রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন

| সোমবার , ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দুদকের সাবেক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুই হচ্ছেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি। গতকাল রোববার সকালে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নিজের সই করা মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনী কর্তা কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া জানান, তাদের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাষ্ট্রপতি পদে মো. সাহাবুদ্দিনের নাম প্রস্তাব করেন। আর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ তা সমর্থন করেন। খবর বিডিনিউজের।

মনোনয়নপত্র জমার আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাংবাদিকদের সামনে আসেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ২২তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে মনোনয়ন প্রদান করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সংসদীয় দলের নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এই মনোনয়ন চূড়ান্ত করেছেন।

সাংবাদিকদের একের পর এক অনুরোধের মধ্যে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু শুধু বলেন, সবই আল্লাহর ইচ্ছা।

এক নজরে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু : রাষ্ট্রপতি পদের প্রার্থীর সংক্ষিপ্ত জীবন বৃত্তান্ত তুলে ধরে ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৪৯ সালে পাবনায় জন্মগ্রহণ করা মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ২০০৬ সালে তিনি জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসরে যান। ছাত্রজীবনে পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। পরে সামলেছেন পাবনা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর তার দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকে গ্রেপ্তার করে সে সময় ক্ষমতাদখলকারীরা। সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকেও তখন কারাবরণ করতে হয়। পেশায় আইনজীবী সাহাবুদ্দিন চুপ্পু ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডারে যোগ দেন। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০০১ সালে বিএনপিজামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পরপরই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর হামলা হয়, যাতে হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে ওসব ঘটনার তদন্তে ‘কমিশন’ গঠন করে, যার প্রধান ছিলেন সাহাবুদ্দিন চুপ্পু। জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক এই মহাসচিব বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত করা সমন্বয়কারী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ সাল দুদকের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির চেয়ারম্যান পদে তাকে মনোনীত করা হয়। দলের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে সাহাবুদ্দিন চুপ্পু এক ছেলের বাবা। তার স্ত্রী অধ্যাপক রেবেকা সুলতানা এক সময় যুগ্ম সচিব ছিলেন। সাহাবুদ্দিন চুপ্পু রাজনীতি, বঙ্গবন্ধু এবং নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত কলামও লিখতেন বিডিনিউজে।

বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৩ এপ্রিল। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি কে হচ্ছেন, তা নিয়ে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে নানা জল্পনা কল্পনা চলছিল।

এক নামে দুটি মনোনয়নপত্র : নির্বাচন কমিশন সচিব জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হয়েছে একই ব্যক্তির নামে। দুটি মনোনয়পত্রেরই প্রস্তাবক ও সমর্থক একই ব্যক্তি, একই নামে। যার নামে দাখিল হয়েছে তিনি মো. সাহাবুদ্দিন। পিতা মরহুম শরফুদ্দিন আনসারী। বাসা হোল্ডিং ৮৮/, গ্রাম রাস্তা শিবরামপুর পাবনা। পোস্ট কোড ৬৬০০ পাবনা। এ দুটি আবেদন আগামীকাল (সোমবার) দুপুর ১টায় বাছাই করা হবে। বাছাইয়ে মনোনয়নপত্র বৈধ হলে আগামীকাল প্রধান নির্বাচনী কর্তা আপনাদের অবহিত করবেন।

একক প্রার্থী হলে তার প্রক্রিয়া কী হবে জানতে চাইলে সচিব বলেন, আগামীকাল বাছাইয়ের পরে বৈধ মনোনয়ন যেটা হবে তার নাম ঘোষণা করা হবে। আইনানুগভাবে প্রত্যাহারের শেষ তারিখে আমরা চূড়ান্তভাবে ঘোষণা করব কে বাংলাদেশের পরবর্তী মহামান্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তবে যেহেতু একই ব্যক্তি দুটো আবেদন করেছেন এবং দুটিই যদি বাছাইয়ে টেকে, তাহলে কালকেই এটা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ আছে। ১৩ ফেব্রুয়ারি যাচাই বাছাইয়ের পর ১৪ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

বাংলাদেশে সংসদীয় গণতন্ত্রে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন সংসদে পরোক্ষ ভোটে। সংসদ সদস্যরাই এই নির্বাচনে ভোট দেন। ৩৫০ আসনের সংসদে আওয়ামী লীগের সদস্য এখন ৩০৫। অর্থাৎ, প্রার্থী একাধিক হলেও ভোটাভুটি হবে কেবল আনুষ্ঠানিকতা। টানা দুইবারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনই বঙ্গভবনে যাবেন।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে রাজপথে নামা সাহাবুদ্দিন যাচ্ছেন বঙ্গভবনে : বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফা নিয়ে ১৯৬৬ সালে যখন আলোচনা তুঙ্গে, পাবনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সে সময়ই প্রথম দেখা; আলাপের শেষে সদ্য এসএসসি পাস তরুণ সাহাবুদ্দিনকে ‘তুই’ সম্বোধন করে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘মাঠে আয়’, সেই থেকে শুরু।

পরের ছয় দশকে ছাত্ররাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, আইন পেশা, বিচারকের দায়িত্ব, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলানোর বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের পর বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি পদে আসীন হচ্ছেন মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনেক ছাত্রকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা হয়
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে স্টাডি ইন ইন্ডিয়া এক্সপো ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি