মহান আল্লাহপাকের নৈকট্য ও সন্তুষ্টির আশায় সারা বছর রমজান মাসের প্রতীক্ষায় থাকেন বিশ্বের কোটি মুসলিম। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আল্লাহপাকের যেমন নৈকট্য অর্জিত হয়, তেমনি রোজাদারদের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ঘটে। পুণ্যানুভূতি জাগৃতির মাসব্যাপী সিয়াম উৎসবে শামিল আজ বিশ্বের সকল
মুসলিম। মুসলমানদের জীবনধারায় অনুকূল পরিবর্তন আনে এই রোজার মাস। সারাদিন অসীম কষ্ট সহ্য করে, কঠিন ধৈর্য ও সবরের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে রোজাদার মুসলিমগণ সিয়াম সাধনা তথা উপবাসব্রত পালন করে। প্রতিদিন রাতে দলবেঁধে এশার নামাজ শেষে বিশ রাকায়াত তারাবিহর নামাজ আদায়,
মধ্যরাতে আরামের শয্যা ত্যাগ করে সেহেরির জন্য ওঠা, সেহেরি খেয়ে আবার ফজরের নামাজ পড়া, সারাদিন কঠিন সিয়াম সাধনা শেষে ইফতারিতে শামিল হওয়া–এভাবে পুরো রোজার মাস অতিবাহিত করবেন রোজাদার মুসলমানরা। কোরআন মজিদ তেলাওয়াত, প্রিয় নবীর (দ.) ওপর দরুদ পাঠ, নফল নামাজসহ
নানাবিধ ইবাদত বন্দেগিতে এই মাসে মশগুল রয়েছেন রোজাদাররা। কোরআন মজিদে ইরশাদ হচ্ছে ‘ফামান শাহিদা মিনকুমুশ শাহ্রা ফাল্ ইয়াসুমহু’ অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যারা রোজার মাস পাবে, তারা যেন রোজা পালন করে। হাদিসে কুদসিতে রয়েছে, আল্লাহপাক বলছেন– আস্ সাওমি লি ওয়াআনা আজযি
বিহী’– অর্থাৎ রোজা একমাত্র আমার জন্য, আর আমি নিজেই রোজাদারকে রোজার প্রতিদান দেবো। কী সুন্দর তাৎপর্যপূর্ণ পয়গাম। অন্য সকল ইবাদত বন্দেগিতে লৌকিকতা বা আত্মপ্রদর্শনের একটা ব্যাপার থাকে। যা রোজার মধ্যে থাকে না। রোজাদার ছাড়া কেউ জানার উপায় নেই যে, সে রোজা রেখেছে।
রোজা হলো লৌকিকতা বা রিয়ামুক্ত বিশেষ তাৎপর্যমণ্ডিত ইবাদত। তাই, এর ফজিলত, মাহাত্ম্যও অনেক বেশি।
রোজার মাসে দান সদকাহ, জাকাত ফিতরা প্রদানের মাধ্যমে রোজাদাররা গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ায়। একদিকে রোজার মাধ্যমে আল্লাহপাকের হক আদায়, অন্যদিকে মানুষের হকও আদায় করার সুযোগ ঘটে এ মাসে। দান–সদকাহ ও জাকাত ফিতরার মাধ্যমে রোজাদাররা অসীম সওয়াব বা পুণ্যের ভাগিদার হন।
এ মাসে একটি পুণ্য কাজের প্রতিদান সত্তর গুণ পর্যন্ত বেশি মেলে। তাই রোজার এ মহিমান্বিত মাসে বেশি বেশি পুণ্যকর্ম এবং গরিব মানুষের কল্যাণে আত্মনিবেদিত হতে হবে। এই পুণ্যময় মাসে ব্যবসায়ী ভাইগণ ভোগ্য পণ্যের দাম সহনীয় রাখবেন, ভোক্তা সাধারণ ও রোজাদারদের শান্তি–স্বস্তিতে রাখবেন এবং ভালোয় ভালোয় রোজার মাসটি নির্বিঘ্নে কাটানোর সুযোগ সৃষ্টিতে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে অবদান রাখবেন এই প্রত্যাশা।