ঘরে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। সেই স্বপ্ন তৈরি করে দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শুক্রবার রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া ভাষণ ১০ লক্ষাধিক আশ্রিত রোহিঙ্গা নারী–পুরুষের মধ্যে সাড়া ফেলেছে। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষাভাষী রোহিঙ্গারা সহজেই বুঝতে পেরেছেন প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য। বুঝতে পেরেছেন তিনি কী বলতে চেয়েছেন। জানতে পেরেছেন রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার যে আকুতি, সে ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সরকারের আন্তরিক উপলব্ধি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার উখিয়ায় শরণার্থী শিবিরে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেন। ইফতারের আগে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় টানা ৫ মিনিটের অধিক সময় কথা বলেন। তিনি যখন আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য রাখছিলেন তখন রোহিঙ্গারা আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। খবর বাসসের।
প্রধান উপদেষ্টার এ বক্তব্যকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা এবং কক্সবাজারের সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা মনে করছেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শুধু বাংলাদেশ সরকার প্রধান নন, তিনি বিশ্ব নেতাও। তাই চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা কমিউনিটির সাথে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে যোগাযোগের একটা সংযোগ তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা জাতিসংঘের মহাসচিবকে বলতে পেরেছেন তাদের মনের কথাগুলো। ফলে শুক্রবার দুই নেতার সফরের মধ্যদিয়ে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।
আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ২০১৭ সালে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর দেশি–বিদেশি অনেক বড় বড় নেতা আশ্রয় শিবির সফর করেছেন। কিন্তু ভাষা বুঝতে না পারার কারণে রোহিঙ্গারা এতদিন মনের কথাগুলো সরাসরি কোনো নেতাকে বলতে পারেনি। শুক্রবার অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্যারকে তারা মনের কথাগুলো বলতে পেরেছেন। একই সাথে প্রধান উপদেষ্টা যে বক্তব্য দিয়েছেন তাও রোহিঙ্গা কমিউনিটির লোকজন বুঝতে পেরেছেন। আশা করি এবার রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অনেক দূর এগিয়ে যাবে।
প্রধান উপদেষ্টার আঞ্চলিক ভাষায় দেওয়া বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে আশ্রয় শিবিরের (ক্যাম্প–১) রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা আলী হোসেন বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দীর্ঘ ৮ বছর যে সমস্যার কথাগুলো বলতে পারিনি শুক্রবার তা দুজন বিশ্ব নেতাকে বলার সুযোগ হয়েছে। শুধুমাত্র তা সম্ভব হয়েছে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস স্যারের কারণে।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রোহিঙ্গাদের ভাষার সাথে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষার কিছুটা অমিল থাকলেও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যটি রোহিঙ্গা কমিউনিটির প্রত্যেকটা মানুষ বুঝতে পেরেছেন। এটা ইতিবাচক। কারণ এ বক্তব্যের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গাদের সাথে একটা সংযোগ তৈরি করতে পেরেছেন প্রধান উপদেষ্টা; যা গত ৮ বছরে দেশি–বিদেশি কোনো নেতা করতে পারেননি।
কক্সবাজার হোটেল, গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, কক্সবাজারের পেশাজীবী এবং রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় যেভাবে বক্তব্য দিয়েছেন, শুনে মনে হয়েছে কক্সবাজার কিংবা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের কয়েকটি ধাপ এগিয়ে গেছে। কারণ দেশি–বিদেশি কোনো নেতার সাথে এভাবে আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলার সুযোগ অতীতে হয়নি। এ মধ্যদিয়ে বিশ্ব নেতাদের সাথে রোহিঙ্গাদের সরাসরি সংযোগ তৈরির মধ্যদিয়ে তাদের স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন দ্রুত সম্ভব হবে।