রেলে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

জাকিরের ঘুষ কেলেঙ্কারি ।। দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ১১ মে, ২০২২ at ৫:৩২ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল সিওপিএস মো. জাকির হোসেন অধীনস্থ এক কর্মচারীকে ঘুষের টাকা না নেওয়ায় ‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়া’র হুমকির ঘটনায় তিন সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের নির্দেশে জিএম মো. জাহাঙ্গীর হোসেন গত রবিবার এ কমিটি গঠন করেন। ঘটনার কারণ ও দায়ীদের শনাক্ত করে দ্রুততম সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক এসএম মুরাদ হোসেনকে কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে।

জানা যায়, গত ১৩ এপ্রিল এডিশনাল সিওপিএস জাকির হোসেনের নির্দেশে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সিওপিএস-এর দপ্তরের কনফারেন্স রুমে এই দপ্তরের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ডাকা হয়। সবাই উপস্থিত হওয়ার পর জাকির হোসেন সবার নাম ডেকে ডেকে একটি করে প্যাকেট দেয়া শুরু করেন। এসময় অফিস সহকারী মো. সোহেল হোসেনের নাম ডেকে প্যাকেট দিতে চাইলে তিনি কিসের প্যাকেট জানতে চান। এসময় জাকির হোসেন এটি টিজি সেকশনের প্রতি মাসের উৎকর্ষের টাকা বলে জানান। তখন সোহেল এই টাকার প্যাকেটটি গ্রহণ করতে অনীহা প্রকাশ করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জাকির হোসেন তাকে ‘থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেয়ার হুমকি দেন এবং পরিবার নিয়ে কটূক্তি করেন। এর প্রতিবাদে ২০ এপ্রিল চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দেন সোহেল।

এই ঘটনা নিয়ে গত ২২ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘ঘুষ না নেওয়ায় হুমকি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে বিষয়টি নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। এরপর আরো অনেক সংবাদ পত্র, অনলাইন এবং টেলিভিশনে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। চাঞ্চল্যকর ঘুষের ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ায় জাকির হোসেনের আস্থাভাজন বেশ কয়েকজন কর্মচারী প্রকাশিত সংবাদ ও সাংবাদিকদের নিয়ে কটুক্তি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন।

এ ধরনের ঘটনায় বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ায় বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন ঘটনা তদন্তে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এদিকে পূর্বাঞ্চলের এডিশনাল সিওপিএস মো. জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে ঘুষ কেলেঙ্কারির বিষয়ে একই দপ্তরের অধিনস্থ কর্মচারী মো. সোহেল হোসেনের দেয়া লিখিত অভিযোগের ব্যাপারে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট এস এম সালাউদ্দিন গতকাল আজাদীকে জানান, বিষয়টি নিয়ে জিএম সাহেব তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সদস্যরা হলেন-অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক এসএম মুরাদ হোসেন, পূর্বাঞ্চলের প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী সুশীল কুমার হালদার ও প্রধান সংস্থাপন কর্মকর্তা মো. মুনির হোসেন চৌধুরী। তবে তদন্তাধীন বিষয় নিয়ে আমি কোন মন্তব্য করতে চাই না।

এদিকে গতকাল রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সদর দপ্তরে গিয়ে তদন্ত কমিটি সহ বিভিন্ন জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ১৩ এপ্রিলের ঘুষ কাণ্ড ধামা চাপা দিতে-জাকির হোসেনসহ তার অধিনস্থ আস্থাভাজন কর্মচারীরা এখন প্রচার করছেন-ঐদিনের বিতরণকৃত টাকাটা ঘুষের টাকা নয়। এটা ছিল প্রশিক্ষণের টাকা। এরকম কাহিনী সাজিয়ে তার অধিনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে স্বাক্ষর নিয়ে একটি আবেদন সিওপিএসসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। নিজেকে রক্ষায় প্রশিক্ষণের টাকা দাবি করলেও জাকির হোসেন বিষয়টি সমাধানে সোহেল হোসেনের বাসায় গিয়েছেন বলেও জানা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅস্থিরমতি অশনি উপকূল পেরোবে?
পরবর্তী নিবন্ধবিক্ষোভ দমাতে গুলির নির্দেশ শ্রীলঙ্কায়