বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন
সামিমুন নাহার হুসনু
আমার অরণ্য আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমার পরিবেশ-প্রতিবেশ আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমার নির্মল বাতাস, স্বচ্ছ আলো-জল আমাকে ফিরিয়ে দাও। আমার সংস্কৃতি আমার চিত্ত বিনোদন আমার আবেগ আমার অনুভূতি আমাকে ফিরিয়ে দাও। চট্টলার সৌন্দর্য আমাকে ফিরিয়ে দাও।
চট্টগ্রামবাসীর নির্মল বাতাসে শ্বাস নেওয়া, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, সুস্থ বিনোদনের জন্য মায়াবী চত্বর হচ্ছে সিআরবি। প্রকৃতির কাছাকাছি নিজেকে মেলে ধরার অভ্যাস মানুষের স্বভাবজাত। আমরা যারা চট্টগ্রামে বসবাস করি তাদের এই চট্টগ্রামের সিআরবি’র ছায়া ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশে হচ্ছে চিত্ত বিনোদনের এক অন্যতম স্থান। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। এর ব্যতিক্রম হলে তার ক্রিয়া-কলাপ পরিবেশে ঘটায় নানা রকম পরিবর্তন। তাই রেলওয়ে ও ইউনাইটেডকে হাসপাতাল নির্মাণ বন্ধ করার জন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাদের মানবতা দরদী প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাচ্ছি।
হাসপাতাল গড়ার সিদ্ধান্ত জনগণ কখনোই মানতে পারে না
কোহিনুর শাকি
প্রকৃতি প্রেমীরা পাগল নয়, পাগল তারাই যারা প্রকৃতির বিরোধিতা করে। যারা প্রকৃতির সুর শুনতে পায় না। প্রতিদিন সিআরবির দুপাশে মনোরম দৃশ্য দেখে দেখে যখন অফিসে যায় আসি বুকের ভেতর চিন চিন ব্যথা জাগে যখন হাসপাতাল স্থাপনার বিলবোর্ড দেখি। ভাবি এ কি করে সম্ভব? সিআরবির মধ্যখানে দাঁড়িয়ে যে দিকেই তাকাই চোখ দুটো সবুজ প্রকৃতির অপরুপ সৌন্দর্য দেখে ধন্য হয়। মনটা জুড়িয়ে যায়। বীর চট্টলার প্রানকেন্দ্রে বিধাতার অপূর্ব শিল্পকে নষ্ট হতে মেনে নেয়া কোন বিবেকবান মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশে নানা উৎসব ছাড়াও সকাল সন্ধ্যা মানুষ আসে, বসে মন খুলে হাসে, নিজেকে খুঁজে পায় যা অন্য সব কিছু কে হার মানায়। সুতরাং যারা গাছ কেটে, ইমারত তৈরি করতে চাইছে তারা প্রকৃতিকে ভালবাসে না। সিআরবির সৌন্দর্যকে উপভোগও করতে জানে না। এটা এমন একটা উপহার আমাদের চট্টগ্রামবাসীর জন্য যা প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতাকে শুধু বাড়ায়। অতএব এমন ভুল সিদ্ধান্ত জনগণ কখনোই মানতে পারে না। যেখানে সবার প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার বিষয়টি জড়িত।
প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে সিআরবির বিকল্প নেই
মায়া কলিম
চট্টগ্রাম শহরটার প্রধানতম অঙিজেন সিলেন্ডার, আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী, আমাদের প্রাণ প্রকৃতির আধার এই সিআরবি।
প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ছোট বড় অসংখ্য পাহাড়, টিলার সমন্বয়ে গঠিত পাখির কলকাকলিমুখর, ছায়া সুনিবিড় সিআরবি এলাকা। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে প্রতিদিন সব বয়সের মানুষ সকালে জগিং করতে যায়, যে কোনো জায়গা হতে বন্ধুরা আসলে আড্ডাস্থল হয় সিআরবি।
