পাহাড়ি ভূমিতে যত দূর চোখ যায় বিস্তর জায়গাজুড়ে ফুটে আছে রূপবান শিমের ফুল। কোথাও থোকা থোকা ঝুলছে বেগুনি রঙের শিম। আবার কোথাও থোকা থেকে সদ্য ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছে। কৃষকদের কেউ কেউ বাজারে বিক্রির জন্য শিম তুলছেন। আবার কেউ শিমের লতা পরিচর্যায় ব্যস্ত। এ চিত্র দেখা গেছে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা পাহাড়ে। রূপবান জাতের এই শিম গ্রীষ্মকালে লাগানো হয় বলে একে গ্রীষ্মকালীন শিম বলা হয়।
সীতাকুণ্ড উপজেলা শিম উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। সীতাকুণ্ডের শীতকালীন শিম বিশেষ করে ছুরি, লইট্টা, বাঁটা শিমের চাহিদা বেশি। কিন্তু গ্রীষ্মকালীন শিমও সুস্বাদু এবং লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষ বেড়ে চলেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, ২০২৩ সালে সীতাকুণ্ডে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ হয়েছিল ২৮ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর তা বেড়ে ৩০ হেক্টর জমিতে গ্রীষ্মকালীন শিমের আবাদ হয়েছে।
কৃষকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালীন শিম ওঠার শুরুতে তারা প্রতি কেজি বিক্রি করেছেন ১৬০ টাকা থেকে ১৭০ টাকা। এখনো ১৪০ টাকা দরে শিম বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের পাইকাররা এসে এই শিম নিয়ে যাচ্ছেন। সীতাকুণ্ডে পাহাড়ের টিলায় শিম চাষ হয়। দুর্গম এলাকায় হওয়ায় এর উৎপাদন খরচ কিছুটা বেশি। পাহাড়ের শিম চাষ করার অন্যতম কারণ হলো, বর্ষায় সমতলে অতি বৃষ্টির কারণে পানি জমে শিমের লতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু পাহাড়ে পানি জমে থাকে না। ফলে শিমগাছ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। পাহাড়ে এ শিমের চাষ বাড়তে থাকায় অনাবাদি জমির পরিমাণও কমছে।
কৃষকরা জানান, গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিমের ফলন শীতকালীন শিমের চেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে পাওয়া যায়। ফলে এই শিমের লাভও বেশি।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, সীতাকুণ্ডে গ্রীষ্মকালীন রূপবান শিম চাষ করেছেন প্রায় ৩০০ কৃষক। কুমিরায় বেশির ভাগ পাহাড়ি এলাকায় রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে। এছাড়া বাঁশবাড়িয়া, সৈয়দপুর, বারৈয়ারঢালা ও সীতাকুণ্ড পৌর সদরেও রূপবান শিমের আবাদ হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তা ও কৃষকেরা জানিয়েছেন, প্রতিবছর এপ্রিল মাসে গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষ করা হয়। ৬০ দিনের মাথায় অর্থাৎ জুন মাস থেকে ফলন উত্তোলন করতে শুরু করে কৃষকেরা। এভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন শিম বিক্রি হয়। ডিসেম্বরে পানিু সংকটের কারণে রূপবান শিমের উৎপাদন কমতে থাকে। অন্যদিকে নভেম্বরের শেষের দিকে শীতকালীন শিম বাজারে আসতে শুরু করে।
কুমিরা ইউনিয়নের উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুজন ঘোষ বলেন, প্রতি হাটে (সপ্তাহে দুই দিন) তার ইউনিয়ন থেকে অন্তত ১৫ টন শিম বিক্রি করেন কৃষকেরা। এখন ১৫ টন শিমের মূল্য ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা। তারা কৃষকদের নানাভাবে পরামর্শ দেন। বিশেষ করে ফুল আসার পর সেগুলো ধরে রাখার জন্য যেসব ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়, সেগুলো পরামর্শ দেন। পাহাড়ে গিয়ে বিভিন্ন সময় তারা তদারকি করেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ফলন উৎপাদন হয়। শীতকালীন শিমের চেয়েও দাম বেশি পান। ফলে কৃষকেরা গ্রীষ্মকালীন শিমের চাষের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে প্রতিবছর বেড়ে চলছে এ শিমের আবাদ। সীতাকুণ্ডের শীতকালীন শিমের মতো রূপবান ছিল শিমও খুব সুস্বাদু। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে এর সুনাম রয়েছে।