রোজায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার

যানজট ও প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ

| শুক্রবার , ৮ এপ্রিল, ২০২২ at ৪:৪৭ পূর্বাহ্ণ

পবিত্র রমজানে স্কুল ও কলেজের ক্লাস ৬ দিন কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। দৈনিক আজাদীতে ৫ এপ্রিল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, যানজটের কারণে রোজায় স্কুল ও কলেজের ক্লাস ৬ দিন কমিয়ে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত চালু রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়; শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে শনিবারও। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় আগের সিদ্ধান্ত মতই ২০ রোজা (২২ এপ্রিল) পর্যন্ত চালু থাকবে। ২২ এপ্রিল শুক্রবার হওয়ায় আগের দিন বৃহস্পতিবারই ঈদের ছুটির আগে শেষ ক্লাস হবে। গত সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভায় ২৪ রোজা পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্লাস চালু রাখার আগের সিদ্ধান্ত বদলে ২০ এপ্রিল ১৮ রোজা পর্যন্ত খোলা রাখার এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের। রমজানে ছুটি বাড়িয়ে ক্লাস কমানোর বিষয়ে তিনি বলেন, যানজটের বিষয়টি বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ২৬ এপ্রিল ২৪ রোজা পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান চালানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। করোনাভাইরাস মহামারীতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখার ক্ষতি পোষাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিল মন্ত্রণালয়।
স্কুল ও কলেজ রমজানে খোলা রাখার বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দোদুল্যমান সিদ্ধান্তের কারণে অভিভাবক মহলে উষ্মা দেখা দিয়েছে। একবার ২৪ রোজা-২৬ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা রাখার কথা বললেও পরে সেটা ২০ এপ্রিলে এসে ঠেকেছে। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যানজট। বলা বাহুল্য যে, যানজট তো এখন থেকে শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে তীব্র তাপদাহ। এ অবস্থায় স্কুল ও কলেজ আরো কয়েকদিন আগে বন্ধ রাখলে এতো কী ক্ষতি হতো! করোনাভাইরাস মহামারীতে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পড়ালেখার যে ক্ষতি হয়েছে, তা কি এই ১০ দিনে পোষানো সম্ভব? তবে রমজানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালুর বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খোলা রাখার এই বিষয়টি গড়িয়েছে উচ্চ আদালত পর্যন্ত। কিন্তু উচ্চ আদালত বলছে, ‘স্কুল বন্ধ বা খোলার রাখার বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না। এটি সরকারের পলিসিগত বিষয়।’
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ‘স্কুল খোলার রাখার বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় বইছে। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত দিচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের বড় একটি অংশ বলছেন, রমজানে স্কুল-কলেজ খোলা রাখলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের ভোগান্তি বাড়বে। তাঁদের মতে, এক দিকে গরমের তীব্রতা, এর মধ্যে আবার রোজা রেখে ক্লাস নেওয়াটা অমানবিক হবে। এছাড়া অনেক শিক্ষার্থী রোজা রাখে। রোজা রেখে তীব্র গরমে স্কুলে যাওয়া ও ক্লাসে মনযোগী হওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। তাঁরা বলেন, স্কুল বন্ধ রাখা উচিত। যে উদ্দেশ্যে খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা কাজে আসবে না। অন্য এক অভিভাবক বলেছেন, রমজানের রোজায় স্কুল বন্ধ করে অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হোক, বিশ দিনের ক্লাসে উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নতি বা অগ্রগতি হবে না, এই প্রচেষ্টা আমাদের অভিভাবকদের জন্য বিশাল পেরেশানি ও কষ্টদায়ক হবে, রমজান মাসে রাস্তায় যানজট বেড়ে যায়, এখন ভীষণ গরম, তার ওপর রোজা মুখে বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে, সেহরি খাওয়ার পরে স্কুলে যাওয়ার টেনশনে ঘুম বা বিশ্রাম কোনোটাই হবে না, স্কুল শেষে আবার বাচ্চাদের বাসায় নিয়ে আসার টেনশনে আরো অনেক বেশি কষ্ট ও ক্লান্তি বেড়ে যাবে।
তবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় যেহেতু স্কুল-কলেজ চালু রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেহেতু বন্ধটা আরো কয়েকদিন বাড়িয়ে ক্লাস কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। অথবা সপ্তাহে দু-তিন দিন স্কুল চালু রাখা যেতে পারে। প্রতিদিন প্রচণ্ড গরমে নিয়মিত ক্লাস করতে গেলে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়বে। যারা রোজা রাখে, তাদের জন্য তো আরো ভয়াবহ অবস্থা। বন্ধ রাখার বিষয়টি যেহেতু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের, সেহেতু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আলাদাভাবে খোলা রাখা বা বন্ধ রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। না হলে নিজেরাই এ কাজটি করতে পারতেন। আমরা শুধু এটুকু পর্যবেক্ষণ করছি, যানজট ও প্রচণ্ড গরমের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ। তাই রোজায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ছুটি পুনর্বিবেচনা করা দরকার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধপাবলো পিকাসো: বিংশ শতাব্দীর চিত্রসম্রাট