এখানে রয়েছে শিরীষতলা নামে একটি প্রশস্ত মাঠ, যেখানে প্রতিবছর আমাদের ঐতিহ্যগত উৎসব পহেলা বৈশাখ, পহেলা ফাল্গুন, বিভিন্ন সংগঠনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষের সমবেত হওয়ার মতো খোলামেলা ছায়াঘেরা স্থান চট্টগ্রামে আর কোথাও নেই। তাই এই সিআরবি নষ্ট করার কোন অধিকার কারো নেই।
যদিও বলা হচ্ছে প্রস্তাবিত হসপিটাল হবে কিন্তু মনে রাখতে হবে আমাদের আন্দোলন শুধু গাছ কাটা নিয়ে নয়। শতবর্ষী গাছের জন্য এবং ঐতিহ্যগত কারণে সিআরবি এলাকাকে অবিকৃত রাখতে হবে। চট্টগ্রামের মতো জনবহুল একটি শহরে, সবুজ ছায়াতলে গিয়ে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে সিআরবির বিকল্প নেই।
ফুসফুস কাটলে রক্ত ঝরবে
মেহেরুন্নেছা মেরী
চট্টগ্রাম নগরীর ফুসফুস খ্যাত সিআরবির শিরীষ প্রাণ রক্ষায় আমি ও প্রতিবাদীদের সাথে সামিল হলাম। চট্টগ্রাম শহরের সিআরবি শিরীষতলা এলাকা ধ্বংস করে হাসপাতাল হোক তা আমি চাই না। ইট পাথরের খাঁচায় বন্দি মানুষ দুদণ্ড শান্তি ও স্বস্তি পায় শিরীষতলায় এসে। খুব প্রত্যুষে শত শত মানুষ শিরীষতলায় এসে ফ্রেশ অক্সিজেন গ্রহণ করে।
ডিসি হিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সংস্কৃতি কর্মীরা একমাত্র সিআরবি শিরীষতলায় এসে প্রাণের উচ্ছ্বাসে মিলিত হয়। ইউনাইটেড গ্রুপের শকুন দৃষ্টি চট্টগ্রামের মানুষদেরকে বিস্মিত করেছে। সিআরবিতে আমরা আর কোন হাসপাতাল চাই না। চট্টগ্রামে অনেক অনাবাদি খাস জমি পড়ে আছে, ইউনাইটেড গ্রুপকে ওসব জায়গা গুলোতে হাসপাতালের জন্য জায়গা ব্যবস্থা করে দিন।
রেলওয়ের কিছু অসাধু কর্মকর্তা কোন স্বার্থে এমন ধ্বংসাত্মক প্রজেক্ট অনুমোদন দিয়েছেন বোধগম্য নয়। অচিরেই এই প্রস্তাবনা বাতিল করে শতবর্ষী শিরীষ গাছগুলোর প্রাণ রক্ষা করা হোক। আমরা চাই নির্মল বাতাসে বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে- আবার বৈশাখ এলে শুনতে চাই-
“চলো না শিরীষ তলায় যাই
বেদনাগুলো উড়িয়ে দিই হাওয়ায় হাওয়ায়”।
পরিবেশকে ভালবাসতে শিখুন
স্বপন মজুমদার
আপনার পরিবেশ প্রেম কেন নেই? বা এই কাণ্ডজ্ঞান আপনার কেন হচ্ছে না? সেটা কি আপনার দোষ? না। আমি বলছি আপনি নির্দোষ। কারণ আপনি মানুষ না। মানুষের ন্যায় অন্যায় বোধ থাকে।
দোষ হচ্ছে আপনার বাবার, আপনার মায়ের, আপনাকে যে শিক্ষক শিক্ষিত করেছে। তারা সবাই ব্যর্থ। এই পৃথিবীতে গাছ এবং পরিবেশকে ভালবাসা মানুষ হওয়ার অন্যতম শর্ত।
আপনি জানেন না আপনার সন্তান আপনার বিপক্ষে, আপনি জানেন না আপনার স্ত্রী আপনার বিপক্ষে। শুধু নির্ভরশীলতার ভয়ে তারা কেউ কিছু বলছে না। সিআরবি’র গাছের পাতাকে টাকা মনে না করে – একবার আপনার কক্ষ থেকে বেরিয়ে বাইরে তাকান – দেখুন কী সুন্দর! দেখুন গাছগুলো আপনাকে দেখে প্রেমিকার মতো হাসছে। কোনো এক গাছের তলায় হয়তো আপনার এক ফোটা অশ্রু ঝরে পডেছিল। আপনার নিষ্ঠুর হৃদয় দেখে যে প্রেমিকা চলে গিয়েছিল-সেই শোকে কোন একটা গাছ বহুদিন ফুল দেয়নি।
আজ তাকে ফুল ফিরিয়ে দিন। একবার ভালবাসতে শিখুন। একবার মানুষ হয়ে বাঁচুন। ফুসফুস কাটলে রক্ত ঝরবে।
জাগ্রত করি অবিবেচক বিবেককে
রাসু বড়ুয়া
