রেলের ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন

‘অডিটর’ পদে নিয়োগ জালিয়াতি

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২০ at ৯:০১ পূর্বাহ্ণ

২০১১ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ‘অডিটর’ পদে নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনায় রেলের বর্তমান ও সাবেক ১৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন ওই নিয়োগ কমিটির সদস্য ছিলেন এবং বাকী আটজন ওই সময় নিয়োগ পাওয়া রেল কর্মকর্তা।
গতকাল বিভাগীয় স্পেশাল জজ (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইসমাইল হোসেনের আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন। এর আগে নির্ধারিত দিনে আসামিদের পক্ষে আইনজীবীরা মামলা থেকে তাদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে দেন। এই চার্জ গঠনের মাধ্যমে ৯ বছর আগে রেলে বড় ধরনের নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় বিচার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এবিষয়ে দুদকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাজী ছানোয়ার আহমেদ লাভলু আজাদীকে বলেন, ২০১১ সালে রেলে অডিটর নিয়োগে যেসব পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছিল এবং বিভিন্ন কোটায় যারা যোগ্য ছিল তাদের নিয়োগ না দিয়ে আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে ৮ জনকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। ওই ঘটনায় দুদকের দায়ের করা মামলায় গতকাল আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের আদেশ দিয়েছেন।আসামিরা হাইকোর্ট থেকে জামিনে রয়েছেন।
আসামিরা হলেন, ওই সময় নিয়োগ কমিটির আহবায়ক রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন অতিরিক্ত এফএ এন্ড সিএও মো. নজরুল ইসলাম (বর্তমানে সিভিল অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক), কমিটির সদস্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব কর্মকর্তা(বর্তমানে অবসারপ্রাপ্ত) এবিএম মফিজুল ইসলাম, রেলভবনের তৎকালীন এডি জিএম মামুনুর রশিদ(বর্তমানে রেলওয়ে প্রকল্প শাখার ডিএফএ), পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন ডিএফএ ( পেনশন) এএফএম শহীদ উল্লাহ (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও রেলওয়ে সদর দপ্তরের ডিএফএ আনিসুল হক (অবসরপ্রাপ্ত)। বাকী আট আসামির মধ্যে তখন নিয়োগ পাওয়া বর্তমানে পাহাড়তলী রেলওয়ে ডিপোর অডিটর হোসনা আক্তার, রেলভবনের অডিট শাখার ডিএফএ ফারজানা সুলতানা, কেন্দ্রীয় লোকোমেটিভ কারখানার অডিট শাখার ডিএফএ নুরুল আমিন, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অডিটর(প্রশাসন) সঞ্চিতা সাদেক, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের ডিএফএ(প্রকিউরমেন্ট) অপূর্ব বিশ্বাস, পশ্চিমাঞ্চলের অডিটর জিএম আবুল কালাম, রেলভবনের অডিটর মো. মনিরুজ্জামান ও সৈয়দপুর রেলওয়ে অডিটর প্রদীপ কুমার সরকার।
মামলার এজাহারে জানা গেছে, ২০১১ সালে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের হিসাব বিভাগে অডিটর পদে ৭ হাজার ১৩টি আবেদন জমা পড়েছিল। পরে যাচাই-বাছাই শেষে লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা ১ হাজার ৯৪৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ৮৫জন উর্ত্তীণ হয়। উর্ত্তীণদের মধ্যে কোটা অনুসারে ২১৭ জনের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। এরমধ্যে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৯৬ জন প্রার্থী মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সবাই উত্তীর্ণ হয়। ২০১২ সালে ২৫ জানুয়ারি নিয়োগ কমিটি প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে টেবুলেশন শিট প্রস্তুত করে ৬৩ জনকে নিয়োগ দানের সুপারিশ করে। ২০১২ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি ওই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। ২০১৬ সালে ২৫ জানুয়ারি ওই নিয়োগ কমিটির দাখিলকৃত প্রতিবেদন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের তৎকালীন অর্থ উপদেস্টা ও প্রধান হিসাব কর্মকর্তা(বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) গৌর চন্দ্র রায় অনুমোদন দেন।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, নিয়োগ কমিটির সুপারিশে রেলওয়ে কর্মকর্তা/কর্মচারীদের পোষ্য কোটায় ২৫টি পদের বিপরীতে ২৪ জনকে নিয়োগদানের সুপারিশ করা হয়।
এসময় প্রার্থীদের টেবুলেশন শিট পর্যালোচনা করে দুদক জানতে পারে, ময়মনসিংহ জেলা থেকে পোষ্য কোটায় সাতজন প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। এদের মধ্যে চারজনকে মেধাক্রম অনুসারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়।পোষ্য কোটায় সাতজনের মধ্যে একজন মেধা তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকলেও তার পরিবর্তে সপ্তম স্থানে থাকা এক প্রার্থীকে আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
২০১২ সালে দুদক কার্যালয়ে এই ধরনের একটি অভিযোগ পাওয়ার পর ওই নিয়োগ পরীক্ষা নিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান চালায় দুদক। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে ১০ মার্চ দুর্নীতি দমন কমিশনের উপ পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে নিয়োগ কমিটিতে থাকা রেলের পাঁচ কর্মকর্তা ও অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়া হোসনা আক্তার নামে আরেকজন আসামি করে মোট ৬জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।
দুদুকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট লাভলু বলেছেন, একজন প্রার্থীর নিয়োগ জালিয়াতির ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে পরবর্তীতে আরও ৭ জনের অবৈধভাবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।
জানা গেছে, এঘটনার পর ২০১৮ সালে ৩০ জানুয়ারি আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন। চার্জশিটে মামলার এজাহারে পাঁচ রেল কর্মকর্তার কর্মকর্তার পাশাপাশি ওই সময় নিয়োগ পাওয়া ৮জনসহ মোট ১৩ জনকে আসামি করা হয়।
বিভাগীয় স্পেশাল দায়রা জজের বেঞ্চ সহকারী মো. সাইফুদ্দিন পারভেজ আজাদীকে বলেন, এ মামলায় মোট ১২ জন সাক্ষী রয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমাধ্যমিকে বার্ষিক পরীক্ষা ছাড়াই পরের ক্লাসে সবাই
পরবর্তী নিবন্ধবে টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় সৌদি কোম্পানি