রুমা ও থানচিতে যান চলাচল বন্ধ

কেএনএফের বাধা ।। আটকা পড়েছেন পর্যটক, ভোগান্তিতে জনসাধারণ

বান্দরবান প্রতিনিধি | সোমবার , ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ at ৮:০২ পূর্বাহ্ণ

বান্দরবানের রুমা ও থানচি উপজেলা সড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকিচিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশস্ত্র সদস্যরা সড়কে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পরিবহন শ্রমিকরা। গাড়ি বন্ধ রাখতে রুমায় পরিবহনের লাইনম্যান লুবপ্রু মারমাকে মারধর করেছেন তারা। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রুমা ও থানচি উপজেলার জনসাধারণ। উপজেলাগুলোতে আটকা পড়েছেন বেড়াতে আসা অনেক পর্যটকও। গতকাল রোববার সকালে এ ঘটনা ঘটে।

জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, রুমা উপজেলার রিজুকপাড়া এলাকায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি কেএনএফের সদস্যদের গুলিতে মারমা সম্প্রদায়ের যুবক উহ্লা চিং (৩৫) গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনার পরদিন রুমা বাজারে প্রতিবাদ কর্মসূচির পর বম জনগোষ্ঠীর ঘরবাড়িতে ভাঙচুর চালায় রিজুকপাড়ার মারমা জনগোষ্ঠীরা। এতে বম জনগোষ্ঠীর নেতা বোমাং সার্কেলের মৌজা প্রধান হেডম্যান থামখাম বমসহ কয়েকজন আহত হন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয় কেএনএফ। বম জনগোষ্ঠীর ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ৩ দিনের আল্টিমেটাম দেয়।

সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগে গতকাল সকাল থেকে রুমা ও থানচি উপজেলায় বিভিন্ন সড়কে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন কেএনএফ সদস্যরা। এ সময় রুমা বাসস্টেশন এলাকায় গাড়ি বন্ধ রাখতে পরিবহনের লাইনম্যান লুবপ্রু মারমাকে মারধর করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে বান্দরবান জেলা সদরে একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জেলা আন্তঃমোটর সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নূরুল আলম ও সুগন্ধা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অমল দাস বলেন, রোববার সকাল থেকেই রুমা ও থানচি উপজেলা সড়কে যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ সংঘাতে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা অনির্দিষ্টকালের জন্য সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। লুবপ্রু মারমা নামে এক পরিবহন শ্রমিককেও মারধর করা হয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে স্থানীয় জনসাধারণ ও বেড়াতে আসা পর্যটকরা। বিষয়টি প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহাজাহান বলেন, সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে রোববার সকাল থেকে। জনসাধারণের নিরাপত্তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সড়কের মধ্যখানে আটকে থাকা কয়েকটি যানবাহনের যাত্রীদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

থানচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ মামুন বলেন, যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবাসিক হোটেল, পুলিশ ও স্থানীয় ট্যুর গাইডদের মাধ্যমে আটকা পড়া পর্যটকদের তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় পর্যটকদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়া হবে। আলাপআলোচনার মাধ্যমে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে যানবাহন চলাচল চালু করতে কাজ করা হচ্ছে।

বিডিনিউজ জানায়, রুমাবান্দরবান রুটে হুমকির খবর পেয়ে অনেকে মোটরসাইকেল চালানোও বন্ধ করে দিয়েছেন। জরুরি প্রয়োজনে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু মোটরসাইকেল বান্দরবান এবং চিম্বুক ১২ মাইল এলাকা থেকে রুমা সদরঘাট এলাকা পর্যন্ত চলাচল করতে দেখা গেছে। কিন্তু পর্যটকবাহী কোনো গাড়ি চলছে না।

রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ মাহবুবুল হক বলেন, রুমা প্রশাসনের উদ্যোগে সকল পক্ষকে নিয়ে, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, পরিবহন মালিকশ্রমিক, বম সোশ্যাল কাউন্সিল ও মারমা ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিংয়ে বসছি। আশা করি, সমঝোতা হলে শিগগির গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুশীলনে মোস্তাফিজের মাথায় বলের আঘাত, পাঁচটি সেলাই
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় প্রশাসন কঠোর হলে সহযোগিতা দেবে মন্ত্রণালয় : শিক্ষামন্ত্রী