রেলের মাথাব্যথা অতিরিক্ত ওজনের কন্টেনার

নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা বিক্সাকে

আজাদী প্রতিবেদন | বুধবার , ২০ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ

অতিরিক্ত ওজনের কন্টেনার বাংলাদেশ রেলওয়ের পণ্য পরিবহন খাতের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠছে। বেশি ওজনের এসব কন্টেনার পরিবহন করতে গিয়ে রেলওয়ের ফ্ল্যাট ওয়াগনগুলোর গিয়ারসহ যন্ত্রপাতি প্রায়শ নষ্ট হচ্ছে। এতে কন্টেনার পরিবহনে ব্যবহৃত ফ্ল্যাট ওয়াগনগুলোর আয়ুষ্কাল দ্রুত ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করা হয়েছে। একই সাথে মাঝপথে ট্রেন বিকল হওয়ার শঙ্কাও বাড়ছে। এই অবস্থায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কন্টেনারের ওজন নিয়ন্ত্রণের জন্য কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশনকে (বিক্সা) নির্দেশনা প্রদান করেছে।
রেলওয়ে ও বন্দর সূত্র জানিয়েছে, সড়ক পথের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক কন্টেনার রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। বিদেশ থেকে আমদানিকৃত কন্টেনার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কমলাপুর আইসিডিতে এবং নানা দেশে রপ্তানির জন্য কমলাপুর আইসিডি থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে কন্টেনার পরিবহন করা হয়। প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার টিইইউএস কন্টেনার রেলওয়ে ওয়াগনের মাধ্যমে পরিবাহিত হয়। রেলওয়ের অন্তত দশটি ট্রেন কন্টেনার পরিবহনে নিয়োজিত। এসব ট্রেনে গড়ে ৩১টি বিএফসিটি (ফ্ল্যাট ওয়াগন, যার উপর কন্টেনার বসানো হয়) থাকে। চট্টগ্রাম থেকে প্রতি মাসে ৭৫ থেকে ৮০টি ট্রেন কন্টেনার নিয়ে চলাচল করে। একই সমান ট্রেন কমলাপুর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে।
প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, ২০ ফুটি কন্টেনারে ৩০ টন এবং ৪০ ফুটি কন্টেনারে ৩০.৫ টন পণ্য পরিবহন করা হয়। কন্টেনারের ওজন এর থেকে বেশি হলে সেগুলো ওভারওয়েট কন্টেনার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, ওভারওয়েট কন্টেনার পরিবহন করার ক্ষেত্রে রেলওয়েকে বেশ কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করতে হয়। বিশেষ ওয়াগনে বোঝাই শেষে যান্ত্রিক বিভাগের তত্ত্বাবধানে সংশ্লিষ্ট আমদানি বা রপ্তানিকারক নিজ দায়িত্বে ল্যাসিং ও প্যাকিং সম্পন্ন করে থাকেন। পরবর্তীতে রেলওয়ের চিফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের সম্মতি এবং সিওপিএসের (পূর্ব) অনুমোদন সাপেক্ষে কন্টেনার স্পেশাল (৬০৯ নং) ট্রেনে বোঝাই করা হয়। এই ধরনের কন্টেনারবাহী ট্রেন সর্বোচ্চ ৩০ কিলোমিটার গতিবেগ এবং রাত্রীকালীন চলাচল নিষিদ্ধ করে অনুমোদন প্রদান করা হয়। বর্তমানে রেলওয়েতে প্রয়োজনীয় লোকোমোটিভ এবং রোলিং স্টকের সংকট থাকায় ওভারওয়েট কন্টেনার পরিবহনে বেগ পেতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী সাধারণ কন্টেনার টেন ১৩ থেকে ১৫ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছে। কিন্তু ওভারওয়েট কন্টেনারের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটারের কম গতিবেগ এবং রাত্রিকালীন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় গন্তব্যে পৌঁছাতে ৩ দিন পর্যন্ত সময় লাগে।
চট্টগ্রাম বন্দরে ওভারওয়েট কন্টেনারে পণ্য আমদানি-রপ্তানি উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখ করে রেলওয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, গত এক মাসে বন্দরে মোট ১৩৯টি ওভারওয়েট কন্টেনার পরিবাহিত হয়েছে। সচরাচর যা বিশ-ত্রিশটির বেশি হয় না। এতে করে কন্টেনার পরিবহনে নিয়োজিত অন্য ট্রেনগুলোতেও বাধ্য হয়ে ওভারওয়েট কন্টেনার পরিবহন করতে হচ্ছে। এতে করে রেলের বিএফসিটি ওয়াগনের আন্ডার গিয়ার ফিটিংসের পাশাপাশি বিভিন্ন যন্ত্রে সমস্যা দেখা দেয়ায় নানা ধরনের যান্ত্রিক ত্রুটিসহ আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে।
রেলওয়ের ডেপুটি চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট (পূর্ব) মোহাম্মদ জাকির হোসেন স্বাক্ষরিত এক জরুরি পত্রে কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশনের (বিক্সা) প্রতি ৪০ ফুটি কন্টেনারে ৩০.৫ টন এবং ২০ ফুটি কন্টেনারের ওজন ৩০ টনের মধ্যে সীমিত রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ওভারওয়েট কন্টেনারের সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। এভাবে ওভারওয়েট কন্টেনারের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সাধারণ কন্টেনার পরিবহন ব্যাহত হবে। তাছাড়া ওভারওয়েট কন্টেনারের জন্য যেভাবে ওয়াগন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তা-ও রেলের জন্য বড় হুমকি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ কন্টেনার শিপিং এসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা জানান, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে খরচ সাশ্রয়ের জন্য ওভারওয়েট করা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইকুইপমেন্ট আমদানিকালেও কন্টেনারের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য নানারকমের ইকুইপমেন্ট আনা হয়। এসব কন্টেনারের ওজন বাড়তি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, বিষয়টি নিয়ে রেল উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কন্টেনারে কী পরিমাণ পণ্য বোঝাই করা হবে তা বন্দর নির্দিষ্ট করে দিতে পারে না। তবে কোনো কারণে রেলওয়ের কন্টেনার পরিবহন বন্ধ হয়ে গেলে বন্দরই সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে। বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট আমদানি-রপ্তানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপ্রথমে টিকা কর্মসূচি শুরু হবে ঢাকায় : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামের চার পৌরসভায় ভোট ২৮ ফেব্রুয়ারি