রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এই ভাড়া বৃদ্ধি রুট ভেদে ৭ থেকে ৯ শতাংশ হারে। বাড়লো কন্টেনার পরিবহন ভাড়াও। বর্ধিত ভাড়ার টিকিট এরই মধ্যে বিক্রি শুরু হয়েছে প্রতিটি স্টেশনে ৪ মে থেকে। ফলে রেলের প্রতিটি রুটের যাত্রীদের ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ট্রেনে ভ্রমণের জন্য গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া।
দৈনিক আজাদীতে গত ৪ মে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, নতুন ভাড়া অনুযায়ী ঢাকা–চট্টগ্রাম রুটে তূর্ণা নিশিথা এঙপ্রেস ট্রেনে শোভন চেয়ার শ্রেণির ভাড়া ৩৪৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪০৫ টাকা ও এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির আসনের ভাড়া ৬৫৬ থেকে বেড়ে হয়েছে ৭৭৭ টাকা। এসি কেবিনের ভাড়া ১২২৯ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৪৪৮ টাকা। চট্টগ্রাম–ঢাকা রুটের সুবর্ণ এক্সপ্রেসের শোভন শ্রেণির ভাড়া ৪০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা এবং এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া হয়েছে ৮০৫ টাকা থেকে ৮৫৫ টাকা। সোনার বাংলা ট্রেনের শোভন শ্রেণির ভাড়া ৪০৫ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৪৫০ টাকা এবং এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) শ্রেণির ভাড়া হয়েছে ৮০৫ টাকা থেকে ৮৫৫ টাকা।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘রেলের লোকসান কমাতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যথায় রেলে সেবার মান উন্নয়ন করা সম্ভব নয়। রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। এই সুবিধা প্রত্যাহারের মাধ্যমে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে।’
সাধারণ জনগণ রেলের ভাড়া বৃদ্ধিতে তেমন উষ্মা প্রকাশ না করলেও তাঁরা যাত্রীসেবার মান নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত। আমাদের পাঠক মাত্রই অবগত যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ আগ্রহে রেল নিয়ে আলাদা মন্ত্রণালয় হয়েছে ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর। বলা চলে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই রেল খাতকে পুনর্জীবন দেওয়ার কাজ শুরু হয়। বন্ধ রেলপথগুলো চালু করার পাশাপাশি নতুন নতুন রেলপথ তৈরি করা হচ্ছে। এক যুগ ধরে বরাদ্দও বাড়ছে। তবু বাড়ছে না যাত্রীসেবার কাঙ্ক্ষিত মান। রেলওয়ের তৈরি করা এক প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে, প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় যাত্রীসেবার মানে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশের রেল। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির সম্প্রতি করা এক জরিপেও ৭২ শতাংশ যাত্রী রেলের সেবা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত তথ্যে জানা যায়, জানা যায়, গত দুই অর্থবছরে শুধু রেল পরিচালনায় লোকসান গুনতে হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। অভিযোগ রয়েছে, পূর্বাঞ্চল রেলপথে চলাচলকারী ট্রেনগুলোতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের। বিলম্বে চলাচল যেন এসব ট্রেনের নিয়ম। ভিড়ের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়। টয়লেট, ফ্যান ও আলোর স্বল্পতায় মেইল ট্রেনগুলোতে চলা বড় দায়। এছাড়া, বাস মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশের কারণে ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গাফিলতি করে থাকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে লোকসানের বোঝা। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উন্নত প্রযুক্তি ও অবকাঠামো, দ্রুতগতির ট্রেন, সময়মতো চলাচল নিশ্চিত করার পাশাপাশি যাত্রীসেবার মান উন্নত করে বহু দেশ তাদের রেল যোগাযোগব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র দেখা যায়। রেলওয়ের উন্নয়নে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিন ও কোচের ওপর নির্ভরতা কমানোর পদক্ষেপও দৃশ্যমান নয়। বস্তুত সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও অব্যবস্থাপনার বিষয়টি বহুদিন ধরে আলোচনায় থাকলেও এসব খাতে অগ্রগতিও দৃশ্যমান নয়। যেসব দেশের রেলওয়ে স্বাবলম্বী, সেসব দেশে সেবার মান বাড়ানোর বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ খাতে গুরুত্ব না বাড়িয়ে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ রেলওয়ে কতটা লাভের মুখ দেখবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। যেহেতু দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার কারণে রেলের রুগ্ণ দশা কাটছে না, সেহেতু এ সংস্থার সর্বক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব বাড়াতে হবে। রেলপথকে ঝুঁকিমুক্ত করার জন্যও নিতে হবে পদক্ষেপ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়ন নয়, মানবসম্পদ উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে নতুন একটি পদ্ধতি সৃষ্টি করতে পারে সরকার। ভাড়া বৃদ্ধিতে যে মনোযোগ রয়েছে, তেমনি সেবাতেও মন দিতে হবে।