে সামরিক অভিযানের পর বাংলাদেশের জনবহুল শিবিরগুলোতে এখন বাস করছে প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। জাতিসংঘ ওই সামরিক অভিযানকে আখ্যা দিয়েছিল জাতিগত নির্মূল অভিযান হিসাবে। খবর বিডিনিউজের।
জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রতিষ্ঠিত ‘দ্য ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমার’ (আইআইএমএম) এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ধারাবাহিকভাবে রোহিঙ্গা গ্রাম, মসজিদ, সমাধি ও কৃষিজমি ধ্বংস করেছে। অথচ অফিসিয়াল রেকর্ড এর মাধ্যমে তারা রোহিঙ্গাদের জমির অধিকার এবং তা ভোগদখলের মেয়াদকাল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল।
সাক্ষীদের সাক্ষ্য, ভিডিও ফুটেজ, অফিসিয়াল রেকর্ড ও দলিলের ভিত্তিতে আইআইএমএম এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে মিয়ানমারের সামরিক মুখপাত্র মন্তব্যের অনুরোধে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এর আগে বলেছিল, তারা ২০২৭ সালে রোহিঙ্গা গণহত্যা অভিযান চালায়নি। তবে ব্যক্তি পর্যায়ে অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। নিউ ইয়র্কে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হওয়ার একদিন আগে জাতিসংঘ–সমর্থিত এই তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পেল। এতে বলা হয়েছে, প্রাইভেট কোম্পানিগুলো এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনীকে যন্ত্র ও শ্রমিক দিয়ে সহায়তা করেছে। রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় অবকাঠামো গড়ে তুলতেও তারা সহায়তা করেছে।
প্রতিবেদনে উদাহরণস্বরূপ ২০১৮ সালে রয়টার্সের প্রতিবেদনে উঠে আসা এমন একটি গ্রাম ধ্বংসের ঘটনার কথা বলা হয়েছে। সেই গ্রামের নাম ছিল ইন দীন। গ্রামটিতে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয় এবং সেনাবাহিনী সেখানকার বাড়িঘর সব গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন স্থাপনা গাড়ে। স্থাপনাটি সরাসরি ইন দীন গ্রামের ধ্বংসাবশেষের ওপর গড়ে উঠেছিল। সমতল করে ফেলা ভূমিতে বানানো হয়েছিল নতুন রাস্তা, গড়ে তোলা হয়েছিল স্থায়ী ভবন এবং কড়া নিরাপত্তাধীন কম্পাউন্ড ও দুটো হেলিপ্যাড।