আমরা এমন এক জাতি- সবকিছু প্রতিষ্ঠা করতে হয় আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে। মাতৃভাষায় কথা বলার জন্য রক্তে রাঙাতে হয়েছে রাজপথ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি লাল সবুজে আচ্ছাদিত সোনার বাংলা। এমন সবুজাভ একটি দেশের আছে হাজারো ঐতিহ্য। যা একদিনে হয় নি। আবার হয়ও না। দীর্ঘ পরিক্রমায় গড়ে উঠা ঐতিহ্য বাঙালির শাশ্বত পরিচয় বহন করে। তেমনিভাবে গড়ে উঠেছে আজকের সিআরবি। আছে ছোটবড় শত বছর বয়সী বৃক্ষরাজি। যে বৃক্ষ ছায়া দেয়, স্নিগ্ধ হিমেল হাওয়ায় উষ্ণ মনে শীতল পরশ জাগায়। প্রাকৃতিকভাবে যোগান দেয় অক্সিজেন। আবার সংস্কৃতিপ্রেমীরা কিছু সময়ের জন্য পায় অপার আনন্দ। এমন নির্মল পরিবেশে পরম মমতায় আপামর জনসাধারণ বুকভরে নিঃশ্বাস নেয়। যার কোন প্রতিদান নেয় না। শুধু চায় একটু নিবিড় যতনে বেড়ে ওঠার পরিবেশ। এতেই তাদের সুখ, আমাদেরও সুখ।
এমন একটা সুখের জায়গায় ঐ হায়েনাদের চোখ পড়েছে। প্রাকৃতিকভাবে গড়া অঙিজেনের কারখানাকে করাতের আঘাতে ধূলিসাৎ করে বানাবে হাসপাতাল। লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দিবে কৃত্রিম অঙিজেন।
সেবার নামে প্রাকৃতিক নৈসর্গিকতাকে করবে ইটপাথরে মোড়া কসাইখানা। চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলে খ্যাত সিআরবির এই বৃক্ষগুলো যেখানে একপয়সাও নিচ্ছে না সেখানে আমাদের বিবেককে আমরা প্রশ্ন করে দেখি? জাগ্রত করি অবিবেচক বিবেককে। কী উদ্দেশ্যে, কার স্বার্থ হাসিলে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছি? শুভবুদ্ধির উদয় হোক।
দৃষ্টিনন্দন সিআরবি নষ্টের আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত
সালাম সৌরভ
সবুজ-শ্যামল সাগর নদী পাহাড় টিলা, প্রকৃতির মনোরম সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই জেলা, বারো আউলিয়ার পূণ্যভূমি চট্টলা। এই বন্দরনগরী চট্টগ্রাম কে নান্দনিক সৌন্দর্যের অলঙ্কিত করেছে বেশ কিছু ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান, যেমনটি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, ফয়’স লেক, ডিসি হিল, আগ্রাবাদ ডেবা পাহাড়তলী ডেবা ও আজকের সিআরবি। এই প্রকৃতির সৌন্দর্যের অলংকৃত স্থানের কোনোটি যদি লুন্ডিত অথবা অরক্ষিত হয়, তবে এই ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম হারাবে তার সৌন্দর্যের বিকাশ। এখানকার মানুষ হারাবে নির্মল বাতাস, অঙিজেন ও প্রকৃতির সাথে মানুষের বন্ধুত্ব।
চট্টগ্রাম মহানগরীর এই সিআরবির মতো দর্শনীয় স্থান গুলো চিরসবুজ প্রাকৃতিক, নির্মল বাতাস ও অক্সিজেন এখনো বাংলার মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অথচ এই সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মহানগরীর একমাত্র প্রকৃতির নৈসর্গ দৃষ্টিনন্দন সিআরবি নষ্টের আত্মঘাতী সিদ্ধান্তকে সৃজনশীল জনগণ ও নগরবাসী কখনো মেনে নিবে না। এই সিআরবি এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্য, এখানকার মানুষের রক্তের সাথে মিশে আছে, এইখানে বসে এখন বাংলা নববর্ষের বৈশাখী মেলা। একুশে বইমেলার উপযুক্ত স্থান ও বটে। এই সিআরবিতে যদি হাসপাতাল নির্মাণ হয় এই নিসর্গ প্রকৃতির সৌন্দর্যের শত শত বছরের বটবৃক্ষ নষ্ট হয়ে যাবে, উঁচু উঁচু টিলাগুলো হারাবে তার সৌন্দর্য বর্ধন, নষ্ট হয়ে যাবে পিওর অক্সিজেন তৈরির সতেজ পরিবেশ। এইখানে গজিয়ে উঠবে ব্যাঙের ছাতার মতো রাতারাতি শতশত দোকানপাট, বেড়ে যাবে গাড়ির ব্যস্ততা, অ্যাম্বুলেন্সের হরণ, আর মানুষের কোলাহল, শুরু হবে পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ,ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং আমরা চাই সবুজ বৃক্ষ ঘাসগালিচায় সতেজ নির্মল বাতাস। দূষণমুক্ত পরিবেশ।
