রাষ্ট্রের উচিৎ নারীদের সচেতন করা

প্রতিমা দাশ | বুধবার , ১০ মার্চ, ২০২১ at ৮:০৬ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবছর ঘটা করে নারী দিবস আসে আবার নিঃশব্দে হারিয়ে যায়, নারীদের অধিকার আদায়ে কতো কি পরিকল্পনা চলে, পত্রপত্রিকায় মিডিয়ায় নারী দিবস ঘিরে নানা প্রতিবেদন আয়োজনে ভরে যায়। অথচ আমাদের দেশে এখন জাতীয় সমস্যা হচ্ছে নারী ধর্ষণ আর গৃহে নারী নির্যাতন। যেখানে নারীরা প্রতিনিয়ত সামাজিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে, সেটা নিয়েই আমরা বেশী নির্লিপ্ত । নিয়মিত আমরা পত্রিকা পড়ি কিন্তু ভয়ানক খবর গুলো আমাদের অগোচরে হারিয়ে যায়। কতো নারী ধর্ষিত হলো, কতো নারী নির্যাতিত হলো, তারা বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে কোনো কিছুই আমাদের যায় আসে না।
দেশে নারী শিক্ষার হার যতোই বাড়ুক, তারপরও নারী নির্যাতনের হার কোনভাবেই কমছে না। সরকারি পরিসংখ্যান তথ্য অনুযায়ী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন ৪৯.৬ শতাংশ নারী। যৌন নির্যাতনের শিকার হন ২৭.২ শিশু নারী। এছাড়া ও মানসিক, অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমূলক নানা নির্যাতন তো আছেই। সব মিলিয়ে সরকারি পরিসংখ্যানে সর্বশেষ ২০১৫ সালের বিবিএস বলছে, স্বামীর হাতে কোন না কোন ধরনের সহিংসতার শিকার হন বর্তমানে বিবাহিতদের ৮০ শতাংশের বেশী নারী। ঠিক কি কি কারণে বর্তমানে স্বামীরা স্ত্রীদের গায়ে হাত তুলে, এর উত্তর জানার জন্য গ্রাম এবং শহরে সমাজে বসবাস করা ১৫ থেকে ৪৯ বছরের বিবাহিত নারীদের উপর তারা একটি জরিপ চালায়, তা থেকে উঠে আসে।
১, স্বামীকে না বলে বাহিরে গেলে, ২, বাচ্চার যত্নে কোন গাফিলতি দেখলে , ৩, স্বামীর সঙ্গে উচ্চস্বরে তর্ক করলে
৪, মোবাইল ফোনে কথা বেশী বললে, ৫, খাবার পুড়িয়ে ফেললে, ৬, সংসারে অন্য নারীদের প্ররোচনায় ,৭, অনাঙ্ক্ষিত সন্দেহের বশবতী হয়ে , ৮, যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে বাপেরবাড়ি থেকে টাকা এনে দেওয়ার জন্য। অনেক সময় আরও তুচ্ছ কারণে ও নারীর গায়ের উপর হাত তুলে। এবং আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে প্রায়ই ২৫.৪ শতাংশ নারী এইসব কারণে স্বামীর প্রহার করা কে যৌক্তিক মনে করেন। অনেকেই আবার ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে স্বামীর দ্বারা স্ত্রীকে প্রহার করা টা জায়েজ মনে করেন।
বাংলাদেশ একটা গণতান্ত্রিক স্বাধীন রাষ্ট্র। যেখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পিকার আরও বড়ো পদে নারীরা দাপটের সাথে এগিয়ে যাচ্ছে সেখানে স্বামীর দ্বারা নির্যাতিত নারীর সংখ্যায় ৮০ শতাংশের বেশী তা সত্যি একটা রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ সামাজিক অসুস্থতা। রাষ্ট্র যদি সঠিকভাবে নারী নির্যাতনের আইন গুলো যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করে দোষীকে অল্পদিনের মধ্যে বিচার প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে শাস্তি দিতো তাহলে প্রতিটি গৃহেই নারী সহিংসতা অনেকটাই রোধ করা যেতো।এমন নারী আছে, তারা নির্যাতনের শিকার হয়েও শুধুমাত্র স্বামীর সম্মানের চিন্তা করে প্রকাশ করতে চান না, সেটা ও নারীদের জন্য দুর্বলতা। রাষ্ট্রের উচিৎ নারীদের সচেতন করা এবং নারীর উপর সহিংসতা রোধ করার দৃঢ় পদক্ষেপ নেয়া।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন, সুস্থ সবল সতেজ থাকুন
পরবর্তী নিবন্ধমার্চ ও বঙ্গবন্ধু