রাষ্ট্র সংস্কারের পরই দেশে জাতীয় নির্বাচন দেবেন বলেন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, অন্যান্য সংস্কারের পাশাপাশি ভেঙে পড়া নির্বাচন ব্যবস্থারও সংস্কার কাজ চলছে।
তিনি গতকাল শুক্রবার বিকাল ৫টায় সার্কিট হাউসে গণমাধ্যমের সাথে আনুষ্ঠানিক বিফ্রিংকালে এসব কথা বলেন।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, একটি নাজুক পরিস্থিতিতে সরকার কাজ শুরু করেছে। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। এখন রাষ্ট্র সংস্কারের পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, রাজনৈতিক দলগুলোর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি ও ভোটার হালনাগাদের কাজ করবে সরকার, যাতে মানুষ ভোট দিতে পারে। তিনি বলেন, এরপরই আমরা নির্বাচন দেবো, যাতে দেশের সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। উপদেষ্টা বলেন, দেশের ভোটিং কালচার নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। আমরা ভোটিং কালচার নিশ্চিত করতে চাই।
নির্বাচন নিয়ে সার্বিকভাবে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, একটি সরকারের পতন হয়েছে। সেই সরকারের অবশিষ্ট সময় পূরণের জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বসানো হয়েছে। তার চেয়ে বড় কথা রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গ। সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে রাষ্ট্র নড়বড়ই থেকে যাবে। তাই সরকার সংস্কারে গভীরভাবে কাজ করছে।
গত ১৭ অক্টোবর রাতে এক টকশোতে ২০২৫ সালে নির্বাচন হবে বলে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের করা মন্তব্য নাকচ দিয়েছেন। একই সাথে নির্বাচন নিয়ে সেনা প্রধানের মন্তব্যও সরকারের সিদ্ধান্ত নয় বলে জানান তিনি। উপদেষ্টাদের ক্ষমতাপ্রীতির অভিযোগ তুলে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, অনেক নেতা প্রকাশ্যে বলছে, উপদেষ্টাদের মধ্যে ক্ষমতার লোভ ঢুকে গেছে। তারা ক্ষমতা ছাড়তে চাইবে না। এটা তাদের ভুল ধারণা। আমাদের কোনো ধরনের ক্ষমতাপ্রীতি বা লোভ নেই। আমরা এসেছি অস্থায়ীভাবে, দেশ সংস্কারের জন্য আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আমাদের কাজ শেষ হলে কাউকে বলতে হবে না। নির্বাচন দিয়ে, নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আমরা চলে যাবো।
তিনি বলেন, আমরা শাসন করতে আসিনি। আমরা জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এসেছি। তিনি মনে করেন, এই সরকার ব্যর্থ হলে দেশে আবারও দুর্যোগ নেমে আসবে। দেশের নির্মিত মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়ম–দুর্নীতির প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মডেল মসজিদগুলো নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে এটা ঠিক। এরকম অনেক প্রমাণ ইতিমধ্যে আমরা পেয়েছি। এমনকি এক মসজিদ পরিদর্শনকালের আমি দেখেছি ফ্লোরে ফাটল। অভিযোগ ও প্রাপ্ত প্রমাণ হাতে নিয়ে আমরা তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং শিগগিরই কাজ শুরু হবে। এসময় এসব মডেল মসজিদ নির্মাণে সৌদি আরব কোনো টাকা দেয়নি বলে জানান তিনি।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিগত সময়ে দেশের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিক ভিত্তি থেকে সরে গিয়েছিলো। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোরও সংস্কার করা হবে। জাহাজে করে হজযাত্রা প্রসঙ্গে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জাহাজে করে হজ্বযাত্রী পাঠানোর বিষয়ে সরকার নীতিগত সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। এই বিষয়ে সৌদি আরবসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে। তবে তা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য আগামী বছর বা ২০২৫ সালে জাহাজে করে হজ্বযাত্রী পাঠানো সম্ভব নয়, ২০২৬ সাল থেকেই এটা শুরু হবে।
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন দুই দিনের কক্সবাজার সফরে রয়েছেন। তিনি শুক্রবার সকালের ঢাকা থেকে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখান থেকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে নবনির্মিত কক্সবাজার কেন্দ্রীয় মডেল মসজিদ উদ্বোধন করে। এরপর বিকাল ৩টায় কক্সবাজার বায়তুশ শরফ স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন। বিকাল ৪টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়, বিকাল ৫টায় সার্কিট হাউসে গণমাধ্যমের সাথে আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং করেন। সন্ধ্যায় রামুর চাকমারকুল বড় মাদ্রাসা পরিদর্শন করে প্রথম দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত করেন। আজ শনিবার সফরের দ্বিতীয় দিনে চকরিয়া–পেকুয়ায় একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেবেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