প্রাণভরে শ্বাস নিতে চাই
মসিউর রহমান চৌধুরী
সিআরবি এলাকাটি সিডিএ কর্তৃক ২০০৮ সালে কালচারাল অ্যান্ড হেরিটেজ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে। যেহেতু সিআরবি ন্যাচারাল হেরিটেজ তাই আইন অনুয়াযী এর কোনো স্বরূপ পরির্বতন করা যাবে না। চট্টগ্রামে হাসপাতাল প্রয়োজন আছে। তবে সিআরবিতে নয়। চট্টগ্রাম শহরের মাঝখানে এরকম পাহাড় ও গাছগাছালি সহ প্রকৃতির দান দৃষ্টিনন্দন জায়গা আরেকটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। যেখানে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ, বলী খেলা, বসন্ত উৎসবসহ নানা প্রকার দেশীয় উৎসবে বাঙালির সংস্কৃতির মিলন মেলায় পরিণত হয় এলাকাটি। মূলত সিআরবির পুরো এলাকাটি সাংস্কৃতিক ও সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র বলা চলে। হাসপাতাল তৈরীর সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হলে পাহাড় ও শতবর্ষি গাছগুলো কেটে আগামী ৫০ বছরের অধিক সময় জায়গাটিতে হাসপাতাল ও বিভিন্ন স্থাপনা তৈরী হবে। তখন চাইলেও সিদ্ধান্ত কোনভাবেই পরিবর্তন করা সম্ভব হবে না। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি একটি পাহাড় কাটা যায় কিন্তু নতুন একটি পাহাড় কখনো গড়া সম্ভব নয়।
আমরা আশা করি প্রকৃতি প্রেমিক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও চাইবেন শতবর্ষের সাক্ষী, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের অক্সিজেনের জোগানদায়ী মাতৃসমা শিরিষ গাছগুলো আরো হাজার বছর বেঁচে থাক ভালোবাসায়, আদর আর যত্নে। খেলা করুক রৌদ্রছায়া শিরিষ গাছগুলোর ফাঁকে ফাঁকে। পাখিরা মনের সুখে বিচরণ করুক আর মনের আনন্দে গান করুক। চট্টগ্রামের মানুষ প্রাণভরে শ্বাস নিক সিআরবির এই অঙিজেন খনিতে।
সিআরবিতে কোনো হাসপাতাল নয়
ডা. আর কে রুবেল
প্রকৃতিকে ধ্বংস করে কোনো হাসপাতাল কিংবা স্থাপনা সিআরবিতে হতে পারে না। বর্তমানে সংস্কৃতির বাতিঘর খ্যাত সিআরবি নতুন প্রজন্মের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে ও ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে গত কয়েকবছর যাবত সিআরবিতে বাংলা নববর্ষ পালন করে আসছে চট্টগ্রামের সংস্কৃতিমনা আপামর জনসাধারণ। প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বলিখেলা, হাডুডু, কানামাছি, মোরগের লড়াইসহ অনেক খেলাধূলা নতুন প্রজন্মকে পরিচয় করার জন্যও সিআরবি ১লা বৈশাখ উদযাপন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে যা অনস্বীকার্য। প্রাকৃতিক সবুজ পরিবেশে মুক্ত হাওয়া, অক্সিজেন দানকারী সিআরবি চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র বা ফুসফুস হিসেবে কাজ করছে। এই পরিবেশ ধ্বংস করার জন্য একটি গোষ্ঠীর চোখ পড়েছে ঠিকই। কিন্তু চট্টগ্রামবাসী এটা কিছুতেই বাস্তবায়ন করতে দিবে না। