চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সংবাদ আমাদের জন্য বড় সুসংবাদ। কেননা, বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে অত্যধিক খরচের কারণে নিম্ন মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র রোগীরা সেখানে চিকিৎসা করাতে পারেন না। তাই তাদের একমাত্র ভরসা চমেক হাসপাতালের আইসিইউ। বর্তমানে হাসপাতালের নিচ তলায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহায়তায় নির্মিত ৩০ শয্যার আইসিইউ ইউনিটে রোগী ভর্তি হচ্ছে। নতুন যুক্ত হওয়া ৩০ শয্যা রোগীদের বড় উপকারে আসবে। ২৮ জানুয়ারি দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চমেক হাসপাতালের ৩০ শয্যার বাইরে নগরীর মা ও শিশু হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ডায়বেটিক জেনারেল হাসপাতাল ও বেশ কিছু বেসরকারি হাসপাতালে শতাধিক আইসিইউ শয্যা রয়েছে। তারমধ্যে একমাত্র চমেক হাসপাতালে মিলছে ১৫ টাকার টিকেটে লাখ টাকার সেবা। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কাছে সরকারি হাসপাতালের একটি আইসিইউ শয্যা যেন ‘সোনার হরিণ’। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে আইসিইউ সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু আইসিইউ শয্যার সংকটের কারণে ওইসব রোগীদের সঠিক সময়ে অস্ত্রোপাচারও করা সম্ভব হতো না। দুর্ঘটনার রোগী ছাড়াও নিউরোসার্জারি, গাইনোকোলোজি, কার্ডিওলজি, কার্ডিয়াক সার্জারি, নেফ্রোলজি, মেডিসিন বিভাগ থেকে প্রচুর পরিমাণ ক্রিটিকাল রোগীকে আইসিইউতে রেফার করেন চিকিৎসকরা। এখন আইসিইউ শয্যা বৃদ্ধি হওয়ায় সংকট কিছুটা হলেও ঘুচবে। চমেক হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নেন, তাদের বেশিরভাগই দরিদ্র ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর। এদের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব হয় না। তাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইসিইউর জন্য হাহাকার করতে করতে রোগী মারা যান।
চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দিন আজাদীকে বলেন, হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পুরনো আইসিইউ ইউনিটে শয্যা বাড়ানোর কাজ শেষ পর্যায়ে আছে। এই ইউনিটে আগে ২০টি শয্যা ছিল। এখন আরো ১০ শয্যা বৃদ্ধি করে ৩০ শয্যায় উন্নীত করা হচ্ছে। ফলে গত বছরের অক্টোবর থেকে পুরনো ইউনিটটি বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে ইউনিটটিতে রোগী ভর্তি শুরু হবে। তখন মোট আইসিইউ শয্যা হবে ৬০টি। এছাড়া ইতোমধ্যে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ১০ শয্যার ডেডিকেটেড আইসিইউ চালু হয়েছে। আশা করছি আইসিইউ সংকট কিছুটা হলেও ঘুচবে এবার।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (চমেক) দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে সেবার মানের দিক থেকে সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে ২০২৩ সালে। স্বাস্থ্যসেবার মান, সেবা গ্রহণকারীদের সন্তুষ্টিসহ নানা দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই শ্রেষ্ঠত্বের কথা ঘোষণা করেছে। এই হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম যা আছে এবং সেসবের ব্যবহার কীভাবে করা হচ্ছে, প্রতিদিন কত রোগী ভর্তি হচ্ছেন, শয্যা কতটা শূন্য, কতটা পূর্ণ হচ্ছে, অতিরিক্ত কত রোগী সেবা পাচ্ছেন, স্বাভাবিক ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম নেওয়ার হার, বড় ও ছোট পরিসরের অস্ত্রোপচারের সংখ্যা, রক্ত পরিসঞ্চালন কতটা নিরাপদ, রোগীদের সন্তুষ্টির হার কেমন–সব মিলিয়ে দেশের ১৭টি সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে র্যাঙ্কিং করে থাকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। কিন্তু সেই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত বরাদ্দ না থাকায় অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সেবা প্রদান করতে পারছে না। অপর্যাপ্ত বরাদ্দের কারণে হাসপাতাল প্রশাসনের পর্যাপ্ত সেবা প্রদানে নাভিশ্বাস হচ্ছে। বিঘ্ন ঘটছে সেবাব্যবস্থাপনায়। অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেবা মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে। মনে রাখতে হবে, চিকিৎসাসেবা পাওয়া জনগণের একটি মৌলিক অধিকার। তাই পথঘাটের ছিন্নমূল মানুষ থেকে শুরু করে শত কোটি টাকার মালিক–সবার জন্যই যথাযথ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে। চমেক হাসপাতাল সীমিত সাধ্যে যা করেছে, তা সারা দেশের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। কিন্তু সীমাবদ্ধতা তাদের সংকুচিত করে রাখবে। রোগী সেবা ও হাসপাতালের মান বাড়াতে জনবল, সরঞ্জাম বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে অন্যান্য সুযোগ–সুবিধা। এবার যে হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা প্রশংসাযোগ্য পদক্ষেপ। মোট কথা, স্বাস্থ্যের মতো একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সরকারের মনোযোগ বাড়াতে হবে। বাড়াতে হবে বরাদ্দ।