রেহানা ও ছেলেমেয়ের প্লটে অনিয়ম, দুদকের ৩ মামলায় হাসিনাও আসামি

| মঙ্গলবার , ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ at ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতার অপব্যবহার ও অনিয়মের মাধ্যমে শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে ঢাকার পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দের অভিযোগে তিনটি মামলা করেছে দুদক, যেখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং রেহানার মেয়ে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিককেও আসামি করা হয়েছে। দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) আক্তার হোসেন গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

এর আগে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধেও অনিয়মের মাধ্যমে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে মামলা করে দুদক। দুদক মহাপরিচালক আক্তার বলেন, রাজউকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিজ নামে ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে ১০ কাঠার ছয়টি প্লট বরাদ্দের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদক। পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের কূটনৈতিক জোনের এসব প্লট বরাদ্দে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে তিনটি মামলা করেছে দুদক। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫() ধারায় মামলাগুলো করা হয়েছে বলে জানান তিনি। খবর বিডিনিউজের।

মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বলেন, শেখ রেহানার বিরুদ্ধে মামলায় শেখ হাসিনা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আর রেহানাপুত্র ববির বিরুদ্ধে মামলায় ১৬ জন এবং ববির ছোট বোন রূপন্তীর বিরুদ্ধে ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্বাচল নতুন শহরে প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রভাবিত করেছেন। এ বিষয়ে দুদকের কাছে যথেষ্ঠ প্রমাণাদি রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। এরপর গত ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। ওই প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের কূটনৈতিক জোনের ২০৩ নম্বর সড়কের আশপাশে শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, ছোট বোন শেখ রেহানা এবং রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর নামে প্লটগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনার নামে প্লট বরাদ্দ হয় ২০২২ সালের ৩ অগাস্ট, যার নম্বর ৯। ওই বছরের ২৪ অক্টোবর ১৫ নম্বর প্লট জয়ের নামে এবং ২ নভেম্বর পুতুলের নামে ১৭ নম্বর প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। শেখ রেহানার প্লট নম্বর ১৩, তার ছেলের ববির নামে বরাদ্দ হওয়া প্লটের নম্বর ১১ এবং এবং রূপন্তীর নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৯ নম্বর প্লট। গত বছরের অক্টোবর শেখ হাসিনার পরিবারের ছয় সদস্যের নামে পূর্বাচলে প্লট বরাদ্দে অনিয়ম নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আসা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেয় হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ কমিটিকে আওয়ামী লীগ সরকারের দেড় দশকে প্লট বরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগও তদন্ত করতে বলা হয়।

রেহানার মামলার আসামি ১৫ : শেখ রেহানার বিরুদ্ধে মামলার অন্য আসামিরা হলেনরেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ, ও সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম। দুদক মামলায় বলেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রেহানার নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ দেন। রাজউক, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরের নথি পর্যালোচনা করে দুদক দেখেছে, রেহানা তার আয়কর রিটার্নে ঢাকার সেগুনবাগিচায় একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা উল্লেখ করেছেন। কোনাবাড়ীতে ১৬০ শতাংশ কৃষি জমি থাকার কথাও আয়কর রিটার্নে দেখিয়েছেন তিনি।

আর মা রেহানার কাছ থেকে গুলশানের তিনটি ফ্ল্যাট দানসূত্রে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। তিনি ও তার বোন রূপন্তীর নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ রয়েছে। এছাড়া রেহানার বড় বোন শেখ হাসিনা, ভাগ্নি পুতুল ও ভাগ্নে জয়ের নামেও পূর্বাচলে ১০ কাঠা করে প্লট রয়েছে। অথচ এসব তথ্য গোপন করে রেহানা পূর্বাচলে প্লট নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে এজাহারে। দুদক বলছে, রাজউক এলাকায় রেহানা ও তার পরিবারের ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লঙ্ঘন করেছেন। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ তার মা রেহানা, বোন রূপন্তী ও ভাই বোনের প্লট নিশ্চিতে খালা শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ ও প্রভাব বিস্তার করেন। আর শেখ হাসিনা তার বোনের প্লট নিশ্চিতে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাজউকের চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন। প্লট বরাদ্দে বিধি লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়ার কথা এজাহারে বলেছে দুদক।

ববির মামলায় আসামি ১৬ : রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ছাড়া অন্য আসামিরা হলেনটিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) ফারিয়া সুলতানা, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) শেখ শাহিনুল ইসলাম এবং উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, ববি তার আয়কর রিটার্নে তার চাচা তারিক আহমেদ সিদ্দিকের কাছ থেকে গুলশানের পাঁচটি ফ্ল্যাট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। তার মাবোনের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনা এবং সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরও প্লট রয়েছে পূর্বাচলে। এসব তথ্য গোপন করে ববি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, যা পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতির লঙ্ঘন। এক্ষেত্রে তার বোন টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে চাপ প্রয়োগ করে উল্লেখ করে এজাহারে বলা হয়েছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে ববির নামে প্লট বরাদ্দ করান।

রূপন্তীর মামলার আসামিও ১৬ : ভাই ববির মতন রূপন্তীর মামলাতেও আসামির সংখ্যা ১৬। অন্যরা হলেনটিউলিপ সিদ্দিক, শেখ হাসিনা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, অতিরিক্ত সচিব অলিউল্লাহ, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সদস্য (উন্নয়ন) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, সাবেক পরিচালক নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) কামরুল ইসলাম এবং উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, রূপন্তী তার আয়কর রিটার্নে বড় বোন টিউলিপের কাছ থেকে ঢাকার গুলশানে ফ্ল্যাট পাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তার মাভাইয়ের পূর্বাচলে প্লট রয়েছে। এছাড়া তার খালা শেখ হাসিনা এবং সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীর ছেলেমেয়েরও প্লট রয়েছে পূর্বাচলে। এসব তথ্য গোপন করে রূপন্তী প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, যা পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতির লঙ্ঘন। এক্ষেত্রে তার বোন টিউলিপ খালা শেখ হাসিনাকে চাপ প্রয়োগ করেন বলে এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তার দপ্তরসহ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে রূপন্তীর নামে প্লট বরাদ্দ করান।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনাসহ জড়িতদের কলরেকর্ডের ফরেনসিক পরীক্ষার নির্দেশ
পরবর্তী নিবন্ধচসিকের সাবেক কাউন্সিলর ইলিয়াছ ঢাকায় গ্রেপ্তার