কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, মাদক ও অস্ত্র উদ্ধারে প্রথমবারের মত যৌথ টহল চালানানো হয়েছে। তবে প্রথম দিনের টহলে কিছুই মেলেনি বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ছয়জন নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার দুপুর ২টা থেকে তিন ঘণ্টাব্যাপী এ টহলে এপিবিএন, র্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও আনসার ব্যাটালিয়নের সাড়ে চার শতাধিক সদস্য অংশ নেন। উখিয়া উপজেলার বালুখালী ৮–ওয়েস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে এ টহল চালানো হয়। এতে এপিবিএনের ৩০০, পুলিশের ৪০, র্যাবের ৪০, বিজিবির ৪০ এবং আনসার ব্যাটালিয়নের ৫০ সদস্য অংশ নিয়েছেন বলে জানান ১৪–এপিবিএনের সহঅধিনায়ক ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাইফুজ্জামান। খবর বিডিনিউজের।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ১৪–এপিবিএনের অধিনায়ক ও পুলিশের অতিরিক্ত উপ–মহাপরিদর্শক (এডিআইজি) সৈয়দ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বুধবার রাতে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারসহ আইন–শৃঙ্খলা বাহিনীর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। সেখানেই উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিয়মিত যৌথ টহল ও বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়। তারই অংশ হিসেবে শনিবার অভিযান চালানো হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ভারি বর্ষণসহ বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রথম দিনের টহল কার্যক্রম তিন ঘণ্টায় শেষ করা হয়েছে। পরবর্তীতে সুবিধাজনক সময়ে আবারও টহল চালানো হবে। প্রয়োজনে যৌথ বাহিনী বিশেষ অভিযানও চালাবে।
২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবির গড়ে আশ্রয় নেন। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই ঢলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়। এর আগে থেকে দেশে আরও চার লাখের রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে আছে। রোহিঙ্গাদের দাবি, তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে হবে মিয়ানমারকে।
অপরদিকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মাদক পাচার, অপহরণ, মানবপাচারসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে; ফলে শরণার্থী আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতিনিয়তই খুন–সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটছে। এটা স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।
কঙবাজার জেলা পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে চলতি বছরের ২১ অগাস্ট পর্যন্ত ১১ ধরনের অপরাধে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ২০টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি সংখ্যা ৬ হাজার ৮৩৭ জন। যেখানে ১৬৪টি হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৩১টি। যেখানে আসামির সংখ্যা ৯৯১ জন। এ ছাড়া ২৩৮টি অস্ত্র মামলায় আসামির সংখ্যা ৫৫২ জন, ২ হাজার ৫৭টি মাদক মামলায় আসামির সংখ্যা ২৯৭৯ জন, ৯৪টি ধর্ষণ ও ধর্ষণ চেষ্টায় মামলায় আসামির সংখ্যা ১৪৪টি, ৪২টি ফরেনার্স অ্যাক্ট মামলায় আসামির সংখ্যা ১০৪ জন, ৪৪টি অপহরণ মামলায় আসামির সংখ্যা ২২২ জন, ৬৫টি বিশেষ ক্ষমতা আইন মামলায় আসামির সংখ্যা ১৩৩ জন।
তাছাড়া পুলিশের উপর হামলার সাতটি মামলায় আসামির সংখ্যা ৭৭ জন, ৬২টি ডাকাতি ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০৫ জন, ৩৭টি মানবপাচার মামলায় আসামির সংখ্যা ১৮৯ জন এবং ২৪৩টি অন্যান্য মামলায় আসামির সংখ্যা ৯৪১ জন।