চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ট্রেন যাত্রার সময় আধ ঘণ্টা থেকে পৌনে এক ঘণ্টা পর্যন্ত কমে আসবে বলে জানা গেছে। দৈনিক আজাদীর ১ জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুনে শেষ হচ্ছে আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেলপথ নির্মাণকাজ। আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণের কাজ শেষ হলে তখন ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটার পুরোটাই ডাবল লাইনে উন্নীত হবে। আর তখন চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে ট্রেন যাত্রার সময় কমে আসবে প্রায় আধ ঘণ্টা (৩০ মিনিট) থেকে পৌনে এক ঘণ্টা পর্যন্ত।
সংবাদে বলা হয়েছে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে এ রেললাইনের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) ২৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লাইনে উন্নীত হয়েছে। বাকি ৭২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনে উন্নীত করার জন্য ‘লাকসাম-আখাউড়া ডাবল লাইন প্রকল্পটি’ গ্রহণ করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী জুনের মধ্যে এ অংশটিও ডুয়েলগেজ-ডাবল লাইনে উন্নীত করার লক্ষ্যে দ্রুতগতিতে নির্মাণ কাজ চলছে।
এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ছাড়া একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। কেবল সড়কের উপর নির্ভর করে একটি দেশের পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরই অংশ হিসেবে রেলওয়ের উন্নয়নের কাজ হাতে নিয়েছে সরকার। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে রেলের উন্নয়ন হবে। বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়েতে লোকবল সংকট থাকার পরেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি করা হচ্ছে। রেল ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ রেলওয়েকে সম্পূর্ণ আধুনিক করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। আমরা রেলকে একটি নিয়মতান্ত্রিক অবস্থায় আনতে এবং যাত্রীসেবার মান নিশ্চিত করার মাধ্যমে রেলের নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।
দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো রেলওয়ে। অথচ দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে অবহেলার শিকার হয়ে আসছিল রেলওয়ে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হয়ে রেলের দিকে দৃষ্টি ফেরায়। স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় হয়েছে রেলওয়ে। যা দেশবাসীকে খুবই আশান্বিত করেছে, এ কথা বলতেই হয়। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শ্লথগতি, সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি অনাকাক্ষিত প্রতিবন্ধকতায় পড়ার খবর আমাদের স্বভাবতই হতাশ করে।
জানা গেছে, রেলওয়ের উন্নয়নে ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। চলমান এ মহাপরিকল্পনার আওতায় ৬টি ধাপে ৫ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ৩০ বছর মেয়াদি (২০১৬-২০৪৫) সংশোধিত মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার সঙ্গে কক্সবাজার, মোংলা বন্দর, টুঙ্গীপাড়া, বরিশাল, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য এলাকা রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নের পেছনে বিপুল অঙ্কের অর্থ ব্যয় করা সত্ত্বেও দেশে ট্রেনের গতি যেমন বাড়েনি, তেমনি বাড়েনি যাত্রীসেবার মান। ফলে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনার মান নিয়ে।
কোনো পদক্ষেপের পেছনে যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকে, তাহলে তাতে অর্থেরই কেবল অপচয় হয় না, এর সুফলও পায় না জনগণ। বাংলাদেশ রেলওয়ের হয়েছে সেই দশা। বর্তমানে রেলওয়েতে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৯টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আগে গত এক যুগে ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে ৭৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। কিন্তু এর পরও রেলের গতি তো বাড়েইনি, বরং আগের চেয়ে কমেছে। এর কারণ খতিয়ে দেখা যায়, যেসব খাতে প্রকল্প নেয়া হয়েছে সেগুলো মূলত কম গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- নতুন করে রেলপথ নির্মাণ, এমনকি সদ্য সমাপ্ত রেলপথ ভেঙে নতুনভাবে নির্মাণ, মিটারগেজকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর, ব্রডগেজ লাইন বসানো, ডেমো ট্রেন ক্রয় ইত্যাদি। অথচ রেলের পুরনো জরাজীর্ণ লাইন, ঝুঁকিপূর্ণ ব্রিজের কোনো সংস্কার হচ্ছে না। রেলপথে রয়েছে পাথরের স্বল্পতা। এদিকে যথাযথ দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে না। তবে, আখাউড়া থেকে কুমিল্লার লাকসাম পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ ডাবল রেলপথ নির্মাণকাজ শেষ হলে আমাদের যাত্রীদের প্রত্যাশা পূরণ হবে বলে অনেকে মনে করেন। অন্তত চট্টগ্রাম-ঢাকা রুটে কিছু সময় বেঁচে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী সময়মতো প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে সত্যিকার অর্থে রেল যোগাযোগে একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে। তার সুফল পড়বে দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে। সব দিক বিবেচনায় নিয়েই প্রয়োজনে প্রকল্পগুলো তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পুনর্বিন্যাস করা যেতে পারে। আমরা চাই সব সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে রেল উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে গতি আসুক।