রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে মারধর ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এর প্রতিবাদে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হলে কাজে ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক, নার্সসহ সকল কর্মচারীরা। চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাধীন প্রায় ৮শ রোগী বিপাকে পড়েছে। তবে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ থাকলেও সেবা চালু আছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে। তাই অনেকে নিরুপায় হয়ে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। এদিকে এ ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন, নতুন বাহাছড়া এলাকার সেলিম রেজার ছেলে তাহসিন মো. রেজা, তার ভাই তামিম মো. রেজা, টেকপাড়া এলাকার আবু বক্করের ছেলে সাইফ বিন সম্রাট ও কালুর দোকান এলাকার সাইফুল আজিমের ছেলে সাইদুল লতিফ সাকিব।
স্বজনদের অভিযোগ, গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সিসিউতে ভর্তি থাকা শহরের ৬নং এলাকার আজিজ মারা যান। ব্যথানাশক ইনজেকশন পুশ করার পরই তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হয়েছে দাবি করে হাসপাতালের ভেতরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন তার স্বজনেরা। তারা কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. কাজী সজিবকে মারধর করার পাশাপাশি হাসপাতালের কক্ষে তাকে আটকে রাখে। বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা হাসপাতালের চিকিৎসা সরঞ্জাম ভাঙচুর করেন। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ফোন পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
চিকিৎসককে মারধরের কারণে একদল বিক্ষুব্ধ ইন্টার্ন চিকিৎসক হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এই ঘটনার সুরাহা না হলে হাসপাতালের আবাসিক রোগীদের কোনো ধরনের সেবা দেওয়া হবে না বলেও জানান। জরুরি বিভাগে সেবা সচল থাকলেও বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সেটিও বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করছে চিকিৎসক, ওয়ার্ড কর্মীসহ হাসপাতালটির নানা শ্রেণীর স্টাফরা। দুপুর ১২টা থেকে হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এছাড়া মোতায়েন রয়েছে পুলিশও।
আন্দোলনরত মেডিকেল অফিসাররা জানান, হাসপাতালে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। যেভাবে তাদের সহকর্মীর উপর হামলা হয়েছে, তাতে তার মৃত্যু হতে পারতো। তাই যতক্ষণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি করবেন। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার নুরুল হুদা বলেন, যদি নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে কোন স্টাফই কাজে ফিরবে না। কথায় কথায় চিকিৎসকসহ স্টাফদের উপর হামলা হচ্ছে। তাতে সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তারপর সেবা।
এ বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর অবস্থা ক্রিটিক্যাল ছিল। রোগীর এমন পরিস্থিতিতে তাকে কার্যকর সেবা দেয়ার জন্য স্বজনদের দরকার হয়। কিন্তু ওই সময় স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও আমাদের চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, যার কোনো ঘাটতি ছিল না। তারপরও চিকিৎসকের ওপর হামলা করা হয়। তিনি আরও বলেন, হামলাকারীরা গ্রেপ্তার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু তারা সেবা না দিলে সমস্যা তো হবেই। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে জরুরি সেবা তারা শুরু করেছেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা সেবা একটি মানবিক পেশা, মানুষের জীবন মরণের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে, তাই তারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেপ্তার দাবি করেন। যার প্রেক্ষিতে কাজে যোগ দিবেন চিকিৎসকরা। সেই সাথে চিকিৎসকদের জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাওয়া হয় চিকিৎসা সেবা বন্ধ নিয়ে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে ৪ জন অপরাধীকে আটক করা হয়েছে। জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইয়ামিন হোসেন বলেন, চিকিৎসকদের সাথে কথা হয়েছে। তারা জরুরি সেবা কাজে ফিরেছেন। চিকিৎসকে মারধরের ঘটনায় ৪ জনকে আটক করা হয়েছে। চিকিৎসকদের নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।