ভারতের দুই রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল স্পষ্ট হয়ে গেছে। মহারাষ্ট্রে বিজেপির জোট ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সই (এনডিএ) বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। আর ঝাড়খণ্ডে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস ও স্থানীয় ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চার জোট ইন্ডিয়া।
এদিকে কেরালার ওয়েনাডের সংসদ সদস্য হিসাবে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী পদত্যাগ করার পরে সেখানেও উপনির্বাচন হয়েছিল। ওই ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন রাহুলের বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির প্রার্থী সথ্যান মোকেরিকে চার লাখ ১০ হাজারেরও বেশি ভোটে (প্রায় ৭০ শতাংশ) হারিয়ে জয়ী হয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। এই প্রথমবার তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে রাহুল গান্ধীর রেকর্ড ভেঙে জয়ী হয়েছেন। মাত্র ৬ মাস আগে রাহুল ওয়েনাডে জিতেছিলেন ৩ লাখ ৬৪ হাজার ভোটে। তার ঝুলিতে গিয়েছিল প্রায় ৬০ শতাংশ ভোট।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফলাফলে সবকটি আসনেই বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিজেপি। তবে এই নির্বাচনে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের প্রার্থীরা সব কটি কেন্দ্রে জামানত হারিয়েছেন।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ছয় মাসের মাথায় মহারাষ্ট্র এবং ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা ভোট হয়েছে। গতকাল শনিবার ভোটগণনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। মহারাষ্ট্রে মূল লড়াই ছিল বিজেপি–শিবসেনা (একনাথ শিন্ডে)-এনসিপি (অজিত)-র ‘মহাজোট’ এবং কংগ্রেস–শিবসেনা (ইউবিটি)-এনসিপি (শরদ)-র ‘মহা বিকাশ আঘাদি’র মধ্যে। মহারাষ্ট্রে মোট আসনের সংখ্যা ২৮৮। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ১৪৫। সেখানে ২৩৩টি আসনে জয়ী হয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ‘মহা বিকাশ আঘাদি’ জিতেছে ৪৯টি আসনে। অন্যদিকে, ৮১ সদস্যের ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ৪১টি আসন। সেখানে মূল লড়াই ছিল বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ–র সঙ্গে ক্ষমতাসীন জেএমএম–কংগ্রেস–আরজেডি–সিপিআইএমএল (লিবারেশন)’র ‘মহাগঠবন্ধন’র। ঝাড়খণ্ডে ৫৫টি আসনে জয়ী জেএমএম নেতৃত্বাধীন জোট ইন্ডিয়ার প্রার্থীরা। এনডিএ ঝাড়খণ্ডে ২৫টি আসন জিতেছে। মে মাসে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনে বিরোধী জোট মহা বিকাশ আঘাদি মহারাষ্ট্রের মোট ৪৮টি আসনের মধ্যে ৩০টি আসন জিতেছিল। মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যেই চিত্রটা সম্পূর্ণ পাল্টে গেল।
এ নিয়ে তৃতীয় বার মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ। কংগ্রেস–সহ ‘মহা বিকাশ আঘাদি’র তুলনায় বেশি ভোট পেয়েছে বিজেপি একাই। নির্বাচনের ফল নিয়ে গতকাল বিকেলেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মোদী। বলেন, এনডিএ–র এই জয় ‘ঐতিহাসিক’। রাতে দিল্লিতে বিজেপির প্রধান কার্যালয় থেকে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, মহারাষ্ট্রে জাতি–ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। আর যারা তোষণের রাজনীতির পিছনে দৌড়ায়, তাদের স্বরূপ চিনে ফেলেছে মানুষ। বিজেপির সুশাসনের উপর আস্থা রয়েছে জনতার। বিধানসভা নির্বাচনে সেটাই দেখিয়ে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের জনতা! এ নিঃসন্দেহে বিজেপির ঐতিহাসিক জয়। আবার ঝাড়খণ্ডের পরাজয় নিয়ে মোদীর মন্তব্য-‘ঝাড়খণ্ডের মানুষকে ধন্যবাদ জানাই আমাদের পাশে থাকার জন্য। জনসাধারণের সমস্যা উত্থাপন এবং রাজ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে আমরা সবসময়ে এগিয়ে আসব। রাজ্যে ভাল ফলাফলের জন্য জেএমএম–এর নেতৃত্বাধীন জোটকে শুভেচ্ছা জানাই।
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেন প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দনের পরে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, আমি শুনেছি যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজী আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।
এদিকে এবারের ঝাড়খণ্ড নির্বাচনে বিজেপির প্রচারের প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছিল ‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ’ ইস্যুটি। ভোট ঘোষণার আগে থেকেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং নির্বাচনি সভাগুলোতে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বারবার বলেছেন যে বাংলাদেশ থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীরা ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীদের জমি দখল করে নিচ্ছে। ওই রাজ্যে ভোটের প্রধান কৌশলী হিসাবে নিয়ে আসা হয়েছিল আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে। তিনি নিজের রাজ্যেও বারবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ইস্যু তুলে থাকেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ যে আদৌ বিজেপির পক্ষে কাজ করে নি, তা ভোটের ফলেই বোঝা যাচ্ছে।