রাসেলস ভাইপার : ফোন ধরতে ধরতে গলদঘর্ম বনবিভাগ

| বুধবার , ২৬ জুন, ২০২৪ at ১০:০৭ পূর্বাহ্ণ

রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে দেশজুড়ে আতঙ্ক আর গুজবের মধ্যে বন অধিদপ্তরের পাঁচটি হটলাইন নম্বরে ঘণ্টায় গড়ে ২০০ ফোন আসছে দেশবিদেশ থেকে। প্রত্যন্ত গ্রামের কেউ সাপ দেখে ফোন করে সহায়তা চাইছেন। কেউ কেউ বন কর্মকর্তাদের ভাবছেন সাপুড়ে। আবার বিদেশ থেকে প্রবাসীদের কেউ কেউ পরিবারের সদস্যদের জন্য পরামর্শ চাইছেন। খবর বিডিনিউজের।

বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কর্মীদের এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে গত বৃহস্পতিবার থেকে। এ ইউনিটের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক বলেন, বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফোন আসার চাপ শুরু হয়। প্রতিটা নম্বরে ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৪০টা কল এসেছে। অনেকগুলো নম্বর ওয়েটিংয়ে ছিল। তিনি জানান, আগে তারা সাপের বিষয়ে সপ্তাহে বড়জোর দুয়েকটা ফোন পেতেন। সব মিলিয়ে দিনে ফোন আসত পাঁচ থেকে সাতটি। এখন হটলাইনের সবগুলো নম্বর সামাল দিতে হিমশি খেতে হচ্ছে। অসীম মল্লিকের ধারণা, কোনোভাবে তাদের নম্বরগুলো ফেসবুকের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ হয়ত লিখছে, যেখানেই সাপ দেখবেন, এই নম্বরে ফোন দেবেন। এভাবেই নম্বরগুলো ছড়িয়ে পড়ছে। হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে কথা হয়েছে আমাদের। সাপ মারার ছবি পাঠিয়েছে অনেকে, জীবিত সাপের ছবিও পাঠিয়েছে। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটা শুধু রাসেলস ভাইপার।

এ বন্যপ্রাণী পরিদর্শক বলেন, যত সাপ দেশে আছে, তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই নির্বিষ। গত কয়েকদিনে প্রচুর ‘দাগি ঘরগিন্নি’ সাপ মারা পড়ছে। হলুদকালো ছোপের কারণে অনেকে এটাকে রাসেলস ভাইপারের বাচ্চা মনে করছেন। ঢোরা সাপের বাচ্চাগুলাকেও অনেকে রাসেলস ভাইপার মনে করছেন। এই সাপগুলো সচরাচর মানুষের কাছাকাছি থাকে। আমরা শুধু ফরিদপুরে রাসেলস ভাইপার পেয়েছি, পদ্মার চরে এটাতো স্বাভাবিক। কুমিল্লা থেকে অনেকে অভিযোগ পাঠিয়েছিল, পরে দেখলাম এটা ঘরগিন্নি সাপ। জামালপুর থেকে পাঠিয়েছে, সেটা দেখলাম চেলা সাপ।

অসীম মল্লিক বলেন, সোশাল মিডিয়ায় এ সাপ নিয়ে যেসব ভিডিও ঘুরপাক খাচ্ছে, তার বেশিরভাগই ভারতের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানাভাবে ছড়িয়ে সেগুলো আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। আমরা মানুষকে বোঝাচ্ছি, বেশিরভাগই নির্বিষ সাপ। ছবি পাঠিয়ে দেখিয়েছি কোনটা রাসেলস ভাইপার। অনেকে আগে অনেক সাপ দেখছে, কিন্তু তা নিয়ে ভয় ছিল না। রাসেলস ভাইপার নিয়ে আতঙ্ক শুরুর পর তারাও সব সাপকে রাসেলস ভাইপার ভাবছেন।

বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসীম মল্লিক জানান, তারা দেশের বাইরে থেকেও অনেক ফোন পাচ্ছেন। তারা জানতে চাইছেন দেশে থাকা তাদের বাবামায়ের জন্য করণীয় কী। ‘অনেকে ফোন দিয়ে অপ্রাসঙ্গিক অনেক কথা বলে। যেসব আলোচনা করার কথা না, সেসব আলোচনা করে। অনেকে বলে, ‘আপনি তো সাপুড়ে! আসেন, সাপ ধরতে।’ তখন বলি, যদি সাপ ধরার প্রয়োজন হয় তাহলে অবশ্যই যাব। আমরা তাদের বোঝাই, কখনো যদি সাপে কাটে, তাহলে ওঝার কাছে না গিয়ে উপজেলা মেডিকেল বা জেলা মেডিকেলে যেতে হবে দেরি না করে। অ্যান্টিভেনম আছে হাপতালগুলোতে। আমরা তাদেরকে আশ্বস্ত করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসবার আগে কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা
পরবর্তী নিবন্ধধান-চাল সংগ্রহে আগ্রহ বাড়ছে কৃষক ও মিল মালিকদের