রেললাইন উদ্বোধনের ২০ মাসে লোহাগাড়ায় ১১ হতাহত

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ২ আগস্ট, ২০২৫ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রামকক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধনের ২০ মাসে লোহাগাড়া উপজেলা অংশে ট্রেন দুর্ঘটনায় শিশুসহ ১১ জনের হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে ৫ জনের মৃত্যু ও ৬ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া ট্রেনের ধাক্কায় এবং কাটা পড়ে গৃহপালিত ও বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

জানা যায়, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের রশিদের পাড়া এলাকায় কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট আতংকে চলন্ত ট্রেন থেকে শিশুকে নিয়ে লাফ দেয় মাবাবা। এতে হামদান নামে ৮ মাস বসয়ী এক শিশু নিহত হয়। এছাড়া আহত হন শিশুর পিতা আবদুর রাজ্জাক (৩০) ও মা লিজা আক্তার (২০)। ১০ মে উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের দারোগা পাড়া এলাকায় রেললাইনে হাঁটতে গিয়ে কক্সবাজারগামী প্রবাল এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় নুরুল আমিন (৬০) নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। চলতি সনের ১৯ মে উপজেলার থানা ভবনের পেছনে এলাকায় কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে কাটা পড়ে বাদশা মিয়া (৫৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তার ছিন্নভিন্ন মরদেহ ঘটনাস্থল থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের রূপবান পাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়। গত ২৬ জুলাই উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নাজির পাড়া এলাকায় নানা বাড়িতে বেড়াতে এসে ঢাকাগামী কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় তাওসিফ আলম ওয়ালিদ নামে ১৮ মাস বসয়ী এক শিশুর মৃত্যু হয়। গত ৩১ জুলাই উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী বাপের পাড়া এলাকায় ঢাকাগামী পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে মো. হাসান (৪৫) নামে এক দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে।

এছাড়া ২০২৩ সালের ৭ ডিসেম্বর উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের খৈয়ারকুল এলাকায় ঢাকাগামী চলন্ত কক্সবাজার এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে সেলফি তুলতে গিয়ে মোহাম্মদ রাশেদ (২২) নামে এক যুবক গুরতর আহত হন। এ বছরের ২ মে উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের রূপবান পাড়া এলাকায় কক্সবাজারগামী সৈকত এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে পড়ে মোহাম্মদ রিপন (২০) নামে এক তরুণ গুরতর আহত হন। একইদিন উপজেলার থানা ভবনের পেছনের এলাকায় ঢাকাগামী চলন্ত পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে ছবি তুলতে গিয়ে ধাক্কায় মো. আইয়াছ (৪০) ও আব্রারার আউছাফ () নামে পিতাপুত্র আহত হন।

অপরদিকে, ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে এলিফ্যান্ট ওভারপাস এলাকায় চট্টগ্রামগামী ট্রেনের ইঞ্জিনে কাটা পড়ে এক গরুর বাছুরের মৃত্যু হয়। ২০২৪ সালের ৭ এপ্রিল একই এলাকায় কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনে কাটা পড়ে ৩টি গরুর মৃত্যু হয়। একই সালের ৬ মার্চ উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ফরেস্ট গেট সংলগ্ন এলাকায় কক্সবাজারগামী পর্যটন এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় ৩০০ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে টেক্সি। ওই ঘটনায় টেক্সিটি দুমড়ে মুচড়ে গেলেও কেউ হতাহত হয়নি। একই সালের ১৩ অক্টোবর উপজেলার চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকায় ঢাকাগামী কক্সবাজার স্পেশাল ট্রেনের ধাক্কায় ১০ বছর বয়সী একটি হাতি শাবক গুরতর আহত হয়। ১৫ অক্টোবর রেলওয়ের একটি রিলিফ ট্রেন আহত বন্যহাতিটি উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ডুলাহাজার সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী হাসপাতালে নিয়ে যান। একইদিন সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বন্যহাতিটির মৃত্যু হয়।

নিরাপদ সড়ক চাই লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক মোজাহিদ হোছাইন সাগর জানান, রেললাইন ধরে চলাচল বা বসে থাকা যে নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় অপরাধ এমন আইন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নেই অনেক লোকজনের। বিশেষ করে অসাবধানতাবশত চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে বেশি। রেললাইনের যেসব স্থানে জনসমাগম বেশি ওইসব স্থানে সচেতনতামূলক প্রচারণার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

চট্টগ্রাম রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম শহিদুল ইসলাম জানান, ট্রেনে কাটা পড়ে মৃত্যুর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি কারণের মধ্যে রয়েছে চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে ওঠানামা, কানে হেডফোন লাগিয়ে রেললাইনে হাঁটা, রেললাইনে চলন্ত ট্রেনের সাথে সেলফি তোলা, ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ, দুই বগির সংযোগস্থলে বসা, ট্রেনের দরজায় হাতলে ঝুলে যাতায়াত, অবৈধ রেলক্রসিং ও অসতর্কভাবে রেললাইন পারাপার হওয়া। মূলত অসাবধানতার কারণে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এ ব্যাপারে রেলওয়ে থানার পক্ষ থেকে নিয়মিত প্রচারপ্রচারণা ও বিট পুলিশিং কার্যক্রম পরিচালনা চলমান রয়েছে। এছাড়া ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনায় রেলওয়ে থানায় অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধ৭০ শতাংশ কাজ শেষ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষা