সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষকে নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে। আর এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন।
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর–রুনি মিলনায়তনে ‘বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে রূপান্তরের রূপরেখা প্রস্তাব’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পক্ষ থেকে দেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরে ৫ দফা প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এটি প্রাথমিক প্রস্তাব। এ প্রস্তাবকে আরও বিস্তৃত করতে কাজ করবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ রূপান্তরের রূপরেখা প্রস্তাব তুলে ধরেন। সেগুলো হলো : ১. অবিলম্বে শিক্ষার্থী–জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর সম্মতিক্রমে, নাগরিক ও রাজনৈতিক শক্তিসমূহের মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষক, বিচারপতি, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের অংশীজনদের নিয়ে একটি জাতি–ধর্ম–লিঙ্গ–শ্রেণির অন্তর্ভুক্তিমূলক অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই সরকারের সদস্য নির্বাচনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করবেন। এই সরকারের কাছে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগ করবে।
২. শিক্ষার্থী–জনতার অভ্যুত্থানের মূল শক্তিগুলোর অংশীজনদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে সর্বদলীয় নাগরিকদের নেতৃত্বে একটি ছায়া সরকার গঠিত হবে। তারা এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে, যেন দেশে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত হয়।
৩. জুলাই হত্যাকাণ্ড এবং জনগণের ওপর নৃশংস জোর–জুলুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের সহযোগিতায় তদন্ত কমিটি এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা। ৪. সাম্প্রতিক সময়ে করা মিথ্যা, ষড়যন্ত্রমূলক ও হয়রানিমূলক মামলা বাতিল এবং এসব মামলায় আটক সবাইকে মুক্তি দেওয়া। ৫. সরকার গঠনের ৬ মাসের মধ্যে একটি সংবিধান সভা (কনস্টিটিউশনাল অ্যাসেম্বলি) গঠনের জন্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। নির্বাচিত সংবিধান সভা এমন এক গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রস্তাব করবে যে, সংবিধানে স্বৈরতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, জনবিদ্বেষী ও বৈষম্যমূলক কোনো ধারা থাকবে না। সেই সংবিধানের ভিত্তিতে সরকার অবিলম্বে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করবে।
এক প্রশ্নে আনু মুহাম্মদ বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে অবস্থার পরিবর্তন হবে না, বরং অবনতি হবে। যত দ্রুত পদত্যাগ করবে তা দেশের ও তাদের নিজেদের জন্যই ভালো। গণভবন খোলা বলা হচ্ছে, এটি ১৪ তারিখে খোলা হলে এত রক্তপাত হতো না। আমরা আশা করি, সরকার আর জটিলতা সৃষ্টি না করে দ্রুত পদত্যাগ করবে।
সংবাদ সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের কার্যক্রম শুরুর প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের পাবলিক–প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মোর্চা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কাজ করছে। বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপান্তরের সময় উপস্থিত। শিক্ষার্থীদের এক দফার সঙ্গে একমত হয়ে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে এই প্রস্তাব উপস্থাপন করা হচ্ছে।