পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর বাকি এক বা দুইদিন। নগরের যান্ত্রিকতা ছেড়ে গ্রামীণ জীবনে বাবা–মা, আত্মীয়–স্বজনের সাথে ঈদ কাটাতে ব্যস্ত সবাই। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নগর ছাড়ছে। কেউ বাসে, কেউ ট্রেনে যে যেভাবে পারছে বাড়ি ফিরছেন। জীবিকার তাগিদে শহরে থাকলেও নাড়ির টানে ঈদে বাড়ি না গিয়ে কেউ থাকতে পারেন না। ইতোমধ্যে স্কুল–কলেজ বন্ধ হয়েছে, সরকারি ছুটি শুরু হয়েছে, অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোও প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। যার কারণে শহর ছাড়তে ব্যস্ত সবাই। কিন্তু রাস্তার পাশে ফুটপাতে, রেললাইনে এবং ভাসমান যারা রয়েছেন তাদের বাড়ি ফেরার কোনো তাড়া নেই। নেই নতুন পোশাক কেনার ব্যস্ততা। কোনোমতে দুবেলা খেয়েপরে দিন কাটে তাদের। রাস্তার পাশেই কাটবে তাদের ঈদ। অবশ্য তাদের জীবনে ঈদ বলতে কিছু নেইও। অন্য সব দিনের মতোই ঈদ কাটবে তাদের। কেউ দিলে মুখে খাবার জুটবে, নইলে না খেয়েই থাকবে অনেকে।
চট্টগ্রাম শহরে এরকম অন্তত ১০ হাজার মানুষ রয়েছে যাদের কোনো বাড়িঘর নেই। ঈদে তাদের বাড়ি যাওয়ার তাড়া নেই। যারা ট্রেনে–বাসে গ্রামে ফিরেন ওদের দেখে যেন তারা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। এসব অসহায় মানুষদের কেউ দীর্ঘদিন ভিটেমাটি ছেড়ে শহরে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকের জন্মই ফুটপাতে। বছরের পর বছর ধরে সড়কে তাদের জীবন কাটছে। নগরের ষোলশহর রেল স্টেশন, বটতলী রেল স্টেশন এলাকা, কাজীর দেউড়ি, নিউ মার্কেট এলাকা, আন্দরকিল্লা, জামালখান, চকবাজার, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, সিআরবি ও আগ্রাবাদসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য ভাসমান মানুষ রয়েছে। নগরের কাজীর দেউড়ি সার্কিট হাউজের সামনে রাস্তার থাকেন নাছিমা বেগম। দীর্ঘ ১০ বছর ধরে তার জীবন এখানে কাটছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১০ বছর আগে বাড়ি ছেড়েছি। এরপর মা–বাবাও মারা যায়। ভিটেমাটি যা আছে, ভাই একটা আছে সে দখল করে নিয়েছে। বিয়ে করেছি এক ভবঘুরে যুবককে। সেও থাকে ফুটপাতে। মাঝে মাঝে কোথায় হারিয়ে যায়, আবার আসে। মানুষ যা দেয় তা খেয়ে কোনোমতে দিন কাটছে এই আর কি।
শুধু নাছিমা বেগমই নয়, নাছিমার মতো অনেকেই এরকম ফুটপাতে জীবন কাটান। তাদের কাছে ঈদ আনন্দ বলতে আলাদা কিছু নাই। তাদের কাছে ঈদের দিন মানে অন্য আট–দশ দিনের মতোই একটি সাধারণ দিন। জামালখান এলাকায় কথা হয় ষাটোর্ধ বৃদ্ধ কাশেম মিয়ার সঙ্গে। তিনি ভিক্ষা করে পেট চালান। ৬–৭ বছর আগে ছেলেরা বাড়ি থেকে বের দিলে শহরে এসে ভাসমান জীবন শুরু করেন। কেউ আর খোঁজ নেয় না।
ঈদের দিন এসব মানুষদের খাবার বিতরণ করার কাজ করে কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। তবে অধিকাংশই গ্রামে চলে যাওয়ায় তাদের কার্যক্রম পুরোদমে করতে পারে না। সাবেক এক ভলেন্টিয়ার জানান, আমরা যারা শহরে থাকতাম তারা পথশিশু, ফুটপাতে থাকা মানুষদের খাবার দিতাম। অন্তত চেষ্টা করতাম ঈদের দিনে তাদের মুখে খাবার তুলে দিতে। এখন কী হয় জানি না।