রাষ্ট্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে বাস্তুতন্ত্রও নিরাপদ থাকবে : তারেক রহমান

| রবিবার , ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৪:৫৮ পূর্বাহ্ণ

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলে পশুপাখিবন্যপ্রাণী তথা বাস্তুতন্ত্রের অধিকারও নিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন তারেক রহমান। গতকাল শনিবার বিকালে এক আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের সঙ্গে মানুষের অধিকারের সম্পর্কটা যেমন, বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে পশুপাখি এবং বন্যপ্রাণীর অধিকারের সম্পর্কটা তেমন। রাষ্ট্র রাজনীতিতে গণতন্ত্র এবং শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠিত থাকলে বাস্তবিকভাবেই বাস্তুতন্ত্র নিরাপদ থাকে।

তারেক রহমান বলেন, দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে একজন মানুষ একজন নাগরিক হিসেবে সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকার হারানোর কারণে আমাদের অনেকের মনে হয়তো এক ধরনের অসহিষ্ণুতার জন্ম নিয়েছে। এই অসহিষ্ণুতা কাটিয়ে একজন মানবিক মানুষ হয়ে ওঠার জন্য মনুষত্ব অর্জন আর পশুত্ব বর্জনই হোক আমাদের অঙ্গীকার। মানুষ হিসাবে আমরা রাষ্ট্র এবং সমাজে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে, অন্য সকল প্রাণীর অধিকার সংরক্ষণের ব্যাপারেও আমরা আরো সতর্ক ও যত্নবান থাকব। খবর বিডিনিউজের।

বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’ এর উদ্যোগে দিনব্যাপী ‘প্রাণী ও প্রাণের মেলা’ অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে বিকালে এ আলোচনা সভা হয়। এই মেলায় সৌখিন প্রাণীপ্রেমীরা তাদের পোষা পাখিপশু নিয়ে আসেন। ‘দেশ হোক সকল প্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল’ এই স্লোগানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রাণী প্রেমী শাহিনা খান জামান ও সদ্য প্রয়াত স্কুল শিক্ষক আকাশ কলি দাসকে সন্মাননা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে তারেক রহমান বলেন, প্রাণী কল্যাণ আইন ২০১৯, বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন, জীব বৈচিত্র্য রক্ষা আইন, পরিবেশ উন্নয়ন আইন, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট আইন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দেশের অনেকগুলো আইন রয়েছে। ইনশাআল্লাহ জনগণের রায় বিএনপি রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পেলে পশুপাখি বন্যপ্রাণী তথা বাস্তুতন্ত্রের নিরাপত্তার জন্য এই আইনগুলোকে আমরা সময়োপযোগী করব। এই আইনের অনেকগুলো পরিবর্তন প্রয়োজন আছে সেগুলোকে ইনশআল্লাহ আমরা করব।

জীব বৈচিত্র্যের হুমকির বিষয়টি তুলে ধরে তারেক বলেন, যতটুকু জেনেছি এর মধ্যে প্রায় ৩৯০টি প্রজাতি কিন্তু বিলুপ্তির মুখে চলে গিয়েছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয় বিশ্বের আরো অনেক দেশেই কিন্তু মানুষের সৃষ্টি পরিস্থিতির কারণে অনেক প্রজাতির অস্তিত্ব হুমকি সম্মুখীন। আমার যতটুকু মনে আছে যতটুকু দেখেছি, ৮০’র দশকে বাংলাদেশে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল খুব সম্ভবত ৪’শ এরও বেশি, প্রায় ৫’শরও কাছাকাছি। সর্বশেষ জরিপে যতটুকু আমার ধারণা আছে সেই বাঘের সংখ্যা কমতে কমতে কমতে এখন একশ’র কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। হাতির সংখ্যাও এখন কমে ২০০ এর নিচে চলে এসেছে বোধয় খুব সম্ভব বা রাউন্ড ২০০ এর মত হবে। ঠিক এভাবে বাংলাদেশের আরো অনেক প্রাণী কিন্তু ধীরে ধীরে যুক্ত হচ্ছে এই বিলুপ্ত প্রজাতির তালিকায়।

এর কারণ হিসেবে তিনি জনসংখ্যা বৃদ্ধি, জলবায়ুর পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নগরায়ন, নদী, জলভূমি ভরাট, বন উজারসহ নানা কারণের কথা তুলে ধরে বলেন, একদিকে জীব বৈচিত্র্য যেরকম হুমকির মুখে পড়ছে, ঠিক একইভাবে বন্যপ্রাণী পাচারের ঘটনাও কিন্তু বেশ উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এ সকল কারণেই বন্যপ্রাণী, জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণীদের যে আবাসস্থল এগুলো কিন্তু অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে।

সংগঠনের আহ্বায়ক আদনান আজাদের সভাপতিত্বে এবং মুস্তাকিম বিল্লাহ ও লোভা আহমেদের যৌথ সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কোষাধ্যক্ষ রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, কবি আবদুল হাই শিকদার, শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল লতিফ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন তুহিন, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল খান, চিত্র নায়িকা আইরিন সুলতানা, জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর আতিকুর রহমান মিঠু, প্রাণীপ্রেমী আবু হানিফ, রহিমা আনজুম পুস্প, দিপান্বিতা রিদি, আবুল হাসনাইন মঞ্জুর মোর্শেদ ইমন, অ্যানিম্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান রুমন, কেন্দ্রীয় নেতা নিশাত তামান্না জামান, বাপ্পী খান বক্তব্য রাখেন। সভায় তারেক রহমানের সহধর্মিনী জুবাইদা রহমানের বড় বোন প্রাণীপ্রেমী শাহিনা খান জামানের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শাম্মী আখতার।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকার ও উপদেষ্টারা মাহফুজদের যথেচ্ছ ব্যবহার করে এখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে : নাহিদ
পরবর্তী নিবন্ধমহেশখালী-মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর মাছ রপ্তানি বাড়াবে