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ও জনচাহিদার ক্ষেত্রে আধুনিক হাসপাতালের দরকার আছে। চট্টগ্রামে অনেক সরকারি পরিত্যক্ত জায়গা আছে যেখানে অনেক বড় বড় হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ বানানো সম্ভব। পরিবেশের ক্ষতি করে শতবর্ষী গাছ কেটে মানুষের ন্যূনতম বিনোদনে ও শ্বাস নেওয়ার পরিবেশ নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। যেখানে সারাবিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে মাতামাতি করে পরিবেশ কিভাবে রক্ষা করা যায় তার জন্য বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম করে কর্মপরিধি নির্ধারণ করছে সেখানে সিআরবির মত জায়গায় পরিবেশের ক্ষতি করে হাসপাতাল নির্মাণ কোনোভাবে যৌক্তিক হতে পারে না। তাই সরকারের কাছে জোরালো আবেদন পূর্ব সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে গণদাবি মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ বলে আমি মনে করি।
প্রকৃতির স্বার্থে শিরিষতলা অক্ষত চাই
শিউলী নাথ
“সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি”- দ্বিজেন্দ্র লাল রায়ের এই বাণীর মাঝেই আমরা জন্মভূমির চিরন্তন রূপটি দেখতে পাই। কোথাও পাহাড় ঘেরা বনভূমি, কোথাও সমুদ্রতট, কোথাও বা দীঘল পল্লবিত বৃক্ষরাজির মাঝে আলো ছায়ার মাখামাখি। প্রকৃতি তার আপন হাতে সকল সৌন্দর্যের পশরা সাজিয়েছেন। প্রকৃতিই যেন আমাদের মা।
আজ প্রকৃতি আমাদের উজাড় করে দিয়েছেন বলে আমরা এর মূল্য দিতে পারছিনা। দিনের পর দিন পাহাড় কাটছি, বন উজাড় করছি, নদীতটের বালু উত্তোলন করতে করতে পরিবেশকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে দিচ্ছি। শুধু ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধির জন্য প্রকৃতি মাকে কষ্ট দিয়ে যাচ্ছি। যে জিনিস আমি সৃষ্টি করিনি, তাকে ধ্বংস করার অধিকার আমার নেই।
আজ আমরা আবার পাঁয়তারা করছি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ধ্বংস করার। বর্তমানে প্রকৃতির রুষ্টতার ভয়াবহ চিত্র আমাদের সবার সামনে জাজ্বল্যমান। প্রকৃতি চাইলে যেমন উজাড় করে দিতে পারে, তেমনি প্রাণ নিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। ভুলে গেলে চলবেনা- আমাদের এই জন্মভূমি তথা প্রিয় নগরী প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের দান যা পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে অনেক অনেক মহিমামণ্ডিত। অতএব প্রকৃতি প্রদত্ত জিনিস গুলোতে হস্তক্ষেপ করার আগে প্রকৃতির সন্তানদের কথা সবার আগে ভাবা উচিত। ব্যক্তিস্বার্থ নয়, প্রকৃতির স্বার্থে শিরিষতলা অক্ষত চাই।
সিআরবি বাঁচাই, ঘাতক হটাই
বিভা ইন্দু
আল্লাহ প্রদত্ত অক্সিজেনের ভান্ডার ধ্বংস করে সিআরবিতে কোন হাসপাতাল নির্মাণ হবে না। এতোগুলো গাছ থেকে ফ্রিতে পাওয়া অক্সিজেন সর্বস্তরের মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে বছরের পর বছর। যাদের সামর্থ্য নেই ইউনাইটেড-এ গিয়ে চিকিৎসা নেবার, তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য সিআরবির সবুজ সাগরে এসে ফ্রি তে অক্সিজেন গ্রহণ করেন। বিত্তবানদের খেয়ালী আচরণকে প্রাধান্য দেয়া মোটেও উচিত হবে না। কোন সুশিক্ষিত বিবেকবান সবুজ ধ্বংসের