রেকর্ডের পাতায় ইবাদত

ভলিবল থেকে ক্রিকেট

ক্রীড়া প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার , ৬ জানুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪৫ পূর্বাহ্ণ

ইবাদত হোসেন চৌধুরী। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইতিহাস রচনার সবচাইতে বড় নায়ক। দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেট নিয়ে তিনি একাই স্বাগতিকদের ধ্বসিয়ে দিয়েছেন। ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতে গিয়ে ইবাদত বলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে দারুণ গর্বিত তিনি।
ইবাদত ২০১২ সালে যোগ দেন বিমান বাহিনীতে। বিমান বাহিনীর হয়ে খেলতেন ভলিবল। ছিলেন ভলিবল কোচও। তবে ভালোবাসা ছিল ক্রিকেটের প্রতিও। আর ছিল জোরে বল করতে পারার সহজাত সামর্থ্য। ভলিবল খেলোয়াড় ইবাদত স্বপ্ন দেখতেন ক্রিকেট ভূবনে বিচরণের। ২০১৪ সালে ঢাকা প্রথম বিভাগ ক্রিকেটও খেলে ফেলেন। তবে ইবাদতের আরো বড় পর্যায়ে উঠে আসার সুযোগটা করে দেয় ২০১৬ সালের পেসার হান্ট কার্যক্রম। সেই আসরের সবচেয়ে গতিময় বোলার হিসেবে পুরষ্কার পেয়ে যান তিনি। ঘষেমেজে তাকে গড়ে তুলতে হাই পারফরম্যান্স স্কোয়াডে নিয়ে আসে বিসিবি। সেখানেই একটি ক্যাম্পে তাকে দেখে মনে ধরে সাবেক পাকিস্তানি পেসার আকিব জাভেদের। যাওয়ার সময় আকিব সংশ্লিষ্টদের বলে যান, ইবাদতের দিকে বাড়তি নজর রাখতে। ততদিনে ঘুরে গেছে ইবাদতের জীবনের মোড়। ঘুছে যায় ভলিবল খেলোয়াড় জীবনের অধ্যায়। বিমান বাহিনীর চাকরি যদিও রয়ে যায়, বাহিনী থেকে সহায়তাও পান যথেষ্ট। তবে ক্রিকেট হয়ে উঠে তার জীবন।
ছেলেবেলা থেকে ক্রিকেটের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকলেও বিসিবির সিস্টেমে থেকে চেষ্টা করেন নিজেকে তৈরি করার। এরপর নজর কাড়েন ঘরোয়া ক্রিকেট, বিসিবি একাদশ ও বিপিএলে। পাকিস্তানি কিংবদন্তি ক্রিকেটার ওয়াকার ইউনিসের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পান বিপিএলে। ২০১৯ সালের মার্চে মাথায় ওঠে টেস্ট ক্যাপ। কিন্তু সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে একদমই সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। এই সফরের আগে ১০ টেস্ট খেলে উইকেট ছিল মাত্র ১১টি। বোলিং গড় ছিল ৮১.৫৪। তবুও ইবাদতের ওপর আস্থা রাখে দল। অবশেষে তিনি দিলেন সেটির প্রতিদান। দেশের বাইরে বাংলাদেশের কোনো পেসারের সেরা বোলিং কীর্তি গড়ে দলকে এনে দিলেন ঐতিহাসিক জয়।
এই টেস্টে বারবারই দেখা গেছে ইবাদতের স্যালুট। তিনি বলেন আমি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সদস্য। আমি জানি কিভাবে স্যালুট করতে হয়। ভলিবল থেকে ক্রিকেটে আসা একটি লম্বা গল্প। আমি ক্রিকেট উপভোগ করছি এবং বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করার চেষ্টা করছি। একই সাথে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকেও।
বোলিং কোচ গিবসন দীর্ঘদিন ধরেই নিবিড়ভাবে কাজ করে আসছেন তাকে নিয়ে। ক্যারিয়ারের স্মরণীয়তম দিনটিতে ইবাদতও ভুললেন না কোচের কথা। তিনি বলেন, গত ২ বছর ধরে আমি ওটিস গিবসনের সঙ্গে কাজ করছি। তিনি সবসময় আমাদের সাহায্য করেন। বাংলাদেশের কন্ডিশনে আমরা খুব একটা সহায়তা পাই না। এখনও আমরা শিখছি। দেশের বাইরে কীভাবে বল করতে হয়। কিভাবে রিভার্স করতে হয়, নিউজিল্যান্ডে ভালো লেংথে কীভাবে বল করতে হয়। আমি চেষ্টা করেছি টপ অব দা স্টাম্প হিট করতে। সাফল্য এসেছে তাতেই। হয়তো একটু ধৈর্য ধরতে হয়েছে।
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিনে ইবাদত ১৭ ওভারে ৩৯ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় ওভারে পঞ্চম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে গড়লেন পাঁচ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড। রস টেইলরের উইকেট নিয়ে পাঁচ উইকেট শিকারিদের ক্লাবে নাম লেখালেন এই টাইগার পেসার। ৯ বছর পর কোনো বাংলাদেশি পেসার পেলেন টেস্টে পাঁচ উইকেট পাওয়ার স্বাদ। আর মাত্র ৫ম বাংলাদেশি পেসার হিসেবে এই রেকর্ড গড়লেন ইবাদত হোসেন। তার আগে শেষবার রবিউল ইসলাম নিয়েছিলেন পাঁচ উইকেট। ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের হারারেতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে ৭১ রানে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকৌতুক কণিকা
পরবর্তী নিবন্ধনতুন বছরে স্বপ্নপূরণ