রেলের লেভেল ক্রসিংয়ে কেন এত প্রাণহানি

মীরসরাই প্রতিনিধি | শনিবার , ৩০ জুলাই, ২০২২ at ৫:৩৯ পূর্বাহ্ণ

রেল দুর্ঘটনায় যত প্রাণহানি হয় তার ৮৯ শতাংশই ঘটে অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ে। কখনো বাসের সঙ্গে, কখনো মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে এসব প্রাণহানি ঘটে। অথচ এসব ক্রসিং নিরাপদ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকারে থাকে না কখনো।
সারাদেশে রেলপথ আছে ২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার। এই রেলপথের ওপর দিয়ে কোথাও কোথাও সড়ক চলে গেছে। রেল আর সড়কের এই সংযোগস’লকেই লেভেল ক্রসিং বলা হয়। দেশে কম-বেশি লেভেল ক্রসিং আছে আড়াই হাজার। এগুলোকে বৈধ, অবৈধ, পাহারাদার আছে (ম্যানড), পাহারাদার নেই (আনম্যানড) এভাবে শ্রেণিবিন্যাস করে রেল কর্তৃপক্ষ। যেসব ক্রসিংয়ে পাহারাদার আছে সেগুলোতে লোহার প্রতিবন্ধক থাকে। পাহারাদার ট্রেন আসার সংকেত পেয়ে প্রতিবন্ধক নামিয়ে অন্য যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে পাহারাদার ভুল না করলে যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষ হওয়ার সুযোগ নেই। পাহারাদার ও প্রতিবন্ধক থাকা রেলক্রসিংয়ে তাই দুর্ঘটনাও খুব কম। পাহারাদার নেই এমন ক্রসিং অরক্ষিত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা রুটের ফেনী পর্যন্ত গত কয়েক বছরে রক্ষিত ও অরক্ষিত অনেক স’ানেই অন্তত ডজনখানের দুর্ঘটনা ঘটে। রক্ষিত থাকা স্বত্ত্বেও মীরসরাইয়ের বারইয়াহাটে গত এক বছরে কয়েকটি ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। প্রাণহানিও হয়েছে অনেক। গত ২২ জুন ভোরে আন্তঃনগর তূর্ণা নিশিতা একটি বালু ভর্তি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। এসময় একজন নিহত হয়। তখন গেটম্যান ঘুমিয়ে ছিলেন। এছাড়া এই অঞ্চলে অনেক অরক্ষিত রেলগেট সংরক্ষিত হলেও দায়িত্বে অবহেলাই দুর্ঘটনার মূল কারণ। এসব কারণ পর্যবেক্ষণসহ যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়নি কখনো। এখনো কিছু পয়েন্টে অরক্ষিত রাস্তা রয়েছে। কিন’ অরক্ষিত থাকার চেয়ে গেটম্যান দিয়ে সুরক্ষিত থাকাটাই যেন বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ অরক্ষিত থাকলে সেখানে চালক ও পারাপারকারীরা সজাগ থাকে। সুরক্ষিত ও গেটম্যান থাকলে সেখানে গেটম্যানের ভরসাতে সোজা চলে আসে। আর তখনই ঘটছে দুর্ঘটনা।
রেলের হিসাব বলছে, ২০১৪ সাল থেকে সারাদেশে মোট ৯ শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় প্রায় দেড়শত জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে লেভেল ক্রসিংয়ে ঘটা ৯৬টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক। তাদের প্রায় সবাই ক্রসিং পার হতে যাওয়া বাস, মাইক্রোবাস ও ছোট যানবাহনের আরোহী। রেলক্রসিং পারাপারের সময় যেসব পথচারী প্রাণ হারান সেই হিসাব রেল কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে না।
রেলের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রেলে এ পর্যন্ত যে বিপুল বিনিয়োগ হয়েছে এবং চলমান যে বরাদ্দ আছে, তার ১ শতাংশের কম বিনিয়োগ করলেও রেলপথ নিরাপদ হয়ে যায়। এই বিষয়ে রেলের উপ-সহকারী পরিচালক লিংকন মজুমদার বলেন, ইতিমধ্যে সকল গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংয়ে গেটম্যান দেয়া হয়েছে। আশা করছি অবশিষ্ট অরক্ষিত গেটেও সুরক্ষার ব্যবস’া করা হবে। গেটম্যানদের অবহেলার বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরোমানিয়ায় যাওয়া হলো না রিদোয়ানের
পরবর্তী নিবন্ধতারা এখন শুধুই স্মৃতি