সিয়াম সাধনার মাস রমজানের ক’দিন যেতে না যেতেই নগরীর সড়কগুলোতে যানজট বেড়ে গেছে। এবার প্রথম নয়, প্রতি বছর রমজান মাসে নগরের বাসিন্দারা অসহনীয় যানজটের মখোমুখি হন। আর এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় ট্রাফিক পুলিশকে। আইন বা নিয়ম মানার কিংবা মানানোর গরজ নেই কারও। সকাল থেকে শুরু হওয়া যানজট দুপুর আর ইফতারের সময় গড়িয়ে রাত পর্যন্ত ঠেকছে। তীব্র গরমের মধ্যে গণপরিবহনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নগরীতে জনসংখ্যা ও গাড়ি চলাচল উল্লেখ্যযোগ্য হারে বাড়লেও ১০ বছর আগের জনবল দিয়ে চলছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ।
সিএমপির উপকমিশনার (ট্রাফিক পশ্চিম) তারেক আহম্মেদ আজাদীকে বলেন, আমি জয়েন করার পর যানজটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তা নির্মূলে ব্যবস্থা নিয়েছি। এর ফলে অলঙ্কারের মতো এলাকায় এখন আর যানজট হয় না। দ্বিতীয়ত, রমজান মাসে সার্জেন্ট, টিআইদের পাশাপাশি আমরা সিনিয়র অফিসাররাও মাঠে সক্রিয় থাকি। ইতোমধ্যে আমরা সবার মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দিয়েছি, যাতে ঈদ পর্যন্ত নগরীতে অস্বস্তিকর যানজট এড়ানো সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, রমজান মাসে অফিস শেষে প্রত্যাশা থাকে নিরাপদে বাসায় বা ঘরে ফিরে পরিবার–পরিজনের সঙ্গে ইফতার করা। আবার অনেকের চেষ্টা থাকে ইফতারের পর বাসায় ফিরে স্থানীয় মসজিদে ইবাদত করার। রাস্তায় যাতে যানজট না হয় তার জন্য আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। গতকাল মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটে রাস্তায় আটকে আছে বাস, ট্রাক, টেম্পো, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, সিএনজি টেক্সি ও মোটরসাইকেল। এ সময় যানজট সামলাতে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া অনেক যাত্রী গণপরিবহন চালকের বিরুদ্ধে বেপরোয়া চালানোর অভিযোগও করেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পর্যাপ্ত বাস টার্মিনালের অভাব, অবৈধ পার্কিং, ট্রাফিক আইন না মানা, অবৈধভাবে ফুটপাথ দখল, উল্টো পথে গাড়ি চালানোসহ নানা কারণে দিন দিন এ সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। মূলত রাস্তার তুলনায় যানবাহনের আধিক্য ও চালকদের অসচেতনতাকেই যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
যত্রতত্র ও ব্যস্ত মোড়গুলোতে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী ওঠানামা, সড়কের মাঝখানে আড়াআড়ি করে গাড়ি রাখার প্রবণতা আরও বেড়েছে। বিশেষ করে নগরীতে নির্ধারিত স্থানে যাত্রী ওঠানামার জন্য সিএমপির নির্দেশনা কার্যকর হচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। নতুন কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন আইন–২০১৮ মোতাবেক নির্দেশনা না মেনে যাত্রী ওঠানামা করলে জরিমানার বিধান রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ট্রাফিক বিভাগের অমনোযোগের কারণে নতুন আইনে জরিমানার বিধান থাকার পরও গণপরিবহনগুলোতে যেখানে সেখানে যাত্রী ওঠানামা বন্ধ হচ্ছে না।
নগরীর দুই নম্বর গেট, জিইসি, বহদ্দারহাট, মুরাদপুর, দেওয়ানহাট, আগ্রাবাদ, সল্টগোলা ক্রসিং, ইপিজেড, নিউ মার্কেট, চকবাজার, নতুন ব্রিজ এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে যানজটে শত শত গাড়ি আটকে পড়তে দেখা যায়। এছাড়া আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারেও শত শত গাড়ি যানজটে আটকে থাকতে দেখা গেছে।
আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে জটে আটকে থাকা ব্যক্তি গাড়ির মালিক রাফি ইসলাম বলেন, যানজট এড়ানোর জন্য ফ্লাইওভারে উঠেছি। কিন্তু এখানেও আটকে আছি আধা ঘণ্টা ধরে।
একই ধরনের কথা বলেন ফ্লাইওভারে আটকে পড়া পিকআপ চালক মনির হোসেন। তিনি বলেন, গতকাল ইফতারের সময়ও যানজটের কারণে রাস্তায় ইফতার করতে হয়েছে। আজকে সকাল থেকেও নগরীর প্রায় সব মোড়ে যানজট লেগে আছে।
মামুনুর রশিদ নামে এক অফিসগামী যাত্রী বলেন, বাসা থেকে অফিস ২০ মিনিটের দূরত্ব। কিন্তু এক ঘণ্টা আগে বের হয়েও অফিস যেতে পারছি না। একদিকে তীব্র রোদের গরম, অপরদিকে যানজট। রোজা রেখে এই দুর্ভোগ মেনে চলতে হচ্ছে।
আগ্রাবাদ মোড়ে নিউ মার্কেটগামী যাত্রী কামরুল হাসান বলেন, আগ্রাবাদ এলাকায় গণপরিবহনের সংকট তৈরি হয়। আবার যাত্রী কম থাকলেও বাসগুলো মোড়ে দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়। এতে ‘বাস থামিবে’ লেখা স্থানে দাঁড়ালে বাসে সিট পাওয়া যায় না। কাউন্টার সার্ভিসের বাসগুলো নির্ধারিত স্থান থেকে যাত্রী ওঠানামা করছে। অথচ লোকাল বাসগুলো নির্দেশনা মানছে না।