রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ৫০ শতাংশ কোচের আয়ুষ্কাল শেষ

আজাদী প্রতিবেদন | মঙ্গলবার , ১ জুলাই, ২০২৫ at ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণ

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চলাচলরত সকল ট্রেনের ৫০ শতাংশ কোচের আয়ুষ্কাল শেষ হয়েছে। বর্তমানে পূর্বাঞ্চলে ১,১২৭টি কোচ রয়েছে।

রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগ থেকে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে পাহাড়তলীতে নির্মিত রেলওয়ের কোচ ও ওয়াগন মেরামত কারখানাটিতে শুরুতেই নতুন কোচ ও ওয়াগন নির্মাণ এবং মেরামতের সক্ষমতা থাকলেও এখন সেই সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে কারখানাটি। এখন কারখানাটিতে শুধুমাত্র কোচ মেরামত হয়। এছাড়া আর কোনো কাজ হয় না।

সরেজমিনে গিয়ে পাহাড়তলী কারখানায় সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে এই কারখানায় প্রায় ৩০০ যন্ত্রাংশ রয়েছে, যার অনেকগুলো অকার্যকর বা মেয়াদোত্তীর্ণ। এর মধ্যে অনেকগুলো আবার ৬০ বছরের পুরানো। একদিকে পুরানো যন্ত্রাংশ; অন্যদিকে দক্ষ লোকবলের অভাবে পাহাড়তলী কারখানাটি কোচ মেরামত সক্ষমতায় দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে।

রেলওয়ের মেকানিক্যাল বিভাগের এক কর্মকর্তা আজাদীকে জানান, বিভিন্ন রুটে ট্রেনের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কোচ ও ইঞ্জিন সংকটে ট্রেন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের পাহাড়তলী, সৈয়দপুর ও পার্বতীপুরে তিন কারখানা আধুনিকায়ন ও কোচ তৈরির উপযোগী করা হলে বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে। এখন আমাদের পুরোটাই বিদেশ থেকে আমদানি নির্ভর। অথচ এই তিনটি কারখানায় আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হলে এবং পাশাপাশি দক্ষ জনবল নিয়োগ দেয়া হলে প্রতি বছরে এই কারখানা গুলো থেকে ৫০ এর অধিক কোচ বানানো যাবে।

পাহাড়তলী কারখানার ইলেক্টিক্যাল বিভাগের এক প্রকৌশলী বলেন, পাহাড়তলী কারখানায় যেসব যন্ত্রাংশ আছে তার অধিকাংশই অকেজো হয়ে গেছে। তিনি জানান, পাহাড়তলী কারখানাতে মোট ২২ টি শপের মধ্যে প্রায়ই বন্ধ। এক সময় সম্পূর্ণ একটি বগি, ওয়াগন, চাকা, বয়লার, পিরিওডিক্যাল ওভারহোলিং (পিওএইচ) জেনারেল ওভারহোলিং (জিওএইচ)সহ যাবতীয় মেরামত কাজ হতো। বর্তমানে চার ভাগের এক ভাগ কাজও হয় না।

সরেজমিনে পাহাড়তলী ক্যারেজ এবং ওয়াগন মেরামত কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, এখন শুধুমাত্র পুরনো বগি মেরামত, বগি রং করা, চাকা, বগির গ্লাসবাথরুম, ফ্যান মেরামত করা ছাড়া আর কিছুই হয় না।

এতো বিশাল কারখানা জুড়ে যত গুলো শপ আছে তার মধ্যে অনেক গুলোই খালি পড়ে আছে। কারখানা জুড়ে নেই কোনো কোলাহল। সারি সারি ওয়াকর্শপের ভেতরবাহির, চারপাশে মূল্যবান রেলওয়ে ক্যারেজ, ওয়াগন, যন্ত্রাংশ পড়ে আছে। কিছু কিছু শপ একেবারেই বন্ধ। আর কিছু কিছু শপে কয়েকজন করে শ্রমিক কাজ করছেন। কারখানায় বর্তমানে কারখানায় প্রায় ৫০০ যন্ত্রাংশ রয়েছে। যার চার ভাগের তিন ভাগের আয়ুষ্কাল শেষ হয়ে গেছে। এখানকার সব কটি ওয়ার্কশপই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ৬৭টি আগুনের চুল্লিসহ অসংখ্য মেশিন রয়েছে। এক সময় শত শত শ্রমিক ঢালাইয়ের কাজ করতেন। ঢালাই করে হুবহু বিদেশি যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়। এতে অর্থ যেমন বেঁচে যেত, নষ্ট হওয়া ট্রেনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামত করা যেত।

ওয়াগন মেরামত ও সচল করতে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশের প্রয়োজন হয়। অভিজ্ঞ মিস্ত্রির প্রয়োজন হয়। অভিজ্ঞ মিস্ত্রির এখানে স্বল্পতা রয়েছে। ট্রেন লাইটিং শপ, ওয়ালিং শপেও একই অবস্থা।

বর্তমান সরকার পাহাড়তলীসহ দেশের আরও দুই কারখানায় রেলের কোচ (বগি) তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে তিনটি কারখানা আধুনিকায়নের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এর ফলে বিদেশ থেকে কোচের যন্ত্রাংশ এনে এখানে নতুন কোচ নির্মাণ করা যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধঢাকার প্রাভা হেলথের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মামলা