নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে তার নেতৃত্বে গঠিত নির্বাচন কমিশন আগের মত নির্দেশিত হয়ে কোনো নির্বাচন করবে না। আমরা রেফারির ভূমিকায় থাকব। আমরা মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় করে সবাই মিলে যত জায়গায় গর্ত রয়েছে, সব গর্তের মুখ আমরা বন্ধ করব, বলেছেন তিনি। সাবেক এই আমলার ভাষায়, নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে, সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেই এগোতে হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ইস্কাটনে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নতুন সিইসি। খবর বিডিনিউজের।
সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অঙ্গীকার জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, আমার কমিশনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যাতে মানুষের ভোটাধিকারটা ফিরিয়ে দিতে পারি। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা, যাতে মানুষ তার পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। সেটা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার, আমি সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করব। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দীন বলেন, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বটা কিন্তু অত্যন্ত গুরুদায়িত্ব। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত তিনটি নির্বাচন ধরলে (২০১৪ সালের দশম, ২০১৮ সালের একাদশ, ২০২৪ সালের দ্বাদশ) মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনের নামে একটা প্রহসন হয়েছে। অনেকে বলেছেন ভোটকেন্দ্রে যেতে পারেননি; অনেকে ভোটকেন্দ্রে গেলেও ভোট দিতে পারেননি– এসমস্ত হয়েছে। গত ১৫–১৬ বছরে অনেক লোক রক্ত দিয়েছেন, অনেক খুন হযেছে, গুম হয়েছে। অনেক মা হারিয়েছে ছেলেকে; অনেক ছেলে হারিয়েছে মাকে। অনেকে ভাইকে, বাবাকে হারিয়েছেন। জুলাই–আগস্টে কত লোক শহীদ হয়েছেন। কত লোক আহত, পঙ্গু হয়েছেন, চোখ হারিয়েছেন–চিন্তা করলে খুব খারাপ লাগে।
নতুন সিইসি বলেন, এক অনুষ্ঠানে জানলাম, ১৩০টি শিশু মারা গেছে। এ মৃত্যুগুলো, আহত, পঙ্গু কেন হল? তাদের বড় চাওয়ার মধ্যে ছিল ভোটের অধিকার চাই। আমরা আমার নিজের ভোট নিজে দিতে চাই, আমার পছন্দের প্রার্থীকে দিতে চাই। এখানে তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে, এ অধিকার বঞ্চিত করা হয়েছে।
নতুন কমিশনের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যয় জানিয়ে নাসির উদ্দীন বলেন, আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, আমার কমিশনের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে যাতে মানুষের এ চাওয়া, এ এঙপেকটেশন, এ অধিকারটা ফিরিয়ে দিতে পারি। আমরা এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি, যেখানে মানুষ স্বঃপ্রণোদিত হয়ে ফ্রি, ফেয়ারলি তার পছন্দমত লোকটাকে ভোট দিতে পারে। সেটা নিশ্চিত করার জন্য যা যা করা দরকার, আমি সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করব সেটা এনশিওর করার।
সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বলতে গিয়ে নতুন সিইসি স্মরণ করেন সরকারের সচিব হিসেবে তার দায়িত্ব পালনের দিনগুলোর কথা। তিনি বলেন, সরকারের কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ছিলাম। সেখানে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা থাকবে যাতে শহীদদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না হয়। আশা করি সফল হবো। অতীতেও অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল, সামনেও হয়তো অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। সামনে চ্যালেঞ্জ আরও অনেক বেশি। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই এগোতে হবে। ইনশাল্লাহ অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।
সামনে ভোটের জন্যও নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে মন্তব্য করে সাবেক এ আমলা বলেন, এমন অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে এখন… বুঝতেও পারছি না যে নির্বাচনে কত ধরনের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে। এটা এমন না যে আগে ওরকম এসেছিল, এখন আবারও একই জিনিস আসবে– এটা সেরকম নয়। নিত্য নতুন চ্যালেঞ্জ আসবে এবং যত সময় যাবে এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমাদের এগোতে হবে।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি হবে, এখন তা নির্ধারণ করাও কঠিন হবে বলে মনে করেন নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, আগে তো দেখেছি, যে ইলেকশন কমিশন ছিল তারা কী চেষ্টা করেছে। তারা অনেকটা নির্দেশিত হয়ে কাজ করত এমন বিশ্বাস দেশবাসীর মনে মনে ছিল। কারো দ্বারা নির্দেশিত হয়ে আমরা সেরকম করব না। একটা সুবিধা হল– আমরা যে কাজ করব, প্রথম ইলেকশন যেটা, তা হবে ইনটেরিম গভর্নমেন্টের আন্ডারে, ম্যান লাইক প্রফেসর ইউনূস। উনার তো কোনো রাজনৈতিক অভিলাষ নেই, উনি বারবার বলছেন। সুতরাং আমরা রেফারির ভূমিকায় থাকব; উনি (প্রধান উপদেষ্টা) রেফারির ভূমিকায় আছেন বাংলাদেশের জন্য।
ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়াকে বড় সম্পদ হিসেবে বর্ণনা করেন নতুন সিইসি। তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ যেটা, হুকুম অনুযায়ী, নির্দেশিত হয়ে ইলেকশন করা, সেটা নেই; সেই ইলেকশন নেই। আরেকটা বড় অ্যাসেট– সব রাজনৈতিক দল যারা ইলেকশন করতে চায়, সবাই একবাক্যে বলছে আমরা একটা ফ্রি, ফেয়ার ইলেকশন চাই। আমরা মানুষের ভেটাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জাতি যে একটা দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। রাজনীতিবিদরা যে যতই বলুক, এই একটা দাবিতে সবাই এক। এটা বিরাট অ্যাসেট; যেটা আগে ছিল না।
রাজনৈতিক সরকারের সময়ে গত তিনটি নির্বাচন ভোটের সমালোচনা করেন নতুন সিইসি। তিনি বলেন, আগে ছিল কি রকম– আমরা ইলেকশন দিয়েছি, তোমরা এসো না। এখন তো সেটা না। এখন তো সবাই মিলে চাচ্ছে–আমরা একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন চাই। মানুষের ভোটের অধিকার চাই। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।