বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি মিলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দাতা সংস্থার আঞ্চলিক সম্মেলনে এ ঘোষণা আসে। এরমধ্যে ২০ কোটি মার্কিন ডলার দেবে যুক্তরাষ্ট্র, ৯ কোটি ৬০ লাখ ইইউ ও ৪ কোটি ৭৫ লাখ ডলার দেবে যুক্তরাজ্য। এছাড়া অন্যান্য দাতা সংস্থা বাকি অর্থ সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মার্কিন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান জানান, রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। নিজ দেশে রোহিঙ্গাদের ফেরাতে আঞ্চলিক সহযোগিতার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লর্ড আহমেদ। গতকাল ভার্চুয়াল কনফারেন্সে এ প্রতিশ্রুতির কথা জানা যায়। নিরপেক্ষ মানবিক সহায়তা নিঃসন্দেহে বাস্তুচ্যুত মানুষের ভরণপোষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে সহায়তা করাই হবে নিপীড়িত এ সম্প্রদায়ের জন্য আসল ও মূল্যবান সেবা। আজকের এ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স থেকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সংকটের একটি টেকসই সমাধানের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি ও কার্যকর বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি। গত তিন বছরে প্রত্যাবাসন প্রগতির অভাব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ব্যাপক হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যাহত হতাশা থেকে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অপরাধমূলক কাজ ও ভবিষ্যতের জন্য সমুদ্র পথে বিপদসঙ্কুল যাত্রা, মানব পাচার, র্যাডিকালাইজেশন এবং অন্যান্য বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডে প্রলুব্ধ করতে পারে। মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকট সৃষ্টিকারী মিয়ানমারকে চাপ সৃষ্টি করে এ সংকট থেকে বাংলাদেশকে মুক্তি দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব রয়েছে। যেহেতু এই সংকটের কারণে বাংলাদেশ অসংগঠিত ও অন্যায়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাই এর জরুরি সমাধান আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যদিও আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মানবিক সহায়তার প্রশংসা করি। আমরা রাখাইনে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে অর্থবহভাবে মিয়ানমারের সাথে জড়িত থাকার আহবান জানান। আজ অবধি, রাখাইন রাজ্যে চলাফেরার স্বাধীনতা বা জীবিকার মত বিকল্প কোন সুরক্ষার পরিবেশ তৈরি হয়নি।
তিনি আরও বলেন,ভূমিধসের কারণে মৃত্যুঝুঁকি এড়াতে এবং শিবিরগুলোকে বর্ধিষ্ণু বসবাস হ্রাসে মূল ভূখণ্ডের নিকটবর্তী ভাসানচর নামে দ্বীপটিতে আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৩৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে যথাযথ অবকাঠামো এবং উন্নত সুবিধাসহ গড়ে উঠেছে। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা স্থানান্তরের জন্য এটি প্রস্তুত করা হয়েছে। এ ছাড়া শিবির ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নত সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার শিবিরগুলোর আশপাশে বেড়া দেয়া শুরু করেছে।
শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে চাইলেও, তারা নিশ্চিত নয় যে- প্রত্যাবর্তনের পরে তাদের উপর অত্যাচার করা হবে না, তাদের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হবে। এটি আসিয়ান এবং অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি জাতিসংঘের আঞ্চলিক এজেন্সিগুলো জড়িত করে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থাসহ সহযোগী আয়োজক দেশগুলোর রোহিঙ্গা শরণার্থী সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক ভার্চুয়াল ‘সাসটেনিং সাপোর্ট ফর দ্যা রোহিঙ্গা রেসপন্স’ শীর্ষক মিটিং শেষে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে উক্ত বক্তব্য তুলে ধরেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী।