রমজানে একটা সাধারণ চিত্র চোখে পড়ে, সেটি হলো পণ্যের দাম ক্রমশ বাড়তে থাকে। সরকার অবশ্য সব সময়ই ঘোষণা করে যে, এবারের রমজানে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। রমজানে প্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্য যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি করা হচ্ছে; অর্থাৎ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর ব্যাপক মজুদ আছে। ২১ ফেব্রুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ যাতে রোজায় স্বস্তিতে বাজার করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। আসন্ন রমজান উপলক্ষে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য ও কাপড়ের মূল্যসহ সকল পণ্যের বাজার পরিস্থিতি, সরবরাহ চেইন তদারক ও পর্যালোচনা এবং মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষে ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা প্রশাসক এ কথা বলেন। তিনি বলেন, সয়াবিন তেলের বিষয়ে প্রয়োজনে মিল মালিকদের সঙ্গে বসা হবে। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও বাজার তদারকি থাকবে। এ সময় ব্যবসায়ী ও বাজার সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা জেলা প্রশাসককে আশ্বস্ত করে বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে না। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে সকল দপ্তর থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও তারা জেলা প্রশাসককে অবগত করেন। সভার শুরুতে নগরীর বাজার পরিস্থিতি তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্যের আমদানি, বর্তমান বাজার দর ও বাজার তদারকি কার্যক্রম পরিস্থিতি তুলে ধরেন কর্মকর্তারা।
এদিকে, ‘আমদানি প্রচুর, রমজানে সংকট হবে না ভোগ্যপণ্যের’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে আজাদীতে ২০ ফেব্রুয়ারি। এতে বলা হয়েছে, পবিত্র রমজানের বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে দেশে লাখ লাখ টন ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ টন পণ্য দেশে পৌঁছে গেছে। পাইপ লাইনেও রয়েছে বিপুল পরিমাণ পণ্য। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজেও রয়েছে প্রচুর ভোগ্যপণ্য। লাইটারেজ জাহাজগুলোতে খালাসের অপেক্ষায়ও রয়েছে কয়েক লাখ টন পণ্য। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নে পণ্য আমদানিতে খরচ বাড়লেও দেশে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনো ঘাটতি হবে না বলে সংশ্লিষ্টরা মন্তব্য করেছেন। রজমানে সরবরাহ চেইন ঠিকঠাক রাখার পাশাপাশি দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আজ চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন আমদানিকারক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক আহ্বান করেছে।
রমজান দুয়ারে কড়া নাড়লেও প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই বলে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির কারণে পণ্যের চাহিদা কিছুটা কমে গেছে, তবে বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার কোনো শংকা নেই। চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানিয়েছে, পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে পণ্য আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয় অন্তত তিন মাস আগ থেকে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ডলার সংকট বা মূল্যবৃদ্ধির কারণে শুরুতে আমদানি প্রক্রিয়া কিছুটা ব্যাহত হলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু নির্দেশনার ফলে আমদানি প্রক্রিয়া পূর্ণ গতিতে সম্পন্ন হয়েছে। ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য লাখ লাখ ডলারের এলসি হয়েছে। এসব পণ্যের একটি বড় অংশ ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছে গেছে। বাকিটাও আসছে।
আমরা এসব কথা শুনে আশাবাদী। তবে এখনো উদ্বেগ কমেনি। কেননা রমজানে চলে পণ্যের দাম বৃদ্ধির মহোৎসব। ব্যবসায়ীরা মুখে এককথা, কিন্তু কাজে ভিন্ন। তাঁরা সিন্ডিকেট করে আগে থেকে নির্ধারিত পণ্য মজুদ করে ফেলেন। রোজার সময়ে প্রয়োজনীয় পণ্য বলতে বোঝায় তার সবকটি পণ্য কয়েক মাস ধরে বিপুল পরিমাণে আমদানি করা হয়েছে। কিন্তু এসব আমদানি মানুষের চাহিদা এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের কাছে নস্যি বলে বিবেচিত হবে। সাধারণভাবে সিন্ডিকেট মালিকদের ঘরে হানা দিলেও গণমাধ্যমে প্রচার হবে বটে, কিন্তু পণ্যের দাম কমবে বলে মনে হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্তৃপক্ষের একীভূত প্রচেষ্টা ও উদ্যোগ পণ্যমূল্য বৃদ্ধির এই সর্বনাশা উদ্যোগকে দমন করতে পারে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ যাতে রোজায় স্বস্তিতে বাজার করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা সফল করতে হবে।