আজ সোমবার চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে শুরু হবে রমজান। রমজানকে সামনে রেখে চট্টগ্রামে গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেবা খাতগুলোর কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো দাবি করে বলেছে, ইতোমধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে।
নগরীর যানজট পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ প্রশাসন এবং দ্রব্যমূল্য সহনীয় এবং ভেজাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন মাঠে আছে বলে জানিয়েছে। শুধু বাজার মনিটরিং নয়, বাজার নিয়ন্ত্রণেও নেওয়া হবে বিশেষ পদক্ষেপ। সরকারি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও বাজারে নজরদারি করছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
রমজান আসার সাথে সাথে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এবার দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগেভাগে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ছোলা, চিনিসহ রমজানে ব্যবহার্য নিত্যপণ্যের দাম নিয়ে যাতে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসন অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। আজাদীকে তিনি বলেন, আমরা শুধু বাজার মনিটরিং নয়, নিয়ন্ত্রণও করব। আমাদের ৪টি টিম বাজার মনিটরিং করছে। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দিয়ে এসেছি। বাজার পরিস্থিতি নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেললে আমরা কঠোরভাবে তা দমন করব। বাজারে প্রচুর পণ্যের সরবরাহ এবং মজুদ থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, চিনি নিয়ে কিছু কারসাজির চেষ্টা করা হয়েছিল। এস আলমের সুগার মিলে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডে অপরিশোধিত চিনি পুড়েছে। পরিশোধিত চিনির কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রচুর চিনি তাদের ওখানে মজুদ রয়েছে। বাজারেও প্রচুর চিনি রয়েছে। চিনি আমদানিকারক অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের কাছেও বিপুল চিনি রয়েছে। শুধু চিনি নয়, কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। তাই কাউকে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ফায়দা লুটতে দেওয়া হবে না। রমজানে রান্নার গ্যাসের সংকট যাতে না হয় সেটি নিশ্চিত করতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (কেজিডিসিএল) নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশনসহ অন্য খাতগুলোতে প্রয়োজনীয় গ্যাসের যোগান দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন যাতে না কমে সেদিকেও সজাগ থাকার কথা জানিয়েছেন কেজিডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবু সাকলায়েন। তিনি বলেন, গ্যাস সেক্টরে যাতে কোনো সংকট না হয় সেজন্য আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। নিশ্চয় এর সুফল নগরবাসী পাবেন।
চট্টগ্রামে বিদ্যুতের পরিস্থিতি বর্তমানে সন্তোষজনক উল্ল্লেখ করে পিডিবির প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রেজাউল করিম আজাদীকে বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের পরিস্থিতি খুবই ভালো। তবে গরম বাড়ছে। একইসাথে বাড়ছে চাহিদা। চাহিদা বাড়ার ফলে আমরা একটু চাপে পড়ব। তবে রমজানে ইফতার, তারাবি কিংবা সেহেরিতে নগরবাসী যাতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পান সেদিকে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে।
চট্টগ্রামে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে উল্লেখ করে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, পানির কোনো অভাব নেই। আমাদের পানির উৎপাদন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। আমরা করণীয় নির্ধারণ করে রেখেছি। টিট্রমেন্ট প্ল্যান্টগুলোর পাশাপাশি ডিপ টিউবওয়েলগুলো ঠিক করে রাখা হয়েছে। যে কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে পানির চাহিদা মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।
তিনি বলেন, আমরা বৈঠক করে টিম ঠিক করেছি। পানির গাড়িগুলো সচল করছি, যাতে কোথাও সমস্যা হলে সাথে সাথে গাড়িতে পানি পাঠাতে পারি। যেসব এলাকায় পানি নেই সেখানে ভাউজারের মাধ্যমে পানি দেব। রমজানে ইফতার ও সেহেরিতে মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয়, মসজিদে মসজিদে যাতে অজুর পানি থাকে তা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি।
চট্টগ্রাম নগর পুলিশের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রমজানে যাতে রাস্তায় যানজট না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। আইনশৃঙ্কলা রক্ষায় আমাদের স্বাভাবিক যে কার্যক্রম তার সাথে নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, রমজানে বাজারের ব্যাপারে আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম চলছে। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতেও আমরা সজাগ রয়েছি।












