রাশেদাসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড তিনজনের যাবজ্জীবন

আইনজীবী বাপ্পি হত্যা মামলা

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৭ জুলাই, ২০২৩ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

নগরীর চকবাজারের বড়মিয়া মসজিদ এলাকার একটি বাসায় আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পি খুনের মামলার রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। রায়ে প্রধান আসামি রাশেদা বেগমসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরজন হলেন, হুমায়ুন রশিদ। অপরাপর আসামিদের মধ্যে তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, আল আমিন, আকবর হোসেন রুবেল ও মো. পারভেজ আলী। এ তিনজনকে কারাদণ্ডের পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা ও অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। রায়ে জাকির হোসেন নামের আসামিকে খালাস দেয়া হয়েছে। গতকাল চট্টগ্রামের তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জসিম উদ্দিন এই রায় ঘোষণা করেন। এসময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হুমায়ুন রশিদ, মো. পারভেজ আলী ও জাকির হোসেন কাঠগড়ায় হাজির ছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপরজন রাশেদা বেগমসহ বাকী তিনজন জামিনে গিয়ে পলাতক আছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কেশব নাথ আজাদীকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় প্রধান আসামি রাশেদা বেগমসহ দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় জাকির হোসেন নামের আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে। পুরো বিচার প্রক্রিয়ায় ২৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে বলেও জানান কেশব নাথ।

আদালতসূত্র জানায়, ২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর চকবাজারের বড় মিয়া মসজিদের পাশের নুর বেগম লেনের এন ইউ ভবনের নিচতলার একটি বাসা থেকে আইনজীবী ওমর ফারুক বাপ্পির লাশ উদ্ধার করা হয়। ভোর ৬ টায় দরজা খোলা দেখে ভেতরে ঢুকলে বাড়ির কেয়ারটেকার ইলিয়াছ প্রথম এ ঘটনা দেখেন। পরে তিনি বাড়ির মালিক ও পুলিশকে খবর দেন। ওই সময় লাশের মুখ ও দুই হাত স্কচটেপ দিয়ে মোড়ানো এবং দুই পা লাল পিতা দিয়ে বাঁধা ছিল। বান্দরবান জেলার আলী কদম থানার আলী কদম ইউনিয়নের আলী আহম্মদের ছেলে ওমর ফারুক বাপ্পি চট্টগ্রাম আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ছেলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আলী আহম্মদ অজ্ঞাত লোকজনকে আসামি করে চকবাজার থানায় হত্যা মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, আগের দিন ২৪ নভেম্বর রাত আনুমানিক সাড়ে আটটায় বাপ্পিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মামলার এজাহারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাশেদা বেগমকে সন্দেহও করা হয়। ঘটনার দুইতিন দিন আগে রাশেদা বাসাটি ভাড়া নেন। আদালতসূত্র আরো জানায়, বাপ্পি খুনের মামলায় ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল ছয়জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা। বর্তমানে তিনি খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন।

আদালতে দাখিল করা চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, মাদক কারবারী রাশেদা বেগমের স্বামীর মামলা পরিচালনায় ছিলেন ভিকটিম আইনজীবী বাপ্পি। এরই ধারাবাহিকতায় রাশেদা ও বাপ্পির মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং বিয়ে করে দাম্পত্য জীবন শুরু করেন। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে কলহ দেখা দিলে পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ ও কোতোয়ালী থানায় মামলাও করেন। চার্জশিটে বলা হয়, বাপ্পি দেনমোহর বাবদ রাশেদাকে দেড় লাখ টাকা পরিশোধও করেন। এরপরও তাদের মধ্যে কলহ অবসান হয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগিদের নিয়ে রাশেদা বেগম আইনজীবী বাপ্পিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। আদালতসূত্র জানায়, বাপ্পি খুনের পর অভিযান চালিয়ে রাশেদাসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের মধ্যে রাশেদাসহ চারজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে রাশেদা বলেন, খুন করার উদ্দেশ্য ছিল। কাবিন বাড়িয়ে নেয়াই ছিল তাদের উদ্দেশ্য। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি বন্ধু হুমায়ুনের মাধ্যমে চারজনকে ভাড়া করা হয়। আদালতসূত্র জানায়, পিবিআইয়ের চার্জশিট দাখিলের পর ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর রাশেদা বেগমসহ ছয় আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন বিচারক।

সহকর্মীদের সন্তুষ্টি প্রকাশ : আইনজীবী বাপ্পি খুনের মামলার রায়ে দুজনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার ঘটনায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে তার সহকর্মীরা। সহকর্মী আইনজীবীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে পোস্ট করেছেন। দণ্ড যাতে দ্রুত বাস্তবায়ন করা হয় সে জন্য তারা সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধডেঙ্গু সচেতনতা ও করণীয়
পরবর্তী নিবন্ধদুই দলের সমাবেশই এক দিন পেছাল