বান্দরবানে বর্ষার শুরুতেই ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে রুমা–থানচি সড়ক। অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখতে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন নিয়মিত সংস্কার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল শুক্রবারও পিচ্ছিল সড়কের মাটি সরানোর কাজ করতে দেখা গেছে ইঞ্জিনিয়ার কোরের সেনা সদস্যদের।
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, বান্দরবান জেলা সদর থেকে আঁকা বাকা পাহাড়ের উঁচু নীচু সড়কে রুমা উপজেলার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার এবং থানচি উপজেলার দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। অভ্যন্তরীণ উপজেলা সড়কগুলো একটানা কদিন বৃষ্টি হলেই বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসে এবং পাহাড়ি ঢলের পানিতে বিধস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমপ্রতি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে সড়কের অনেকগুলো স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, বান্দরবান রুমা ও থানচি সড়কের জামিনী পাড়া, ১৪ মাইল, দলিয়ান পাড়া, পোড়াবাংলা, গেজমনিপাড়া, মিলনছড়ি এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে সড়কের সংস্কার কাজ চালাচ্ছে সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়ন সদস্যরা। সড়ক দুটিতে সারাবছরই সংস্কারের কাজ করতে দেখা যায়।
দলিয়ান পাড়ার কারবারী (পাড়া প্রধান) লার ক্রীং বলেন, রুমা সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটি সড়ক। এই সড়কে প্রায় সময় পাহাড়ের মাটি ভেঙে পড়ে মানুষজন হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পাহাড় ধসে সড়কে মাটি জমে সড়ক যোগোযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বৃষ্টিতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে সড়কটিতে নিয়মিত সংস্কার কাজ করে সেনাবাহিনী।
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থী সাননং বম বলেন, বর্ষায় আতঙ্কিত হয়ে পড়ে রুমা–থানচি সড়কের বাসিন্দারা। বৃষ্টিতে সড়কের দুপাশের পাহাড়গুলো মাঝেমধ্যে ধসে পড়ে। একটানা কদিন ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসে ও পাহাড়ের ছোটবড় গাছপালা ভেঙে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন সেনাবাহিনীর সদস্যরাই মাঠে নেমে সড়কগুলো সংস্কার করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখে। বর্ষাতে এটি রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনীর। এছাড়াও প্রাকৃতিক দুর্যোগে পাহাড়ের মানুষের কল্যাণে সেনাবাহিনী সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।
সড়কের বাস চালক মো.আলী আকবর বলেন, রুমা সড়কটি এতদিন যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তবে বর্তমানে সেনাবাহিনী দায়িত্ব পালন করায় সুন্দর হয়েছে। নিয়মিত সংস্কার কাজ চলমান থাকায় সড়কে চলাচলকারীদের ভোগান্তি অনেক কমেছে।
সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেজর মো. মুশফিকুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ে ভারী বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে আগের তুলনায়। কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
সেনাবাহিনীর ২৬ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের তত্ত্বাবধানে গত ৭ মাসে রুমা ও থানচি সড়কে প্রায় ২৭ কিলোমিটার সড়ক এবং পানি নিষ্কাশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা করা হয়েছে। সড়কগুলোতে প্রতিনিয়ত সংস্কার কাজ চলমান রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সমপ্রসারণে সেনাবাহিনী সড়কের বিভিন্নস্থানে কালভার্ট নির্মাণ করেছে। ফলে বান্দরবানের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।