মতো নৈরাজ্যের কাজ করতে পারে না। আসুন সিআরবি’কে বাঁচাই, সবুজ ধ্বংসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলি। কারণ ইতিহাস ঐতিহ্যের মহাকালিক সাক্ষী চট্টগ্রাম এর আপামর জনগণের প্রাকৃতিক ফুসফুস সিআরবি। আসুন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের মানুষ বোধ ও বুদ্ধির সমন্বয় ঘটিয়ে একটি সুপরিকল্পিত নাগরিক কমিটি গঠনে তৎপর হই। রুখে দিই এমন আত্মঘাতী সবুজবিধ্বংসী ষড়যন্ত্র। ‘সবুজ বাঁচাও ঘাতক হটাও’ এই শ্লোগানে প্রতিদিন মুখর থাকুক -সি আর বি’র সবুজ প্রাঙ্গণ। রেলের বড় কর্তার এতো লোলুপতা কেন? এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ গোঁয়ার্তুমি দেখানোর আগে চিন্তা করা উচিত ছিলো…চট্টগ্রাম হলো বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক বিপ্লবী মাস্টার দা সূর্য সেন-এর সূতিকাগার। তার ঔদ্ধত্যকে রুখে দিতে শ্লোগান তুলুন—-‘ঘাতক হটাও, সি আর বি বাঁচাও।
সিআরবি প্রাকৃতিক সুরক্ষা বেষ্টনী
সুমন চৌধুরী
শতবর্ষী গাছগাছালি, ছোট-বড় পাহাড়-টিলায় পরিপূর্ণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সাজানো বন্দরনগরীর সিআরবি। নগরবাসীর কাছে সিআরবি ‘ফুসফুস’ খ্যাত। এখানে আছে ব্রিটিশ আমলের স্থাপনা, যার রয়েছে স্থাপত্য ও সাংস্কৃতিক মূল্য। প্রকৃতির অপরূপ সাজে সাজানো এ জায়গাটিতে হাসপাতাল বা অন্যান্য বাণিজ্যিক স্থাপনা হলে এখান থেকে বিতাড়িত ও বিলুপ্ত হবে প্রকৃতির সাথে মিশে থাকা বিভিন্ন প্রাণীকুল। কিন্তু এখানে হাসপাতাল নির্মাণের নামে সেই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এই প্রকৃতির সবুজ অরণ্যে যদি একবার বাণিজ্যিক আগ্রাসন শুরু হয় তাহলে সেটা আর আটকানো যাবে না। চট্টগ্রাম নগরীতে রেলওয়ের অনেক জমি পরিত্যক্ত ও বেদখল অবস্থায় পড়ে আছে। সেখানে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণ হোক এটা চট্টগ্রামবাসীর প্রত্যাশা। সিআরবিতে শুধু হাসপাতালই নয়, কোনো ধরনের স্থাপনাই হওয়া উচিত হবে না। বুক ভরে বাতাস নিতে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নগরবাসীকে সুরক্ষা দিতে সিআরবি এলাকার পাহাড়সহ নগরীর চারদিকে ঘিরে থাকা পাহাড়গুলোকে রক্ষা করতে হবে। ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা চলমান সমস্যাটি দৃষ্টিগোচরে এসেছে। বীর চট্টলাবাসীর বিশ্বাস বঙ্গবন্ধু তনয়া এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিবেন এবং জরাজীর্ণ অবস্থায় থাকা সিআরবির পুরাতন হাসপাতালটি আধুনিকায়নের মাধ্যমে সর্বসাধারণের জন্য সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
সিআরবি অক্ষত থাকুক
সেলিম নাশিন
মাত্র পাঁচ মাস আগে সিআরবি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ডক্যুমেন্টারী নির্মাণ করেছিলাম। তখনো বুঝতে পারিনি যে চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক বিকাশের এই স্থানটিতে শকুনের দৃষ্টি পড়েছে।
চট্টল সংস্কৃতির ঐতিহ্যের ধারক এই স্থান। মুক্ত সংস্কৃতি চর্চ্চার সব স্থানই তো একে একে বেহাত হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের অবহেলিত সংস্কৃতি কর্মীদের মুক্ত চর্চ্চার এই স্থানটিও শকুনদের শ্যেন দৃষ্টি থেকে রেহায় পাবে না?
