কক্সবাজারে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তিন দিনের আন্তর্জাতিক সংলাপের শেষ দিন গতকাল মঙ্গলবার ৪০ দেশের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। সকালে তারা দুই দলে ভাগ হয়ে ক্যাম্পের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। তারা রোহিঙ্গাদের দুঃখ–দুর্দশার কথা শোনেন এবং তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, বিদেশি প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে দেখেছেন।
এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেন।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশ নেওয়া ৪০ দেশের প্রতিনিধিদের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। বিদেশি প্রতিনিধিরা প্রথমে উখিয়ার ক্যাম্প–৪–এ অবস্থিত জাতিসংঘের খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) ই–ভাউচার আউটলেট কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এরপর তারা বালুখালী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে যান। ওখানে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর রোহিঙ্গা নারীদের হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় দেশি–বিদেশি প্রতিনিধিরা তাদের সঙ্গে কথা বলেন। দুপুরের পর ক্যাম্প এলাকা ত্যাগ করেন তারা।
বাসস জানায়, প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, অংশগ্রহণকারীদের সরেজমিনে ঘুরে দেখানো হয়েছে, যাতে তারা রোহিঙ্গাদের বাস্তব পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে উপলব্ধি করতে পারেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেলে এ শিবিরগুলোতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এজন্য আমরা দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর কাছে অর্থায়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি। এই সংকট দীর্ঘায়িত হলে তা শুধু বাংলাদেশের ওপর নয়, আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কক্সবাজারে কর্মরত বিশ্ব খাদ্য সংস্থার প্রোগ্রাম পলিসি অফিসার শেখ রবিউল আলম জানান, বিদ্যমান তহবিল দিয়ে ডিসেম্বর পর্যন্ত খাদ্য সহায়তা চালানো সম্ভব হবে। কিন্তু এখনো নতুন অর্থায়নের কোনো প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি, যা ইতোমধ্যে শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, নতুন অর্থায়ন না এলে খাদ্য সহায়তার মতো গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।
রাজনৈতিক নেতারা বলেন, রোহিঙ্গা সংকট কোনো একক সরকারের সমস্যা নয়, বরং এটি জাতীয় ঐকমত্যের বিষয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১০টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি সংলাপে অংশ নেন। তাদের মতে, সব দলের সক্রিয় সম্পৃক্ততা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অবস্থানকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও শক্তিশালী করবে।
বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং এটিকে বৈশ্বিক মানবিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিহিত করেন। তারা মনে করেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমন্বিত ও কার্যকর উদ্যোগ এখন সময়ের দাবি।
রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খুঁজে বের করতে এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদার করার লক্ষ্যে কক্সবাজারে রোববার থেকে শুরু হওয়া তিন দিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘স্টেকহোল্ডার্স ডায়ালগ : টেকঅ্যাওয়ে টু দ্য হাই–লেভেল কনফারেন্স অন দ্য রোহিঙ্গা সিচুয়েশন’ গতকাল রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। উল্লেখ্য, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা সংলাপ থেকে প্রাপ্ত সুপারিশ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠেয় জাতিসংঘের উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে উপস্থাপন করা হবে। আশা করা হচ্ছে, বৈশ্বিক কূটনীতির এ প্ল্যাটফর্ম থেকে সংকট সমাধানে নতুন দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।