রেড নোটিশ জারি করা সন্ত্রাসীদের তথ্য হালনাগাদ করা হচ্ছে। ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জন সন্ত্রাসীর নাম রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশের আবেদনে ৪৭ জনের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে। বাকি ১৫ জন বাংলাদেশি নাগরিক হলেও বিভিন্ন দেশে গিয়ে অপরাধ করায় সংশ্লিষ্ট দেশের পুলিশের আবেদনের পর রেড নোটিশ জারি করা হয়েছে।
ইন্টারপোলের রেড নোটিশভুক্ত বাংলাদেশি পলাতক আসামিদের সম্পর্কে জানাতে বিভিন্ন দেশের দূতাবাসকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যৌথভাবে ওই চিঠি পাঠিয়েছে। ইতোমধ্যে নোটিশভুক্ত ৬২ আসামির মধ্যে ২০ জনের অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। তাদের গতিবিধিসহ সার্বিক বিষয় সম্পর্কে জানাতে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে। চিঠিতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের বাইরে থাকা আলোচিত আসামিদের সম্পর্কেও জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। তারা চিঠি গ্রহণ করে ফিরতি মেইলও করেছে।
সরকারের একটি উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, শুধু ইন্টারপোলের নোটিশভুক্ত আসামি নয়, দেশে আলোচিত সব মামলার পলাতক আসামিদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ওই সব আসামিদের ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দূতাবাসের মাধ্যমে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দপ্তরের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. মনজুর রহমান বলেন, ইন্টারপোলের ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিসহ সব ধরনের আসামির দেশে ফেরত আনতে কাজ চলছে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগাযোগসহ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
আন্তর্জাতিকভাবে পুলিশকে সহায়তার জন্য প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশন (ইন্টারপোল)। এ সংস্থার ওয়েবসাইটে ওয়ান্টেড তালিকায় চট্টগ্রামের দুর্ধর্স সন্ত্রাসী শিবির ক্যাডার সাজ্জাদসহ রয়েছে ৬২ বাংলাদেশির নাম। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, খুনি, সাইবার ক্রাইম, মাদক চোরাকারবারি, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম, মানবপাচারে অভিযুক্ত তারা। তালিকায় রয়েছে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা। রয়েছে কয়েকজন যুদ্ধাপরাধীর নামও।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সূত্র জানায়, দুই প্রক্রিয়ায় কোনো অপরাধীকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়। একটি হলো কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অন্যটি হলো পুশব্যাক (কোনো দেশ নিজেদের উদ্যোগেই যদি ফেরত পাঠায়)। কূটনৈতিক প্রক্রিয়াটি পুরোপুরি পারস্পরিক বোঝাপড়ার বিষয়। এটি নির্ভর করে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ও বোঝাপড়া কেমন। এ ক্ষেত্রে বন্দী বিনিময় চুক্তি না থাকলেও অপরাধীকে ফেরানো যায়। তবে বন্দী বিনিময় চুক্তি থাকলে দুই দেশের মধ্যে একধরনের বাধ্যবাধকতা থাকে। এতে অপরাধীকে ফিরিয়ে আনা তুলনামূলক সহজ। তবে সেই চুক্তি না থাকলে অপরাধী ফিরিয়ে আনার বিষয়টি দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর নির্ভর করে।
পুলিশ সদর দপ্তরের সূত্র বলছে, ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থাকলে অপরাধীর বিষয়ে তথ্য আদান–প্রদানের ক্ষেত্রে সদস্য দেশগুলোর সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। তবে কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা না হলে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি হলেও আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয় না।
ইন্টারপোলকে সহয়তা করে পুলিশ সদরদপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) নামে একটি শাখা। এ শাখাটি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইন্টারপোলের তালিকায় থাকা অপরাধীদের সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আদান–প্রদানে কাজ করে থাকে। ইন্টারপোলের এ লাল নোটিশে অপরাধীদের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতি পাঁচ বছর পরপর তথ্য হালনাগাদ করা হয়। ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড পারসন্স’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ঝুলছে বাংলাদেশের পলাতক ৬২ শীর্ষ অপরাধীর নাম ও ছবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিদেশে আত্মগোপন করা সন্ত্রাসীরা একাধিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে ফেরারি থাকছে। বছর দশেক আগে নেপালে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন আটক হওয়ার পর তার কাছ থেকে ভারতীয় পাসপোর্ট পাওয়া যায়। ওই পাসপোর্টের ভিত্তিতে তাকে নেপালের কাঁকরভিটা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পুশব্যাক করা হয়।
ইন্টারপোলের লাল তালিকাভুক্ত ৬২ বাংলাদেশি হলেন, ইকবাল জাফর, তানজিরুল, স্বপন, মোল্ল্লা নজরুল ইসলাম, মিয়া মিন্টো, খান মো. শহীদ উদ্দিন, ওয়াসিম, খোরশেদ আলম, গিয়াস উদ্দিন, অশোক কুমার দাস, মিয়া মিজান, চন্দন কুমার রায়, রাতুল আহমেদ বাবু, মো. মোস্তফা সিরাজ লালু, আব্দুল হারিস চৌধুরী, জাহিদ হোসেন খোকন, সৈয়দ মো. হোসাইন ওরফে হোসেন, সৈয়দ মো. হাসান আলী, রহমান আজিজুর, অজয় বিশ্বাস, তরিকুল ইসলাম, হানিফ, আব্দুল জব্বার, মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মোহাম্মদ সবুজ ফোকিদ, মোহাম্মদ মনির ভুঁইয়া, শফিক–উল, আমান উল্লাহ শফিক, আবুল কালাম আজাদ, জাহিদুল ইসলাম, সাজ্জাদ হোসেন খান, মো. নাঈম খান ইকরাম, ফেরদৌস কালা জাহাঙ্গীর, মো. ইউসুফ, আব্দুল আলিম শরীফ, মজনু আহমেদ, নুরুল দিপু, মোহাম্মদ ফজলুল আমিন জাবেদ, এস এইচ এম বি নুর চৌধুরী, আব্দুর রশীদ খন্দকার, নাজমুল আনসার, শরিফুল হোসেন আহমেদ, শরিফুল হক ডালিম, রউফ উদ্দিন, খান মোসলেমউদ্দিন, এ ম রাশেদ চৌধুরী, আতাউর রহমান মাহমুদ চৌধুরী, মাওলানা মোহাম্মদ তাজউদ্দীন মিয়া, মিন্টু সালাহউদ্দিন, গোলাম ফারুক অভি, শেখ হারুন, সুলতান সুজিদ, তৌফিকুল আলম, জাফর আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, আমিনুর রসুল, জিসান আহমেদ, সুব্রত বাইন ত্রিমতি, হোসাইন নবী, প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, আব্দুল জব্বার ও খন্দকার তানভীর ইসলাম জয়।
প্রসঙ্গত ফ্রান্সের লিয়নে অবস্থিত ইন্টারপোল সদরদপ্তর থেকে পরিচালিত সংস্থাটির ওয়েবসাইটে ‘রেড নোটিশ অব ওয়ান্টেড পারসন্স’ তালিকায় বিভিন্ন দেশের মোট সাত হাজার ১৮ জন অপরাধীর নাম, পরিচয়, ছবি ও জাতীয়তা তথা দেশের নাম উল্লেখ আছে। এ তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ জন অপরাধীর নাম রয়েছে।