সিআরবিতে কেন নতুন হাসপাতাল? রেলওয়ে হাসপাতাল তো আছেই ওখানে, সেটিকে সংস্কার করে সেবার যোগ্য করে তোলা হোক। আমি মনে করি চট্টগ্রাম শহরেই আর নতুন কোন হাসপাতালের প্রয়োজন নেই, যেগুলো আছে সেগুলোকেই সেবার যোগ্য করা হোক। এখানে যে হাসপাতাল হবে তাতে সাধারণ মানুষের সহজ প্রবেশাধিকার কতটুকু? হাসপাতালের নামে অবৈধ সম্পদের মালিকদের জন্য পাঁচ তারকা হোটেল হোক সেটা চট্টগ্রামের সংস্কৃতি কর্মী, আম জনতা কেউই চায় না। সিআরবি তার স্বকীয়তা বজায় রেখে ইতিহাস ঐতিহ্য ধারণ করে অক্ষত থাকুক প্রাণের শিরিষতলা।
চট্টগ্রামের ফুসফুস ‘সিআরবি’ রক্ষা করতে হবে
রিসাত তানভীর
শতবর্ষী গাছ কাটা থেকে ‘সিআরবি’-কে রক্ষা করতেই হবে- এ স্লোগান এখন চট্টগ্রামবাসীর অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয়। চট্টগ্রাম নগরীর ‘ফুসফুসে’ গাছ কেটে হাসপাতাল করলে ধ্বংস হবে পাহাড়-টিলা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। যেটা কখনোই হতে দেওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম শহরের সিআরবির শিরীষতলা এলাকায় হাসপাতাল না করে অন্যকোন জায়গা নির্বাচন করা হোক। পরিবেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। যে গাছ দিয়ে পরিবেশ ঠিকে আছে সে গাছ কেটে যদি হাসপাতাল বানানো হয় তাহলে মানুষ বাঁচবে কীভাবে? যদি সিআরবি ঠিকে থাকে তাহলে কীভাবে ইট পাথরের খাঁচায় বন্দি মানুষ দু’দণ্ড সময় কাটাবে কিংবা বুকভরে নিঃশ্বাস নেবে এমন উন্মুক্ত পরিসরে? ব্রিটিশ আমলের চুন-সুরকির সিআরবি ভবনকে ঘিরে শতবর্ষী গাছগাছালি, পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা, ছোট-বড় পাহাড়-টিলা আর নজরকাড়া বাংলোগুলো ঘিরে মন জুড়ানো এক প্রাকৃতিক পরিবেশ রয়েছে সিআরবিতে। নগরবাসী স্থানটিকে চট্টগ্রামের ‘ফুসফুস’ বলে থাকেন। কিন্তু এখানে বড়সড় একটি হাসপাতাল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু করে সেই ‘ফুসফুস’ ধ্বংসের উদ্যোগ নিয়েছে যা একেবারেই কাম্য নই। এই সময়ে যদি আমরা পরিবেশ রক্ষার্থে সচেতন না হয় তাহলে আমাদের অনেক বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।